ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সমন্বয়হীনতায় ভালো কোম্পানি আসছে না শেয়ারবাজারে

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১২, ১৮ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সমন্বয়হীনতায় ভালো কোম্পানি আসছে না শেয়ারবাজারে

সরকার বারবার উদ্যোগ নিলেও সমন্বয়হীনতা ও  দীর্ঘসূত্রিতার কারণে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে দেশের বড় বড় কোম্পানিগুলো। 

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশি-বিদেশি সরকারি-বেসরকারি বড় বড় প্রতিষ্ঠান-কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলে তাদের জবাবদিহিতা বাড়বে। বিশেষ করে, সরকারি কোম্পানিগুলো বাজারে এলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জবাবদিহিতার আওতায় আসবেন। অথচ ওয়ালটনের মতো ভালো ও বড় কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে আনার ব‌্যাপারে কোনো সমন্বয় নেই। উল্টো রয়েছে আইপিওর দীর্ঘসূত্রিতার বিড়ম্বনা।  

এদিকে, দেশের বেশকিছু কোম্পানি আইপিও’র মাধ্যমে বাজারে আসার জন্য আবেদন করেছে। কিন্তু নানা প্রক্রিয়া অবলম্বন করে বছরের পর বছর পার হয়ে গেলেও আইপিও অনুমোদন পায়নি।  

শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের বেসরকারি খাতের অনেক কোম্পানি ভালো ব্যবসা করছে। বাজারে এলে তাদের জবাবদিহিতা করতে হবে। যারা তালিকাভুক্ত হতে চায়, আইপিও-এর প্রক্রিয়ার কারণে তাদের মধ‌্যেও অনীহা দেখা দেয়। তাই সমন্বয়ের মাধ্যমে সরকারি কোম্পানি ও আইপিও প্রক্রিয়া সময় কম নিয়ে অনুমোদন দেওয়া উচিত। তাহলে ভালো কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারবে।’

বাজারে কোম্পানি তালিকাভুক্ত করার কাজ করে থাকে ইস্যু ম্যানেজারগুলো।  তারা বলছে, অতালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর হিসাব সব সময় ঠিক থাকে না। যেহেতু ইক্যুয়িটিনির্ভর শেয়ারবাজার, সেহেতু এখানে তালিকাভুক্ত হওয়ার  আগে এসব হিসাব ঠিক করতে হয়। সব কিছু ঠিক করে আইপিও আবেদন করে বাজারে আসতে ২ থেকে ৩ বছর সময় লেগে যায়। এত কিছু করতে গিয়ে যখন ফান্ড সংগ্রহ করা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে, তখন কোম্পানিগুলো  আগ্রহ হারিয়ে ফেরে। কখনো কখনো আইপিও আবেদন প্রত্যাহার করে নেয়। বিপরীত দিকে, দেশের ব্যাংকগুলো থেকে কোম্পানিগুলো সহজেই ফান্ড সংগ্রহ করতে পারে।

এই বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং এমটিবি ক্যাপিটালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খায়রুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদ বলেন, ‘তালিকাভুক্ত হয়নি এমন কোম্পানির হিসাব প্রস্তুত থাকে না। কারণ তাদের তেমন কোনো জবাবদিহিতা নেই। যখন বাজার থেকে ফান্ড সংগ্রহ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে তখন তাদের সব ধরনের হিসাব প্রস্তুত করে আইপিওর জন্য আবেদন করতে হয়। আইপিওর আবেদনের পর বাজারে আসা পর্যন্ত যে সময় লাগে, সে পর্যন্ত কোম্পানিগুলো অপেক্ষা করতে চায় না। দীর্ঘ সময়ের কারণে তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেরে। অথচ ব্যাংক থেকে ফান্ড সংগ্রহ করা সহজ। তাই  তারা সেদিকে ঝুঁকে পড়ে।  এসব কারণে ভালো  কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারমুখী করার জন্য কোনো প্রণোদনা দেওয়া যায় কিনা, সরকারকে তা ভেবে দেখা উচিত।’

এদিকে, আইপিও দীর্ঘ প্রক্রিয়ার নানা ধাপ পার হওয়ার পরও যেসব বড় কোম্পানি বাজারে আসছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিমূলক তথ‌্য ছড়াচ্ছে একটি বিশেষ মহল।  এসব কারণে যেসব বড় কোম্পানি বাজারে আসার ইচ্ছা পোষণ করছে, সেগুলোও পিছিয়ে যাচ্ছে। তাই কোনো বিতর্কে না জড়িয়ে বড় কোম্পানিগুলোকে বাজারে তালিকাভুক্ত করার সুযোগ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।

এই প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘দেশে অনেক বহুজাতিক কোম্পানি ব্যবসা করছে। সেই তুলনায় শেয়ারবাজারে তাদের অনেকেই তালিকাভুক্ত হচ্ছে না। এছাড়া সরকারের অনেক লাভজনক কোম্পানিও আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশের শীর্ষ স্থানীয় কোম্পানি ওয়ালটন বাজারে আসার প্রক্রিয়াধীন। অথচ কোনো একটি গোষ্ঠী কোম্পানিটির বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।’ এ ধরনের অবস্থা দেখে যারা বাজারে আসতে চায়, তারা পিছিয়ে যাবে বলেও তিনি মন্তব‌্য করেন।

ঢাকা/ ফারুক মিয়া/ এমএরহমান/হক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়