ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

চামড়ায় ধস, দায়ী কারা?

শাহ আলম খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৪২, ৩ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
চামড়ায় ধস, দায়ী কারা?

কোরবানির চামড়ার দামে ধস নামায় মৌসুমি ব‌্যবসায়ী-আড়ৎদাররা দুষছেন ট‌্যানারি মালিকদের। তাদের অভিযোগ—ট‌্যানারি মালিকরা একদিকে সরকারকে চামড়ার কম মূল্য নির্ধারণে প্ররোচনা দিয়েছেন, অন্যদিকে আড়ৎদারদের বকেয়া পরিশোধ করেননি। এর ফলে নগদ অর্থ সংকট দেখা দেওয়ায় প্রয়োজনীয় চামড়া কেনা সম্ভব হয়নি। আর ট‌্যানারি মালিকদের দাবি—তারা পর্যাপ্ত ব‌্যাংকঋণ পাননি। পেলে চামড়া কেনায় সমস্যা তৈরি হতো না।

রাজধানীর পোস্তা ও সাভারের আমিন বাজারের আড়তে চামড়া বিক্রি করতে আসা মৌসুমি ব‌্যবসায়ীরা বলছেন, কোরবানির সময়ে তারা সারাদেশ থেকে চামড়া নিয়ে আসেন আড়তে। আর আড়ৎদাররা সুযোগ বুঝে দর কষাকষি শুরু করেন। এ সময় নগদ অর্থ সংকটের ইস‌্যু দেখিয়ে চামড়া কিনে আড়তে তুলতে গড়িমসিও করেন তারা। এতে একদিকে প্রচুর সময়ের অপচয় হয়েছে, অন‌্যদিকে প্রক্রিয়াজাত ছাড়াই কাঁচা চামড়া ট্রাকে থাকায় পচতেও শুরু করেছে।

তবে, এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পোস্তা, আমিনবাজারসহ ঢাকার বাইরের কয়েকজন আড়তদার। তাদের অভিযোগ—চামড়া নিয়ে এই সংকট তৈরি করেছেন ট্যানারি মালিকরা। আর দাম নির্ধারণ বিষয়ে নীতিগত ভুল সিদ্ধান্ত দিয়ে হালে হাওয়া দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

জানতে চাইলে ‘হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সভাপতি আফতাব খান বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসা নেই। আয় নেই। নগদ অর্থ নেই। সারাদেশে আড়ৎদাররা ট‌্যানারি মালিকদের কাছে কোটি কোটি টাকা পাওনা থাকার পরও পরিশোধ হচ্ছে না। চামড়া কিনবেন কী দিয়ে?’

আফতাব খান আরও বলেন, ‘টাকা থাকলে চামড়া কেনার প্রতিযোগিতা হয়। দামও বেড়ে যায়। এবার টাকা না থাকায় চামড়া কেনায় কোনো প্রতিযোগিতা হয়নি। দামও কমেছে। সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম বাড়ানো-কমানো যায় না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সার্বক্ষণিক নজরদারিতে সরকারের নির্ধারিত দাম ফর্মূলা অনুসরণ করে লেনদেন হয়েছে। এখানে কারও কিছু করার সুযোগ নেই। ’

ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, ‘দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে ট‌্যানারি মালিকদের সক্ষমতা কমেছে। এই কারণে বকেয়া বেড়েছে। ’ তিনি আরও দাবি করেন, ‘কাঁচা চামড়াব্যবসায়ী ও আমরা পরিপূরক। আমাদের মধ‌্যে কোনো বিরোধ নেই। দেনা-পাওনা থাকবে। তা পরিশোধও হয়। এজন্য সরকারকেও প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে শাহীন আহমেদ বলেন, ‘তফসিলি ব্যাংকগুলো প্রতিবছর কোরবানির আগে চামড়া কেনার জন্য যে পরিমাণ ঋণের কথা বলে, আসলে সেই পরিমাণ ট্যানারি মালিকরা পান না। কোরবানি উপলক্ষে পর্যাপ্ত ঋণ পেলে এই সমস্যা তৈরি হতো না।’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. রবিউল আলম বলেন, ‘চামড়া পচে গেছে। বকেয়া টাকাও পরিশোধ হয়নি। আর এই ইস্যুতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সঠিক দায়িত্ব পালন করেনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, চামড়াসংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা দরকার। না হলে সমাধান মিলবে না। এজন্য শিল্প, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ট্যনারি মালিক ও কাঁচাচামড়া ব্যবসায়ীদের বড় পরিসরে আলোচনা হওয়া দরকার। ’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ‌্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন বলেন, ‘চামড়া ইস‌্যুতে বাণিজ‌্য মন্ত্রণালয়কে দোষ দেওয়ার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে দফায় দফায় বৈঠক করে সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারের অভিমত নিয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। ’

বাণিজ‌্য সচিব আরও বলেন, ‘কাঁচা চামড়া নয়, লবণজাত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।’ স্বাভাবিকভাবেই কাঁচা চামড়ার দাম লবণজাত চামড়ার চেয়ে কম হবে বলেও তিনি মন্তব‌্য করেন।

শাহ আলম খান/এনই

রাইজিং বিডি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়