ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

অর্থপাচার বেড়েছে যে সব কারণে

শাহ আলম খান  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:০০, ১৩ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
অর্থপাচার বেড়েছে যে সব কারণে

প্রাক-জাহাজিকরণ তদন্ত (পিএসআই) ব্যবস্থা তুলে দেওয়ায় দেশে থেকে অর্থপাচার বেড়েছে বলে মনে করে বাংলাদেশ ব‌্যাংক।  কেন্দ্রীয় ব‌্যাংকের মতে, অর্থপাচারের অন্যতম মাধ্যম বাণিজ্যভিত্তিক লেনদেন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে ব্যাংকিং চ্যানেল ঘিরেই। কিন্তু পিএসআই পদ্ধতি বাতিল হওয়ায় এখন এই ধরনের আমদানি-রপ্তানিতে কোনো রকম ট্র‌্যাকিং ছাড়াই মাদার ভ্যাসেল ও কন্টেইনার থেকে মালামাল খালাস ও শুল্কায়ন হচ্ছে।  এতে পণ্যের দামে আন্ডার ইনভয়েস ও ওভার ইনভয়েসিংয়ের সুযোগ থেকে যাচ্ছে।   

সংশ্লিষ্টদের মতে, অসাধু কিছু ব্যবসায়ী পণ্য আমদানির সময় পণ্যের মূল্য বেশি দেখিয়ে (ওভার ইনভয়েসিং) অতিরিক্ত অর্থ বিদেশে পাচার করেন। আবার পণ্য রফতানির সময় পণ্যের মূল্য কম দেখিয়ে  কিছু অর্থ বিদেশেই রেখে দেন। অর্থপাচারের এই প্রবণতা ঠেকাতে সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরের ত্রিমুখী উদ্যোগ থাকলেও  বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে পাচার হওয়া অর্থ ফেরানোর চেয়ে নতুন করে যেন অর্থ পাচার না হয়, সে ব‌্যবস্থা নেওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।  

মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত জাতীয় সমন্বয় কমিটির গত বছর (২০১৯) মে মাসে অনুষ্ঠিত বৈঠকেও আমদানি-রপ্তানিতে ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিং ইস্যুতে পিএসআই ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা গুরুত্ব পায়।  ওই বৈঠকেও পিএসআই ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার কারণে দেশ থেকে অর্থপাচারের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিও চিহ্নিত হয়।

মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত জাতীয় সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ওই বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘বড় আকারের অর্থপাচার হয় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে ব্যাংক ও রাজস্ব ব্যবস্থার মাধ্যমে।  এখানে ওভার বা আন্ডার প্রাইসিংয়ের যে বিষয় থাকে, তা চেক করার জন্য আমাদের আবারও সেই পিএসআই ব্যবস্থায় যেতে হবে। যার মাধ্যমে জাহাজিকরণের আগে পণ্য যাচাই-বাছাই এবং প্রত্যেক পণ্যের মূল্য পরীক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত যাবে। ’

এদিকে পিএসআই ব্যবস্থায় যাওয়া হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের কাস্টমস শাখার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘করোনার কারণে পিএসআই ব্যবস্থা পুনরায় চালু হওয়ার বিষয়ে বাস্তবিক অর্থে অগ্রগতি নেই।  আগামী (২০২১-২২) অর্থবছরে আশা করছি, এই সম্পর্কিত একটি দিক-নির্দেশনা থাকবে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেসরকারি আর্থিক গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জের (পিই) চেয়ারম্যান ও বিশ্বব্যাংকের সাবেক জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ড. মাসরুর রিয়াজ বলেন, ‘মানিলন্ডারিং ও অর্থচারের মতো এই প্রবণতা বন্ধে পিএসআই ব্যবস্থা পুনরায় চালু করার একটা তাগিদ বিভিন্ন মহলে দেখা যাচ্ছে।  এটি পুনবর্হাল হতে পারে। ’ এই সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ‘এই ব্যবস্থা তো আগেও ছিল।  সেটি কিন্তু ত্রুটিমুক্ত ছিল না। তাই নতুনভাবে চালু করলেই অর্থপাচার বন্ধ হয়ে যাবে না।  দেখতে হবে, সেটা কোন ফরমেটে করা হবে। এছাড়া, প্রয়োজনীয় জনবল, ইন্সট্রুমেন্ট ও ক্ষমতাও দিতে হবে।  শুল্কায়ন ও খালাস প্রক্রিয়ায় সময় বিবেচনায় রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য দায়িত্বপ্রাপ্তদের দক্ষতা ও স্বচ্ছতাও জরুরি।

প্রসঙ্গত, গত ২০০০ সালে বাধ্যতামূলকভাবে পিএসআই ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। এরপর ২০১৩ সালের ৩০ জুন এই ব‌্যবস্থা বাতিল করে দেয় সরকার।  যা বিলুপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত কার্যকর ছিল। ওই সময় সুইজারল্যান্ডভিত্তিক কোম্পানি এসজিএস, ফ্রান্সভিত্তিক ব্যুরো ভেরিটাস, ব্রিটিশভিত্তিক আইটিএস ও জাপানভিত্তিক কোম্পানি অমিক বাংলাদেশের হয়ে প্রাক-জাহাজিকরণ তদন্ত কার্যক্রম চালাতো।  

এই কার্যক্রমের আওতায় কোম্পানিগুলো পণ্যের গুণগত মান, পরিমাণ, মূল্য, এইচএস কোড (পণ্য পরিচিতি কোড) ও আমদানিযোগ্যতা নিশ্চিত করে ক্লিন রিপোর্ট ফাইন্ডিংস (সিআরএফ) সনদ ইস্যু করতো। যার ভিত্তিতে পণ্যের শুল্কায়ন ও মালামাল খালাস করা হতো। এই সেবার বিপরীতে পিএসআই কোম্পানিগুলো ১ শতাংশ নির্ধারিত হারে চার্জ আদায় করতো। এর একটি অংশ সরকারও পেতো।

শাহ আলম খান/এনই

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়