ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

গোপালগঞ্জে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ইটভাটা

বাদল সাহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৪৬, ২০ নভেম্বর ২০২০  
গোপালগঞ্জে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে ইটভাটা

গোপালগঞ্জে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে ইটভাটা। জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকলেও এসব ইটভাটার অধিকাংশই গড়ে উঠেছে ফসলি জমি ও জনবসতিপূর্ণ এলাকায়। জ্বালানী হিসেবে ব‌্যাবহৃত হচ্ছে কাঠ। এতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশের ওপর। উর্বরতা হারাচ্ছে ফসলি জমি। এছাড়া, বায়ু দূষণের কারণে বাড়ছে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ।

গোপালগঞ্জে প্রায় দেড় শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে অবৈধ ভাটার সংখ্যা প্রায় ১০০টি। এক পুখুরিয়া গ্রামেই রয়েছে ৫৫টি ইটভাটা। এসব ইটভাটার মধ্যে তিনটি বাদে ৫২টির কোনো পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের ছাড়পত্র নেই। এক কিলোমিটারের মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে দুই থেকে তিনটি করে ইটভাটা। 

এসবিআই ব্রিকস, সুপার ব্রিকস, পদ্মা ব্রিকস, স্টার ব্রিকস, রাজ ব্রিকস, সোহাগ ব্রিকস, লালপরি ব্রিকস, খান ব্রিকস, গাজি ব্রিকস, বিএইসআর ব্রিকস, জাহেদা ব্রিকস, সিটি ব্রিকস-১, সিটি ব্রিকস-২, হাশেম ব্রিকস, জেড ব্রিকস, মুন্সি ব্রিকস, শেখ ব্রিকস, শেয়ার ব্রিকস, কাজি ব্রিকসসহ প্রায় অর্ধশত ইটভাটার ইট পোড়ানোর কোনো সরকারি ছাড়পত্র নেই।

অবৈধভাবে গড়ে ওই এসব ইটভাটায় জ্বালানী হিসেবে কয়লার পরিবর্তে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ। এতে উজাড় হচ্ছে বনভূমি। কোনো ইটভাটায় চিমনীর উচ্চতা ঠিক না থাকায় বায়ু দূষণের কারণে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানাগেছে, গোপালগঞ্জ জেলার পাঁচ উপজেলায় রয়েছে ৪০টি ইটভাটা। কিন্তু বাস্তবে এর সংখ্যা প্রায় তিনগুণ। এ ৪০টি ইটভাটার অনুমোদন থাকলেও বাকি একশটিরও বেশি ইটভাটার কোনো অনুমোদন বা ছাড়পত্রই নেই। 

এদিকে গত এক বছরের বেশ কয়েকটি ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করেছে জেলা প্রশাসন। এসময় ওসব ইটভাটা ধ্বংস করার পাশাপশি মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

পুকুরিয়া গ্রামের ওসমাল আলী, ইসমাইল শেখ, মনিরুল ইসলাম, সাগর হোসেন বলেন, ‘আমাদের গ্রামে যত্রতত্রভাবে ইচ্ছামতো গোড়ে তোলা হয়েছে ইটভাটা। এসব ইটভাটার কোন অনুমোদন বা ছাড়পত্র নেই। এসব ইটভাটার বেশিরবাগ ইটভাটায় চিমনি নেই। ড্রাম চিমনি দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে। এতে বায়ু দূষণ হচ্ছে। শিশু থেকে বড় সবার শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিচ্ছে। ফসলী জমি থেকে ইটভাটার মাটি সংগ্রহ করার কারণে জমি উর্বরতা হারাচ্ছে।

পুকুরিয়া স্টার ব্রিকসের মালিক মোজাহিদ মোল্যা ও মুকসুদপুরে মাছুম ব্রিকস-এর মালিক আব্দুর রহমান বলেন, ‘সবাই ইটভাটা চালাচ্ছে তাই আমরাও ইটভাটা চালাচ্ছি। আমরা জেলা প্রশাসকের এলআর ফান্ডে পঞ্চাশ হাজার টাকা জমা দিয়ে ভাটা তৈরি করে ইট পোড়ানোর কাজ শুরু করেছি। আমরা কাঠ দিয়ে নয়, কয়লা দিয়ে ইট পোড়াই।’

গোপালগঞ্জ সুজনের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ অধিকারী বলেন, ‘গোপালগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে ইচ্ছেমতো ইটভাটা গড়ে তুলছে। কোনো আইন মানা হচ্ছে না। এসব ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এ কারণে ইটভাটার কাছে বসবাসকারীদের নানা রোগ হচ্ছে। দ্রুত এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা উচিত।’

গোপালগঞ্জ ২৫০-শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে সহকারী পরিচালক ডা. অসিত কুমার মল্লিক বলেন, ‘ইটভাটার ধোঁয়ায় মারাত্মক টক্সিনসহ বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক থাকে। এতে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানিসহ নানা জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া ভাটার তাপে মানুষের ত্বকে এলার্জিসহ বিভিন্ন জটিল রোগ দেখা দেয়।’

জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান রহমান বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ইটভাটার অনুমোদন বা ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে কোনো ইটভাটা আইন না মানলে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় অভিযান চালানো হয়। এসময় আইন অমান্য করলে জরিমানাসহ ইটভাটা ভেঙে দেওয়া হয়।’

গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, ‘আনুমোদন ছাড়া কোনোভাবেই ইটভাটা পরিচালনা করার সুযোগ নেই। অনুমোদন নিয়েই ইটভাটা করতে হবে। এছাড়া কোনো ইটভাটা আইন না মানলে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় ওই হাটভাটা ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি ইটভাটার মালিককে জরিমানা করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা বেশ কয়েকটি ইটভাটার মালিককে নোটিশ পাঠিয়ে ভাটায় আগুন না দেওয়ার জন্য বলেছি। ইটভাটার কাগজপত্র ঠিক না থাকলে ওইসব ইটভাটার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

গোপালগঞ্জ/সনি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়