ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

গণপিটুনিতে হত্যা: পদ্মা সেতু উদ্বোধনে খুশি রেণুর মা

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৭, ২৫ জুন ২০২২  
গণপিটুনিতে হত্যা: পদ্মা সেতু উদ্বোধনে খুশি রেণুর মা

নিহত তাসলিমা আক্তার রেণু

নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ ‘স্বপ্নের পদ্মা সেতু’ আজ শনিবার (২৫ জুলাই) উদ্বোধন করা হয়েছে। এই সেতু নির্মাণের শুরু থেকে চলে আসছে নানা ষড়যন্ত্র। নির্মাণ বাধাগ্রস্ত করতে গুজন ছড়ানো হয়। 

২০১৯ সালের ২০ জুলাই ষড়যন্ত্রকারীদের পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা লাগবে বলে ছেলেধরা গুজবে রাজধানীর বাড্ডায় গণপিটুনির শিকার হয়ে মারা যান তাসলিমা বেগম রেণু। তার গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নে। পদ্মা সেতু নিয়ে গুজবের বলি রেনুর পরিবার এখনও বিচার পায়নি। তবুও পদ্মা সেতু উদ্বোধনে গর্বিত রেনুর পরিবার।

কনিষ্ঠ মেয়ের নির্মম মৃত্যুতে আজও কাঁদছেন বৃদ্ধা ছবুরা খাতুন (৭৫)। মাকে খুঁজে ফিরছে দুই কোমলমতি সন্তান তাহসিন আল মাহির (১৩) ও তাসমিম মাহিরা তুবা (৭)। মায়ের মৃত্যুর পর থেকে তুবা তার মায়ের বড় বোনের (খালা) সঙ্গে থাকে এবং তাকেই মা বলে ডাকে। এখন পড়ালেখা করছে প্রথম শ্রেণিতে। অপরদিকে মাহিরকে ভর্তি করা হয়েছে মাইল স্টোন স্কুলে। সেখানে হোস্টেলে রেখে চলছে তার পড়াশোনা। নিহত তাসলিমা আক্তার রেনু ইডেন কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেন। 

বিয়ের পর তিনি ব্র্যাক ও আড়ংয়ে চাকরি করতেন। ছেলে মাহিরের বয়স যখন দেড় বছর, তখন তিনি চাকরি ছেড়ে দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সালে ছেলেধরা গুজবে সারা দেশে ২১টি গণপিটুনির ঘটনায় ৫ জনের মৃত্যু হয়। ২০ জুলাই রাজধানীর উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তুবাকে ভর্তির বিষয়ে তথ্য জানতে যান তাছলিমা আক্তার রেণু। সেখানে উপস্থিত কয়েকজন নারী তাকে ছেলেধরা সন্দেহ করে এই গুজব বাহিরে ছড়িয়ে দেন। মুহূর্তে বিভিন্ন বয়সী কয়েকশত নারী-পুরুষ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়েন। তাদের রোষানল থেকে রক্ষা করতে রেণুকে দোতলায় প্রধান শিক্ষকের কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। উচ্ছৃঙ্খল লোকজন সেখানকার লোহার গেট ভেঙে রেণুকে টেনে-হিঁচড়ে নিচে নামিয়ে এনে এলোপাতাড়ি লাথি, কিল, ঘুষি ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন।

ওই ঘটনায় নিহতের ভাগনে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৫০০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক আব্দুল হক ১৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দুইজনের বিরুদ্ধে দোষীপত্র দাখিল করেন। ঢাকার ৬ষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ফাতিমা ইমরোজ ক্ষণিকার আদালতে মামলার বিচার কাজ চলছে। মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।

রেণুর বৃদ্ধা মা ছবুরা খাতুন বলেন, ‘আমার ৫ মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ রেণু ছিল। রেণু ছিল আমার অতি আদরের। আমার নাড়ি ছেড়া ধনকে হারিয়ে আজ আমি নিস্ব। পদ্মা সেতু চালু হচ্ছে জেনে খুব খুশি হয়েছি। তবে আমার মেয়ের বিচার দেখে যেতে পারব কি-না, জানি না। তবে আমার জীবদ্দশায় মেয়ের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেখে যেতে চাই।’ 

মামলার বাদী ও নিহত তাসলিমা আক্তার রেণুর ভাগনে সৈয়দ নাসির উদ্দিন টিটু বলেন, ‘গুজব আমার খালার প্রাণ কেড়ে নিলেও ষড়যন্ত্রকারীরা পদ্মা সেতুর নির্মাণ থামিয়ে রাখতে পারেনি। যে পদ্মা সেতুর জন্য আমার খালাকে জীবন দিতে হয়েছে, আজ সেই সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে। কাঙ্ক্ষিত সেতুর উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে গুজব রটনাকারী ও আমার খালার হত্যাকারীদের ফাঁসি দেখতে পারলে আমরা আরও খুশি হতাম। শান্ত্বনা দিতে পারতাম তার অবুঝ দুই শিশু সন্তানকে।’

তিনি বলেন, ‘স্বপ্নের পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে গেলে খালার বিচার না পাওয়ার বিষয়টি আমাদের আরও কষ্ট দেবে। আমরা চাই, দ্রুত মামলার বিচার কার্যক্রম শেষ করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।’ 

লিটন/বকুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়