ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

চাঁদপুরে ৬১ হাজার ২৮৫ হেক্টর বোরো আবাদ, কৃষকের উল্লাস

অমরেশ দত্ত জয় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ৮ মে ২০২১  
চাঁদপুরে ৬১ হাজার ২৮৫ হেক্টর বোরো আবাদ, কৃষকের উল্লাস

চাঁদপুরে চলছে ধান কাটা, মারাই ও ঝাড়াইয়ের কাজ। নদী তীরবর্তী এ জেলায় আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার বোরো উৎপাদন ভালো হয়েছে। যেজন্য কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি।

চাঁদপুর সদরের বালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও কৃষক মো. তাজুল ইসলাম জানান, আমি এবার ২ একর জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছি। প্রায় ২০০ মণ ধান হবে বলে আশা করছি। ফলন ভালো হওয়ায় আমি খুব খুশি। ধান কেটে ইতিমধ্যেই মারাই ঝাড়াইয়ের কাজ শুরু করছি। এবছর বোরো চাষ করে আমি সফল।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর জেলায় এবছর বোরো জমির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬১ হাজার ২০০ হেক্টর। এর মধ্যে বোরো আবাদ হয়েছে ৬১ হাজার ২৮৫ হেক্টর। আর উৎপাদন লক্ষমাত্রা ছিল ২ লক্ষ ৫২ হাজার ৮৪২ মেট্রিক টন। যার প্রেক্ষিতে বলা চলে বোরোর বাম্পার ফলন না হলেও যতটুকু হয়েছে তা ভালোই হয়েছে।

এদিকে জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে আরো জানা যায়, চাঁদপুর জেলাতে মোট বোরো চাষী রয়েছেন ২ লক্ষ ৪৯ হাজার ৬৫০ জন চাষী। এরমধ্যে কৃষি অফিস থেকে প্রণোদনার আওতায় বিনামূল্যে ২০ হাজার কৃষককে ১ কেজি করে হাইব্রীড বোরো ধানের বীজ দেওয়া হয়েছে। এই সহায়তায় আরও ২ হাজার কৃষক হাইব্রীড বোরো ধানের বীজের পাশাপাশি প্রত্যেককে ২০ কেজি করে ডিওপি এবং ১০ কেজি করে এমওপি সার দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও এর পাশাপাশি ৫০ একরের জমিতে সমলেও চাষাবাদ করতে কচুয়ায় ১২০ জনকে বীজ এবং সার দেওয়া হয়েছে।

এক তথ্যে জানা যায়, জেলায় বোরো ধান কাটার জন্য কোনরূপ কৃষক সংকট নেই। তবুও রংপুর থেকে ৫০ জন ধান কাটা চাষী হাজীগঞ্জে এসে ধান কেটেছেন। তার ওপর ২০২০-২১ অর্থবছরে চাঁদপুর মতলব উত্তরে নতুন ৩টি যোগ হওয়ায় সর্বমোট ২৪টি কম্বাইন্ড হারবেস্টার মেশিন দিয়ে জেলায় দ্রুত সময়ে ধান কাটা, মারাই ও ঝাড়াইয়ের কাজ সম্পন্ন করে নিচ্ছেন কৃষক।

কম্বাইন্ড হারবেস্টারগুলোর মধ্যে চাঁদপুর সদরে ২টি, মতলব উত্তরে ৪টি, মতলব দক্ষিণে ১টি, হাজীগঞ্জে ২টি, শাহরাস্তিতে ৩টি, কচুয়ায় ৬টি, ফরিদগঞ্জে ৫টি এবং হাইমচরে ১টি কম্বাইন্ড হারবেস্টার রয়েছে। এক একটি হারবেস্টার মেশিন ঘণ্টায় এক একর জমির ধান কাটে। এতে কৃষকের সময় বাঁচে এবং খরচও তুলনামূলক কম হয়।

এছাড়াও ধান কাটার ক্ষেত্রে জেলায় ৩৩টি রিপারও ব্যবহৃত হচ্ছে। এরমধ্যে চাঁদপুর সদরে ৬টি, মতলব উত্তরে ২টি, মতলব দক্ষিণে ১ টি, শাহরাস্তিতে ৪টি, হাজীগঞ্জে ৭ টি, কচুয়ায় ৪টি এবং ফরিদগঞ্জে ৯টিসহ মোট ৩৩টি রিপারে ধান কাটার কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে।

শুক্রবার (৭ মে) এসব তথ্য নিশ্চিত করেন জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কর্মকর্তা নরেশ চন্দ্র দাস। তিনি জানান, চাঁদপুর সমতল অঞ্চল হওয়ায় ৫০% ভর্তুকি মূল্যে এই কম্বাইন্ড হারভেস্টার বিতরণ করা হয়েছে। যার সুফল পাচ্ছে কৃষক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষি বান্ধব সরকার হওয়াতেই কৃষির এতো উন্নয়ন। আমরা সময় মতো কৃষকের হাতে সার-বীজ তুলে দিতে পেরেছি। তার সাথে সঠিকভাবে তথ্য সহযোগিতা করেছি বলেই বোরোর ফলন এবছর ভালো হয়েছে।’

চাঁদপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা নিত্যানন্দ কুণ্ডু বলেন, এবার চাঁদপুরে ধান ক্রয়ের লক্ষমাত্রা ৮ হাজার মেট্রিক টন। সরকার ২৭ টাকা কেজি প্রতি অর্থাৎ প্রতি মণ ধান ১ হাজার ৮০ টাকা নির্ধারণ করেছে। ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর সদর, কচুয়া ও শাহরাস্তিতে অ্যাপস এর মাধ্যমে কৃষকরা ধান বিক্রির জন্য আবেদন করবে। সেখান থেকে লটারিতে বিজয়ীরা সরাসরি ধান বিক্রির আওতায় আসবে। ফরিদগঞ্জে ইতিমধ্যে ধান ক্রয় শুরু হয়েছে। এছাড়া হাইমচর, শাহরাস্তি, মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণে কৃষি অফিসারদের প্রেরণকৃত নামের তালিকাকৃত কৃষকরা সরাসরি ধান বিক্রি করতে পারবেন। তবে তালিকা চূড়ান্ত না হওয়ায় এখন পর্যন্ত জেলায় মোট কতো কৃষক এই ধান ক্রয়ের আওতায় এসেছে তা তিনি জানাতে পারেননি।

ঢাকা/আমিনুল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়