ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘ঋণখেলাপিদের জেলে না দিয়ে সুবিধা দেয়া হয়েছে’

বিশেষ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৯, ৬ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘ঋণখেলাপিদের জেলে না দিয়ে সুবিধা দেয়া হয়েছে’

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, টাকা আদায় করতেই জেলে না পাঠিয়ে খেলাপিদের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ সুযোগ দেয়া হয়েছে। এতে অনেকেই ধারণা করছেন যে, ভালো-মন্দ এক হয়েছে যাচ্ছে। কিন্তু ভালো-মন্দ কখনো এক হবে না।বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে হওয়া ২৪তম ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, যারা ঋণের ২ শতাংশ দেবে, তারা আবার ব্যবসা করতে পারবে। কারণ, তাদের ব্যবসা করতে হলে আবার ঋণের প্রয়োজন হবে। আর যারা ভালো তাদের তো কোনো এক্সট্রা ডিপোজিট বা ঋণ লাগবে না। তবে সবাই যদি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে তাহলে সবাই দিতে পারবে।

তিনি বলেন, খেলাপিদের ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ সুযোগে ২ শতাংশ কোনো বিষয় না। ২ শতাংশের শর্ত মেনেই তারা ঐক্যমত পোষণ করবে যে, তারা আমাদের সঙ্গে আছে। তারা এই শর্ত পূরণ করার জন্য এগিয়ে আসবে। আমরা এক্ষেত্রে একটি কাজ করতে চাচ্ছি, সেটা হলো, কাউকে জেলে না পাঠিয়ে টাকা আদায়। যারা ব্যাংক থেকে টাকা নিয়েছে তাদের সবাইকে টাকা ফেরত  দিতে হবে। যেভাবেই হোক এ টাকা আমরা আদায় করবই। এগুলো রাষ্ট্রের সব মানুষের টাকা। তবে আমরা সময়টা একটু বাড়িয়ে দিয়েছি।

অর্থমন্ত্রী বলেন, হাইকোর্টের রায় যখন আসবে তখন আমরা কার্যকর করব। কার্যকর করতে গেলে  আমাদেরও সবাইকে একটু সময় দিতে হবে। রায়ে কিছু পরিবর্তন হবে। আমাদের কিছু বাড়তি চাহিদা আছে। আগে রায় আসুক। রায়ের আগে কিছু বলা ঠিক হবে না। বেশি পরিবর্তন হবে না, মোটামুটি ঠিক থাকবে। কোর্ট আর আমাদের মাঝে কোনো বিরোধ নেই। আমরা একই পক্ষ। আমরা যে কাজটি করতে যাচ্ছি, সেটি দেশের মানুষের জন্য, জনকল্যাণের জন্য। দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যবান্ধব আইন আমরা করতে যাচ্ছি। এখানে অনেক ইস্যু রয়েছে, তা একত্র করে ব্যাংকিং খাতকে দাঁড় করানোটাই হলো আমাদের উদ্দেশ্য। এটা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কথাবার্তা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ব্যাংক ঋণে সুদের হার ১০ এর ওপরে যাবে না। এটা ৯ দশমিক ৭৫ হবে। অর্থাৎ সিঙ্গেল ডিজিট হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী ইশতেহারে ও বাজেটে সেটা উল্লেখ আছে। যাই হোক, আমরা ব্যাংক ঋণে সিঙ্গেল ডিজিট সুদ আদায় করব। এটা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে ব্যাংক, ঋণগ্রহীতা, সরকার ও দেশের মানুষ যেন না ঠকে। সে কাজ করতে হলে একটি বিরাট কর্মযজ্ঞে সবাইকে সম্পৃক্ত করে এ কাজটি করতে হবে।

ব্যাংকগুলো এখনো কোনো কমপাউন্ড সুদের হার করতে পারেনি, এ কথার জবাবে তিনি বলেন, এখানে আমরা এখন পর্যন্ত কিছু করতে পারিনি। তবে ব্যাংকগুলো করবে। যখন আমরা রায়ের কপি হাতে পাব, তখন বলা হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, কমপাউন্ড সুদের হার করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মানবে না, এমন কোনো ব্যাংকের অস্তিত্ব বাংলাদেশে পাওয়া যাবে না। যদি না মানে, সেজন্য আমরা আইনে পরিবর্তন নিয়ে আসছি। প্রয়োজনে মার্জার করা হবে, এ ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসছি। সরকারের সিদ্ধান্ত মানবে না, এটা হতেই পারে না। তবে যারা মানবে তাদেরকে আমাদের সাহায্য করতে হবে। এজন্য যে সুযোগ-সুবিধাগুলো আছে তা দিয়ে সহযোগিতা করব।

অর্থমন্ত্রী বলেন, দুঃখের বিষয় হলো গত বছরেই তারা ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার কথা বলেছিল। এজন্য তারা সরকারের কাছে কিছু শর্ত দিয়েছিল, সরকার তা পূরণ করেছে। এরমধ্যে অনেকেই সিঙ্গেল ডিজিটে আসছে। আবার কেউ কেউ আসেনি। তাদেরকে আসতে হবে না, হলে তাদের ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আইন সবার জন্য সমান। তারা ব্যবসা করলে লাভ করবে, কেউ কম, কেউ বেশি করবে। কিন্তু রেট সকলের এক হতে হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের এ অবস্থানে আসতে এ দেশের মানুষের অনেক অবদান রয়েছে। আমাদের তাঁতি, শ্রমিক, কৃষক, শিক্ষক, কামার, কুমার, জেলে, সাংবাদিক সকলেইর অবদান রয়েছে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমরা সৌভাগ্যবান, কারণ সুন্দর সময়ের মধ্যদিয়ে এগুচ্ছি। আমাদের এগিয়ে যাওয়ার  রাস্তাগুলো হচ্ছে সংস্কার। বিভিন্ন খাতে আমাদের সংস্কারমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে, যেমন: পুঁজিবাজার, ব্যাংকিং খাত, নন-ব্যাংকিং খাত, এনবিআর, শিক্ষাসহ সকল ক্ষেত্রে সংস্কার লাগবে। আমরা যদি সংস্কার না আনি  তাহলে পিছিয়ে থাকব। অন্যান্য দেশ এসব কাজ ২৫ বছর আগে করেছে। আমরা কিছুতেই কোনো জায়গায় হাত দিতে পারিনি।

সরকারি ব্যাংক ছাড়া বেসরকারি ব্যাংক এ নিয়ম মানছে না, এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, সরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি কিছু বেসরকারি ব্যাংকও মানছে। তারাও সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসছে।

ব্যাংক কমিশনের বিষয়ে কী ভাবা হচ্ছে, জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক কমিশন যে আমরা করব সেটা বাজেটেও বলেছি। সুতরাং আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের আন্ডারেই ব্যাংক কমিশন করব। শিগিরই করা হবে। আপনারা জানতে পারবেন।


ঢাকা/হাসনাত/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়