ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

এডিপি বাস্তবায়ন হার নিয়ে বিতর্ক

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৪৬, ২৬ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এডিপি বাস্তবায়ন হার নিয়ে বিতর্ক

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়নের হার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও অর্থমন্ত্রণালয়ের মধ্যে এডিপি বাস্তবায়নের হার নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হচ্ছে। সরকারের দুই মন্ত্রণালয়ের দু ধরনের তথ্য।

এনিয়ে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে বেশ কটি সুপারিশ করা হয়েছিল। সেগুলোর বেশির ভাগই অনুসরণ করা হচ্ছে না বলে অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

এডিপি বাস্তবায়নের হার বাড়াতে অর্থ বিভাগের সুপারিশগুলোর মধ্যে ছিল-

অনুমোদিত ব্যয়সীমার মধ্যে প্রতিটি মন্ত্রণালয়/বিভাগের অগ্রাধিকারভুক্ত প্রকল্পগুলোর বিপরীতে অর্থায়ন নিশ্চিত করা।

নতুন অগ্রাধিকার প্রকল্পের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত অর্থের সংস্থান না হলে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ কমিয়ে বা স্থগিত রেখে নতুন প্রকল্পে অর্থায়ন করা।

সর্বোচ্চ বৈদেশিক সাহায্যপ্রাপ্ত ১০০টি প্রকল্পে বৈদেশিক সাহায্যের ছাড় ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ নিয়মিত পরিবীক্ষণ বৈঠক করা।

দক্ষ প্রকল্প পরিচালকের অভাব পূরণে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে চুক্তিভিত্তিক প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করা এবং প্রবৃদ্ধি সহায়ক ১০টি বড় প্রকল্প সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন করা।

গত বছর দেয়া এই সুপারিশগুলোর অনেকগুলোই এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি।

সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়ন হার নিয়ে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ভিন্ন চিত্র পাওয়া গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত ৫ অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) গড় বাস্তবায়ন হার ৮১ শতাংশ।

অন্য দিকে, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় বলছে, এ হার ৯১ শতাংশ। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)’ প্রকল্প বাস্তবায়নের হার প্রকাশ করে।

অন্য দিকে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয় (সিজিএ)’ পক্ষ থেকে আরএডিপির প্রকৃত ব্যয় একটি তথ্য উপাত্ত দেয়া হয়ে থাকে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আইএমইডির হিসাবে, গত পাঁচটি অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের গড় হার ৯২ শতাংশ। কিন্তু বাজেট উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রকৃত এডিপি বাস্তবায়নের গড় হার হচ্ছে সংশোধিত এডিপি’র প্রায় ৮১ শতাংশ।

গত পাঁচ অর্থবছরের বাজেট উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল সর্বোচ্চ। আলোচ্য অর্থবছরে সংশোধিত এডিপির আকার ছিল ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে প্রকৃত ব্যয় হয়েছে ৫৫ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। এডিপি বাস্তবায়নের প্রকৃত হার হচ্ছে ৯২ দশমিক ২২ শতাংশ।

অন্য দিকে সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়নের সর্বনিম্ন হার হচ্ছে গত ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে। সেই সংশোধিত এডিপির আকার নির্ধারণ করা হয় এক লাখ ৪৮ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ‘হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়’ (সিজিএ)-এর হিসাবে প্রকৃত ব্যয় হয়েছে এক লাখ ৯২ কোটি টাকা।

সে বছর এডিপি বাস্তবায়নের প্রকৃত হার হচ্ছে সংশোধিত এডিপির ৬৭ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে ‘আইএমইডি’র হিসাবে, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের হার হচ্ছে ৯৪ শতাংশ।

অপর দিকে এর আগে, তিনটি অর্থবছরের মধ্যে ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে সংশোধিত এডিপির আকার ছিল ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে প্রকৃত ব্যয় হয়েছে ৬০ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের হার ৮০ দশমিক ৫ শতাংশ।

অন্য দিকে, আইএমইডি বলছে, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৯১ দশমিক ৪০ শতাংশ। পরের বছর ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে সংশোধিত এডিপির আকার ছিল ৯১ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে প্রকৃত ব্যয় হয়েছে ৭৯ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের হার ৮৭ দশমিক ২০ শতাংশ। আইএমইডির হিসাবে এই হার হচ্ছে ৯২ দশমিক ৭২ শতাংশ।

এর পরের বছর ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে সংশোধিত এডিপির আকার ছিল এক লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে প্রকৃত ব্যয় হয়েছে ৮৪ হাজার ৯৩ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের হার ৭৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ। আইএমইডি’র তথ্য মতে, বাস্তবায়ন হার ৮৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

একইভাবে গেল ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে আইএমইডি হিসাবে আরএডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৯৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ। অন্য দিকে, অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, এই হার হতে পারে ৮৪ শতাংশের মত। প্রকৃত হিসাব এখনো করা হয়নি বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, আরএডিপি বাস্তবায়ন নিয়ে সিজিএ’র সঙ্গে আইএমইডি’র হিসাবে পার্থক্যর পরিমাণ প্রায় ১০ শতাংশের মতো। এর কারণ হচ্ছে, আইএমইডি শুধু ব্যয়ের হিসাব করে বাস্তবায়ন হার নির্ণয় করে থাকে। কিন্তু সিজিএ’র পক্ষ থেকে সেই ব্যয়টি প্রকৃতই হয়েছে কি না তা চুলচেরা হিসাব করে তারপরই চূড়ান্ত হিসাবটি করে। এ ক্ষেত্রে সিজিএ’র তথ্যটিই অর্থ বিভাগ ব্যবহার করে এবং তা সঠিক হিসেবেও বিবেচনা করে।

তিনি আরো বলেন, প্রতি বছর এডিপি আকার বাড়লেও বছর শেষে সংশোধন করেও তার পুরোটা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। গত ছয় অর্থবছরে মূল এডিপির আকার বেড়েছে প্রায় ২১৪ শতাংশ। আকার বাড়লে কী হবে, সংশোধন করে কমিয়েও বছর শেষে এডিপি বাস্তবায়ন করা যায় না।

 

ঢাকা/হসানাত/জেনিস

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়