ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

কারাবন্দীদের তৈরি পণ্য বাণিজ্য মেলায়

খালেদ সাইফুল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৩, ১৫ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কারাবন্দীদের তৈরি পণ্য বাণিজ্য মেলায়

কারাগারকে এখন আর শাস্তি প্রদানের জায়গা বিবেচনা করা হয় না। বলা হয় সংশোধনাগার। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কারাবন্দীদের বিভিন্ন কাজে লাগানো হয়। জেলের মধ‌্যেই তাদের দিয়ে বিভিন্ন পণ‌্য উৎপাদন করানো হয়। এর একটি উদ্দেশ‌্য মুক্ত জীবনে তারা যেন অলস সময় না কাটায় বা ভালোভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে।

২০১৮ সালে চীনের কারাগারগুলোতে মোট বন্দীর সংখ্যা ছিল ১.৭ মিলিয়ন। সেখানকার আইনানুযায়ী শাস্তি হিসেবে বন্দীদের কাজ করতে বাধ্য করা হতো। প্রতিদিন একজন বন্দীকে ৮ ঘণ্টা কাজ করতে হতো। তবে এর সঙ্গে তাদের নৈতিক শিক্ষাও দেয়া হতো। যুক্তরাষ্ট্রেও কারাবন্দীরা উৎপাদনকাজে শ্রম দেয়। বাংলাদেশের কারাগারগুলোতেও সম্প্রতি বন্দীদের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে।

 

 

কারাবন্দীদের উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শনী ও বিক্রয় হচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় কারাপণ্য স্টলে। দ্বিতল স্টলটিতে রয়েছে দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক থাকা কয়েদীদের তৈরি  জিনিসপত্র। এর মধ‌্যে গৃহসজ্জা সামগ্রী থেকে শুরু করে দৈনন্দিন ব্যবহার্য গৃহস্থালী সামগ্রীও রয়েছে। যেমন কাঠের চেয়ার, টেবিল, বেতের চেয়ার, টেবিল, মোড়া, নকশী কাঁথা, জামদানি শাড়ি, গামছা-তোয়ালে, পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, নানা ধরনের কাঠের শো-পিস, ক্রিস্টাল পুঁতির শো-পিস, পাটের ব্যাগ, দোলনা, টি-শার্ট প্রভৃতি। এসব পণ্যের কোনটি হস্তশিল্পের তৈরি, আবার কোনটি তৈরি করা হয়েছে যন্ত্রের সাহায‌্য নিয়ে। প্রতিটি পণ‌্যের গায়ে নির্দিষ্ট মূল্য ও উৎপাদনের স্থান উল্লেখ করা আছে। দৃষ্টিনন্দন এসব পণ্য নজর কাড়ছে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের।

স্টলে বিক্রয়কর্মী সকলেই জেল পুলিশ স্টাফ। উল্লেখিত দামে পণ্য বিক্রি করে তারা রশিদ দিচ্ছেন ক্রেতাকে। নির্দিষ্ট ও সুলভ মূল্যে পণ‌্য কিনতে পেরে ত্রেতাও খুশি। স্টলে দায়িত্বরত জুয়েল খন্দকার জানান, যেহেতু এসব পণ্য উৎপাদনে শ্রমের দাম কম, তাই পণ্যের দাম অন্যান্যদের চেয়ে বেশ কম। সে কারণে ক্রেতাদের আগ্রহও ভালো।

 

 

কারাবন্দীর শ্রম কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে সরকার কারা-অভ্যন্তরে কয়েদীদের প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। এ লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ করাগারে চালু হয়েছে একটি গার্মেন্টস কারখানা। এছাড়া দেশের অন্যান্য কারাগারগুলোতেও বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্পসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপণ্য উৎপাদন শুরু হয়েছে। সেখানে সাজাপ্রাপ্ত কয়েদীসহ বিচারাধীন বন্দীরাও অংশগ্রহণ করছেন উৎপাদন কার্যক্রমে। বিভিন্ন কারাগারে কারা পুলিশের স্টলে এসব পণ্য বিপণন হচ্ছে। বিক্রিত পণ্যের অর্ধেক লভ্যাংশ পাবেন উৎপাদনকারী বন্দীরা।

স্টলে দায়িত্বরত কারা পুলিশের ডেপুটি জেলার জাকির হাসান রিয়াল বলেন, ‘বন্দীদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের পুনর্বাসন ও সংশোধনের জন্য সরকারের এই উদ্যোগ। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন বন্দীদের শ্রমের অপচয় রোধ হচ্ছে, তেমনি তারা কাজ শিখছে ও কারাগারে থেকেই অর্থ আয় করতে পারছে। এসব অর্থ তারা নিজেদের প্রয়োজনে খরচ করতে পারছে এবং চাইলে বাড়িতেও পাঠাতে পারে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বন্দীরা জেল থেকে বের হওয়ার পর অপরাধ জগত থেকে ফিরে আসতে পারবে বলে আমরা মনে করি।’


ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়