ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের রজতজয়ন্তী পালন
ঢাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। রবিবার (১ ডিসেম্বর) ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী হিসেবে রজতজয়ন্তী পালন করেছে বিভাগটি।
এ উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডাক্তার সায়মা হক বিদিশা বলেন, “আমি অর্থনীতির ছাত্রী ছিলাম। আমাদের ইকুয়েশন, ক্যালকুলেশন নিয়ে পড়তে হতো। কিন্তু দিনশেষে ইকুয়েশন, ক্যালকুলেশনের চেয়ে বড় করে দেখা হয় আলোকিত মানুষ হওয়া। এ আলোকিত মানুষ হওয়ার জন্যই কাজ করে বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগ। আশা করি, এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা আলোকিত মানুষ হয়ে দেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করবে।”
কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, “আমি একজন বলা অনুষদের ডিন হিসেবে গর্বের সঙ্গে বলছি, বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগ কলা অনুষদভুক্ত বিভাগগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রাণবন্ত একটি বিভাগ। আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেই শিক্ষকদের পাঠ-পঠনের সঙ্গে গবেষণার। কলা অনুষদভুক্ত এ বিভাগটি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গবেষণার দিক দিয়ে বিবেচনা করলে আমরা দেখতে পাই, ২৫ বছরের একটি নবীন বিভাগ হলেও এটি আমাদের প্রত্যাশার অনেকটাই পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে।”
বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন দর্শন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী নুরুল ইসলাম। বিভাগটির প্রতিষ্ঠার ইতিহাস বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “আমার বাবা ১০ দিন বয়সে তার মাকে হারান। তিনি একদিন আমাকে বলেছিলেন, ‘আমি মুসলিম মায়ের গর্ভে জন্মেছি, কিন্তু হিন্দু মায়ের কাছ থেকে মাতৃস্নেহ পেয়েছি। কাজেই আমি হিন্দু ও মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের কাছে ঋণী। তুমি এই ঋণ শোধ করো।’ আমি বললাম কীভাবে? তিনি বললেন, ‘তুমি আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির জন্য কাজ কর।’ সেদিনই আমি ওয়াদা করেছিলাম আমার জীবনটাকে আমি আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির পথে পরিচালিত করব। তারপর সেই ১৯৬১ সাল থেকেই আমার আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির পথে আমার যাত্রা শুরু। এরপর আমি বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে পড়াশোনা শুরু করি।”
তিনি বলেন, ১৯৮১ সালে আমি দর্শন বিভাগ থেকে ধর্মতত্ত্বের উপর ঢাবিতে একটি বিভাগ খোলার প্রস্তাব দেই, যা ১৯৮৩ সালে অনুষদে পাশ হয়। কিন্ত দুর্ভাগ্যবশত একাডেমিক কাউন্সিলে তা পাশ হয়নি। কারণ হিসেবে তৎকালীন উপাচার্য আমাকে বিভাগভিত্তিক বই ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাবের কথা তুলে ধরেন।”
তার অনেক সংগ্রাম ও প্রচেষ্টার ফলে বিভাগটি ১৯৯৬ সালে একাডেমিক কাউন্সিলে অনুমোদন পায় এবং ১৯৯৯ সালের ১ ডিসেম্বর বিভাগটির একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয় বলে জানান অধ্যাপক ড. কাজী নুরুল ইসলাম।
সভাপতির বক্তব্যে বিভাগটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবু সায়েম বলেন, পৃথিবীর ধর্মগুলোকে বলা হয় ট্রেজার্স অব উইজডম (জ্ঞানের ভাণ্ডার)। সেগুলোকে অবজ্ঞা করে আমরা সভ্য মানুষ হওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে পারব না। আজকের সর্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থায় সেটিকে অবজ্ঞা করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময় যে স্লোগানে সবাই একত্রিত হয়েছিল, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে সেটার বাস্তবায়ন হয়নি। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে আবারও সেই অশান্তি, অমিল। (বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে) মিল কীভাবে করা যায়, সেই জন্যই স্যার (কাজী নুরুল ইসলাম) এ বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেছেন। সোনার বাংলা গড়ার জন্য সোনার মানুষ গড়তে হবে। এই সোনার মানুষ গড়ার জন্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।”
বিভাগের প্রভাষক ইনজামাম মাহবুব মজুমদারের সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন বিভাগের অধ্যাপক ড. ইলিয়াস হোসেন ও সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী