ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘আর্থিক খাতের বিশ্বাসযোগ্যতা যেন না হারায়’

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০২, ১৯ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘আর্থিক খাতের বিশ্বাসযোগ্যতা যেন না হারায়’

‘আর্থিক খাতের বিশ্বাসযোগ্যতা যেন না হারায়, সেদিকে সবাইকে যত্নবান হতে হবে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সবাইকে সার্বিক দিক বিবেচনা করে সতর্কতার সাথে বিনিয়োগ করতে হবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে অডিটের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে প্রতিনিয়ত অভ্যন্তরীণ ও তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে অডিট করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।’

সম্প্রতি রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) অডিটোরিয়ামে ডিসিসিআই আয়োজিত ‘আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনঃসংস্কার ও ব্যবসা গুটিয়ে নেয়া এবং স্টেকহোল্ডারদের ওপর এর প্রভাব’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে  এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান।

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারে ভালো প্রতিষ্ঠানের পর্যাপ্ত শেয়ার নেই। এ কারণে আমরা অল্প কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের ওপর নির্ভরশীল। এক্ষেত্রে উৎপাদনশীল খাতে আরো বেশি বিনিয়োগ এবং ভালো প্রতিষ্ঠানের শেয়ার পুঁজিবাজারে নিয়ে আসতে হবে। বিদ্যমান নীতিমালার সংস্কার ও আধুনিকায়ন এবং নীতিমালার ধারাসমূহের অস্পষ্টতা দূরীকরণে কাজ করতে হবে।    

সেমিনারের ডিসিসিআইর সভাপতি ওসামা তাসীর বলেন, আমাদের অর্থনীতির ক্রমবিকাশের পাশাপাশি আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর সংখ্যা যেমন বেড়েছে, একই সাথে এ খাতের সংস্কার এবং আর্থিক সেবার পরিধিও বৃদ্ধি পেয়েছে। আর্থিক খাতের এ উন্নয়নের পরও বেশকিছু প্রতিষ্ঠানকে এখনো নানা সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে এবং এর জন্য প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, পর্যবেক্ষণের সীমাবদ্ধতা, ঋণ প্রদানে অনিয়ম ও ঋণ আহরণের দীর্ঘসূত্রতার বিষয়সমূহ অন্যতম।

তিনি বলেন, খেলাপি ঋণের উচ্চ হার আমাদের আর্থিক খাত ও অর্থনীতিকে প্রভাবিত করছে। আমি মনে করি, স্থায়ী আমানতের বিপরীতে মুনাফার উচ্চ হারের কারণে ঋণের সুদের হার কমানো যাচ্ছে না। এর ফলে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে গেছে ও বেশি হারে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমাদের এসএমই খাতের উদ্যোক্তাবৃন্দ। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক নীতিমালার সংস্কার এবং ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর রিস্ট্রাকচারিং অথরিটি নামে একটি কর্তৃপক্ষ গঠনের প্রস্তাব করছি।    

আইডিএলসি ফিন্যান্স লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান এবং আরএসএ কনসালটিং পার্টনার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও দি সিটি ব্যাংক লিমিটেডের প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হোসেন সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

আরিফ খান বাণিজ্যিক ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ প্রদান নিরুৎসাহিত করতে পুঁজিবাজারে বন্ড মার্কেট চালু করার প্রস্তাব করাসহ খেলাপি ঋণের প্রবণতা কমানোর জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহে করপোরেট গভর্নেন্স বাড়ানো, বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি বাড়ানো, খেলাপি ঋণে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

সোহেল আর কে হোসেন বলেন, আর্থিক খাতের বিদ্যমান সমস্যা মোকাবিলায় দুর্বল ব্যাংকসমূহের একত্রিতকরণ, বাংলাদেশ ব্যাংককে আরো স্বাধীনতা প্রদান, দুর্বল আর্থিক প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন, মূলধন অনুপাতের পর্যাপ্ততা বাড়ানো, অ‌্যাডভান্স অন ডিপোজিটের (এডি) অনুপাত না ভঙ্গ করা প্রভৃতি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। এছাড়া, খেলাপি ঋণ আদায়ে আইনি ও কাঠামোগত দুর্বলতা দূর করতে হবে, যা সব লিকুইডেশনের জন্যও প্রয়োজনীয়।  

আলোচনায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেডের পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন, বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ড. মো. কবির আহমেদ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের পরিচালক মো. আবুল কালাম অংশ নেন।

এ সময় বক্তারা সুশৃঙ্খল আর্থিক খাতের জন্য যথাযথ পর্যবেক্ষণ নীতিমালা সংস্কার, নিয়মিত অডিট, ভালো ভালো ঋণগ্রহিতা বাছাই করে ঋণ প্রদান করা ইত্যাদি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।


ঢাকা/নাসির/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়