ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

করোনার হটস্পট মানিকগঞ্জ, তবুও বাইরে বের হচ্ছে মানুষ

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১০, ২৭ জুলাই ২০২১  
করোনার হটস্পট মানিকগঞ্জ, তবুও বাইরে বের হচ্ছে মানুষ

করোনা সংক্রমণের নতুন হটস্পট হয়ে উঠেছে মানিকগঞ্জ জেলা। জেলায় লকডাউন বাস্তবায়নে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি থাকার পরও সাধারণ মানুষ নানা অজুহাতে বাইরে চলাচল করছেন। সাধারণ মানুষকে ঘরমুখী করতে গত ২৪ ঘণ্টায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৭৮ হাজার ৭৫০ টাকা জরিমানা করেছেন। তবুও বন্ধ হচ্ছে না মানুষের অকারণে বাইরে বের হওয়া।

মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড ও শহর ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে সাধারণ মানুষ শহরের প্রবেশমুখ বাসস্ট্যান্ডে চলাচল করছেন। পুলিশি তল্লাশি চৌকিতে যানবাহন থামিয়ে বাইরে বের হওয়ার কারণ জানতে চাওয়া হচ্ছে। তবে বাইরে বের হওয়া মানুষ মানবিক কারণে পার পাচ্ছেন। শহরের খালপাড়, বেউথা, দুধবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশি নজরদারি থাকার পরও মানুষের আনাগোনা কমেনি। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গত কয়েকদিনের তুলনায় আজ মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) ঢাকামুখী যাত্রীর ভিড় বেড়েছে। এসকল যাত্রীরা প্রশাসনের চোখ ফাাঁকি দিয়ে নানা উপায়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন।

মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) সকালে সিভিল সার্জন কার্যালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৩৪ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে নতুন করে ১৭০ জন শনাক্ত হয়েছেন। পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। এছাড়াও গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন আক্রান্ত ১৭০ জনের মধ্যে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ৩১ জন, সাটুরিয়া উপজেলার ৯ জন, দৌলতপুর উপজেলার ৭ জন, ঘিওরে ১৯ জন, শিবালয়ে ২১ জন, হরিরামপুরে ২৫ জন ও সিংগাইর উপজেলার ৫৮ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩৩৪ জন। 

আক্রান্তদের মধ্যে ২ হাজার ৮৪৬ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বাকি রোগীরা বিভিন্ন হাসপাতালে ও নিজ বাড়িতে আইসোলশনে থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিচ্ছেন। জেলায় এ পর্যন্ত ৭৫ জন করোনায় মারা গেছেন। 

জেলা হাসপাতাল করোনা ইউনিট সুত্রে জানা গেছে, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের ১০০ শয্যার করোনা ইউনিটে ২০৬ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। এর মধ্যে করেনা পজিটিভ হয়ে ৭৪ জন ও আইসোলেশন ওয়ার্ডে উপসর্গ নিয়ে ১৩২ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন ওযার্ডে ৩ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। 

উকিয়ারা গ্রামের তৌফিক বলেন, ‘জরুরি কাজে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এসেছি। বিদুৎ বিল দেওয়াসহ বাজার থেকে বেশ কয়েকটি জিনিস নিতে হবে। এসব জিনিস পরে নিলে হবে না। তাই ঝুঁকি থাকার পরও বাইরে বের হয়ছি।’ 

গাজীপুরগামী আসমা আক্তার বলেন, ‘পাবনা থেকে অনেক কষ্টে কাজিরহাটে এসেছি। নৌরুট পাড়ি দিয়ে আরিচা থেকে মানিকগঞ্জ আসছি। মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে পুলিশ তাই হেঁটে যাচ্ছি। সামনে থেকে কোনো যানবাহন পেলে উঠে পড়বো। কারখানা খোলা থাকায় এত কষ্ট করে যাচ্ছি।’ 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কারণে-অকারণে নানা অজুহাতে মানুষ বাইরে বের হচ্ছে। আমরা বিভিন্ন যানবাহন ও সাধারণ মানুষকে ফেরত পাঠালেও তারা নানা পন্থায় বাইরে থাকছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে জরুরি পরিষেবার আওতাধীন যানবাহন ছাড়া কোনো যানবাহন চলতে দেওয়া হচ্ছে না। তবুও ঢাকামুখী যাত্রীরা হেঁটে নানা উপায়ে গন্তব্য ছুটছেন। সাধারণ মানুষ নিজে থেকে সচেতন না হলে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।’ 

জেলা সিভিল সার্জন আনোরুল আমিন আখন্দ বলেন, লকডাউনেও সাধারণ মানুষ বাইরে চলাচল করায় জেলায় সংক্রমণ বেড়েছে। এছাড়াও সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা অনেক কম। সবাই সচেতন না হলে সংক্রমণের হার কমানো কঠিন হয়ে যাবে।

জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, লকডাউন বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রটেরা প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন। এছাড়াও তিন প্লাটুন সেনা ও দুই প্লাটুন বিজিবির সদস্যরা কাজ করছেন।

চন্দন/বকুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়