ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘরে আনন্দের ঈদ উদযাপন

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৪, ২৭ জুলাই ২০২১  
প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘরে আনন্দের ঈদ উদযাপন

এবারের কোরবানির ঈদ প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাওয়া নিজের বাড়িতে করতে পেরে তিনি খুবই আনন্দিত শোভা বেগম (৬৩)।

বসবাস করার মতো জমি ও ঘর না থাকায় দিন মজুর স্বামীকে নিয়ে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার পাথালিয়া নদীর পাড়ে বসবাস করতেন। চার ছেলে ও দুই মেয়ে থাকলেও বিয়ের পর তারা পৃথক হয়েছে। সন্তানেরা অস্বচ্ছল থাকায় পিতা মাতাকেও সহযোগিতা করতে পারেন না। শোভা বেগমের আয় রোজগারও তেমন ছিলো না। আত্মীয় স্বজনদের সহযোগিতায় কোন রকম সংসার চলতো তার। চলতি বছর টাঙ্গাইলের সদর উপজেলার দাইন্যা ইউনিয়নের চিলাবাড়ী মৌজায় তাকে প্রধানমন্ত্রীর ঘর উপহার দেওয়া হয়েছে।

শোভা বেগম বলেন, বিয়ের পর থেকে একটি বাড়ি ও ঘরের খুব স্বপ্ন ছিলো। কিন্তু টাকার অভাবে তা করতে পারিনি। শেখের বেটি হাসিনা না থাকলে আমাদের কখনো নিজেদের বাড়ি ঘর হতো না। প্রধানমন্ত্রীর ঘরে এবার খুব আনন্দে ঈদ করেছি। তবে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড পেলে আমার অনেক উপকার হতো।

শুধু শোভা বেগম নয়। তার মতো জেলার ২ হাজার ৩০৪ জন ভূমিহীন প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার জমিসহ ঘরে ঈদ করতে পেরে আনন্দিত।

জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্র জানায়, আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর আওতায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার ১ম পর্যায়ে টাঙ্গাইলে ১ হাজার ১৭৪টি ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ১ হাজার ১৩০টি ঘর ভূমিহীনদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনির সার্বক্ষনিক তদারকির কারণে জেলায় এই ঘরগুলো সঠিকভাবে নির্মিত হয়। কোন কোন এলাকায় স্থানীয়ভাবে তহবিলের যোগান দেওয়া হয়।

সরেজমিন বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরে ঈদের আনন্দে মেতে উঠেছেন উপকারভোগীরা। একে অন্যের ঘরে সময় কাটাচ্ছেন। হাসি খুশিতে সময় পার করছেন তারা।

৭৫ বছর বয়সী মীর আব্দুল খালেক বলেন, আমার তিন সন্তানই মাদকাসক্ত। সন্তানরা তাদের মতো পৃথক রয়েছে। আমাদের কোন খোঁজ খবরই নেয় না। শ্রমিকের কাজ করি। মাঝে মাঝে আবার কাজও বন্ধ থাকে। সব মিলিয়ে সদর উপজেলার মীরের বেতকা গ্রামের অন্যের জমিতে খুবই কষ্টে বসবাস করতাম। প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেয়ে ঈদটা আমাদের অনেক আনন্দে কেটেছে। জীবনেও ভাবি নাই পাকা দালানে বসবাস করতে পারবো। শেখ হাসিনা সেই অসম্ভবকে আমার জীবনে সম্ভব করে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

বাসখানপুর গ্রামের রাহেলা খাতুন বলেন, বিয়ের পর থেকে অন্যের বাড়িতে বাসা ভাড়া থাকতে হয়েছে। স্বামীর আয় রোজগার ভাল না হওয়ায় বাড়ি ঘর করতে পারিনি। এ বছরের মতো অন্য কোন বছর এতো আনন্দে নিজের ঘরে ঈদ করতে পারিনি। এখন স্বজনদের কাছে বলতে পারি আমার বাড়ি ঘর আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার পেয়ে আমি গর্বিত।

জমেলা বেগম বলেন, রিকশাচালক স্বামী প্রতিদিন যা আয় করতো মাস শেষে বেশিরভাগ বাসা ভাড়ায় চলে যেতো। তিন বেলা খাবার খেলেও কখনো ভালমানের পোশাক পড়তে পারিনি। প্রধানমন্ত্রীর ঘর পাওয়ার পর আমাদের আর বাসা ভাড়া দিতে হয় না। সব মিলে খুবই আনন্দে দিন পার হচ্ছে আমাদের। তবে ঈদের আগে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের চাল ও নগদ টাকা বিভিন্ন এলাকায় দেওয়া হলেও আমরা এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে কিছুই দেওয়া হয়নি। চাল ও নগদ টাকা পেলে আমাদের অনেক উপকার হতো।

বিষোগা রাণী বলেন, এতোদিন আমাদের কোন বাড়ি ঘর ছিলো না, নিরাপত্তাও ছিলো না। হাসিনার ঘর পাওয়ার পর আমরা নিরাপদে আছি। আগে অন্যের বাড়িতে থাকলেও এখন আমার ঘরে নিরাপদে ও শান্তিতে বসবাস করছি।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি বলেন, আশ্রয়ন প্রকল্পের টাঙ্গাইল জেলায় ২ হাজার ৩০৪টি ঘর নকশা অনুযায়ি সুন্দরভাবে নির্মাণ করে হস্তান্তর করা হয়েছে। সঠিকভাবে ঘর নির্মাণে ১২টি উপজেলায় চারটি ভাগে বিভক্ত করে চারজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়। ইউএনওসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের সার্বিক সহযোগিতায় মান বজায় রেখে ঘরগুলো নির্মাণ হয়। নির্মাণের পর দুই এক জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগে বিলম্ব হলেও আমার হস্তক্ষেপে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। উপকারভোগীদের নিরাপত্তার জন্য সংশ্লিষ্ট গ্রাম পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

আবু কাওছার/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়