ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় বাড়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২৭, ১৭ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় বাড়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না

অর্থনীতির স্থবিরতা কাটাতেই ঋণ গ্রহীতাদের ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, ব্যাংক উদ্যোক্তা ও ব্যাংকাররা। এর ফলে কোনও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলছেন তারা। গত সোমবার এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

করোনাভাইরাসের কারণে দেশের অর্থনীতি অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। দেশের বিভিন্ন শিল্পকারখানাসহ অর্থনীতির অন্য খাতের স্থবিরতা কাটাতে সরকার নানামূখী পদক্ষেপ নিচ্ছে। অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে এরই মধ্যে বিপুল অংকের প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সর্বশেষ ব্যাংকের ঋণ গ্রহীতাদের জন্য বিশেষ ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য দুই দফা সময় বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে অর্থনীতিতে কী প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়ে কথা হয়েছে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও ব্যাংকারদের সঙ্গে। এ বিষয়ে তারা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও জনতা ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবুল বারকাত রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। করোনার প্রাদুর্ভাবে লকডাউনের কারণে দেশের উৎপাদন ব্যবস্থা প্রায় পুরোপুরি বন্ধ। একমাত্র কৃষিখাতে এ ধরনের কোনও সমস্যা নেই। এখাতে তেমন কোনও ঋণও নেই। উৎপাদন ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় শিল্পখাতের উদ্যোক্তারা, যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন তারা বড় ধরনের সমস্যায় আছেন।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তকে যথার্থ বললেচন বারকাত, ‘এ সময়ে অনেক শিল্প মালিকরা ঋণখেলাপি হয়েছেন। তবে আমার জানা মতে কেউ ইচ্ছে করে ঋণখেলাপি হননি। আমি বলবো বাংলাদেশ ব্যাংক যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা যথার্থ। এতে শিল্প মালিকরা ঋণের কিস্তি পরিশোধের চিন্তা থেকে সরে এসে কী করে উৎপাদন চালু করা যায় সে দিকে মনোযোগী হতে পারবেন।’

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সন্মানিত ফেলো ও অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ বিষয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধের সময় বাড়িয়ে উদ্যোক্তাদের জন্য একটি সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। ঋণ গ্রহীতাদের জন্য এটা সুসংবাদ। তবে ব্যাংকগুলো দুর্বল অবস্থায় রয়েছে তারা কীভাবে তাদের ব্যয় নির্বাহ করবে সেটা দেখার বিষয়।’

আরেক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মু. আবু ইউসুফ বলেন, ‘পরিস্থিতি বিবেচনা করে উদ্যোক্তাদের কিস্তি পরিশোধে কিছুটা ছাড় দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। সময় বাড়ানোয় ব্যাংকগুলো ঋণ গ্রহীতাদের কাছে সুদের উপর সুদ দাবি করছে না। যদি সেটা করতো তা হলে অন্য অবস্থা সৃষ্টি হতো। কিন্তু ব্যাংকগুলো তা করছে না। সময়মতো ঋণের টাকা ফেরত না আসায় ব্যাংকগুলোর সাময়িক কিছুটা সমস্যা হতে পারে। তবে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে তারা এটা মেনে নিয়েছে।’

এফবিসিসিআই’র সাবেক প্রেসিডেন্ট ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান আকরাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সরকার যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে তা দেশের পরিবর্তিত অবস্থার প্রেক্ষিতে। তবে এগুলো কোনোটাই ব্যাংকগুলোর অনুকূলে নয়। হয়তো দেশের বৃহত্তর স্বার্থে নেওয়া হচ্ছে।’

নতুন সিদ্ধান্তে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না মনে করেন বেসরকারি খাতের অন্যতম ব্যাংক মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, বিশিষ্ট ব্যাংকার সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধে ঋণগ্রহীতাদের জন্য দুই দফা সময় বাড়ালো। এটা দেশের পরিবর্তিত অবস্থার কারণে। কিস্তি পরিশোধের সময় সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর ফলে ব্যাংক ব্যবস্থার সামগ্রিক অবস্থার উপর নেতিবাচক তেমন কোনও প্রভাব পড়ার কথা নয়। শুধু পেমেন্ট কিছুটা দেরিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে এ নির্দেশনা দিয়েছে। আমরা সেটা অনুসরণ করবো।’

এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বোর্ড মিটিংয়ে থাকার কথা জানিয়ে ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক জাকিয়া বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সবই বন্ধ। এজন্য ঋণগ্রহীতারাও আর্থিক সংকটে রয়েছেন। এ বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছে।’

জাকিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে এ সময়ের মধ্যে নতুন করে কাউকে ঋণখেলাপি না করার পরামর্শ দিয়েছে। এটা আমরা অনুসরণ করবো। তবে যাদের পক্ষে সম্ভব, তারা এসময় ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারবেন। আমাদের খুবই কম সমস্যা হবে। কিস্তি পরিশোধের সময় বাড়ালেও ঋণের সুদ ব্যাংকগুলো পাবে। তাই এ নিয়ে বড় ধরনের কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।   

গত সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবৃদ্ধি ও নীতি বিভাগ ‘ঋণ শ্রেণিকরণ’ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে সব তফসিলি ব্যাংকে পাঠিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বর্তমানে কোনও ঋণগ্রহীতা যদি ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হন, তাহলে তাকে খেলাপি করা যাবে না। তবে যদি কোনও খেলাপি ঋণগ্রহীতা এ সময়ের মধ্যে ঋণ শোধ করেন, তাকে নিয়মিত ঋণগ্রহীতা হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে।



ঢাকা/হাসনাত/ফাহিম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়