ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

জালিয়াতি প্রতিরোধে ই-পেমেন্ট বাধ্যতামূলক চায় এনবিআর

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৪৪, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ০৭:০০, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০
জালিয়াতি প্রতিরোধে ই-পেমেন্ট বাধ্যতামূলক চায় এনবিআর

ই-পেমেন্ট বাধ্যতামূলক করতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও  মহা-হিসাব নিরীক্ষকসহ অন্তত সংশ্লিষ্ট ১০টি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে চিঠি দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।  গত ৩১ আগস্ট এনবিআর সদস্য ( কাস্টমস; নিরীক্ষা আধুনিকায়ন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য) খন্দকার মুহাম্মদ আমিনুর রহমারের সই করা চিঠিতে এইসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

এই বিষয়ে খন্দকার মুহাম্মদ আমিনুর রহমান বলেন, ‘ই-পেমেন্ট বাধ্যতামূলক না হওয়ায় এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা কাঙ্ক্ষিত স্তরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।  ফলে, শুল্ক-কর পরিশোধে এই আধুনিক পদ্ধতির সেবা থেকে আমদানিকারকরা বঞ্চিত হচ্ছেন। একইসঙ্গে এই পদ্ধতি বাস্তবায়িত না হওয়ায় জাল চালান দাখিল ও মহা-হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক অফিসের সঙ্গে প্রদর্শিত রাজস্ব আহরণ চিত্রে প্রায়শই গরমিল দেখা যায়।’

আমিনুর রহমান আরও বলেন, ‘আমদানিকারকের কাছ থেকে সংগ্রহ করা অর্থ রাজস্ব হিসেবে জমা দিতে ক্ষেত্রবিশেষে জালিয়াতির আশ্রয় নেন অনেকে। এতে জাল দলিল তৈরির আশঙ্কা থেকে যায়। তাই জালিয়াতি প্রতিরোধে ই-পেমেন্ট অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে।’

চিঠি-সূত্রে জানা গেছে, ডব্লিউটিও-এর আওতাধীন বাণিজ্যিক সুবিধার চুক্তি বাস্তবায়নে এনবিআরের শুল্ক করাদি, ফি, চার্জ পরিশোধের পদ্ধতি সহজীকরণের মাধ্যমে দ্রুত পণ্যচালান খালাস করার লক্ষ্যে বিদ্যমান  অ‌্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের মাধ্যমে ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। ২০১৭ সালে এই ব্যবস্থাটি চালু হলেও এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। 

২০১৮-১৯ অর্থবছরে ই-পেমেন্টের মাধ্যমে পরিশোধিত রাজস্বের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১৩০ কোটি ২৪ লাখ ৯৪ হাজার ১১৯ টাকা।  যেখানে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের ১৫ মার্চ পর্যন্ত জমাকৃত রাজস্বের পরিমাণ ৪ হাজার ১১০ কোটি ৩০ হাজার ৯২৭ টাকা।  বর্তমানে ৪১ বাণিজ্যিক ব্যাংক ই-পেমেন্ট ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে বলে জানা গেছে ।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে  ই-পেমেন্ট বাধ্যতামূলক করা নিয়ে গত ১৮ মার্চ এনবিআর চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই সভায় আমদানি-রপ্তানিকারক ও এজেন্টদের সচেতন করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট  অ‌্যাসোসিয়েশন বা বাণিজ্যিক সংস্থাগুলোকে  কর্মশালার আয়োজন করতে এনবিআর সদস্যসহ সব কাস্টম হাউসের কমিশনারদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই সভায় কমলাপুরের কাস্টম হাউসে (আইসিডি) ন্যূনতম শুল্ক-করের একটি পরিসীমা নির্ধারণ করে আপাতত তা ই-পেমেন্টের আওতায় আনার জন্য এই পদ্ধতির পরীক্ষামূলক বাস্তবায়ন (পাইলটিং) সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। 

বর্তমানে কোভিড-১৯-জনিত কারণে জনসমাগম নিরুৎসাহিত করার কারণে সচেতনতামূলক কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। তবে, স্টেকহোল্ডারদের সচেতনতার জন্য সংক্ষিপ্ত ভিডিও টিউটোরিয়াল নির্মাণের কার্যক্রম ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। বিদ্যমান বাস্তবতায় ধাপে ধাপে ই-পেমেন্ট বাধ্যতামূলক করাসহ এই সংক্রান্ত ব্যাপক প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি এনবিআর  বিবেচনা করছে। এক্ষেত্রে, একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শুল্ক-করের বেশি পরিমাণের রাজস্ব পরিশোধের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে ই-পেমেন্ট ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করাসহ পরবর্তীকালে ধাপে ধাপে রাজস্ব পরিশোধে ই-পেমেন্ট বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

এছাড়া, বর্তমানে করোনা ভাইরাসের কারণে কাস্টম হাউস ও অন্য দপ্তরগুলোয় জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হচ্ছে। এই অবস্থায় রাজস্ব ফাঁকি নিয়ন্ত্রণ ও করোনা পরিস্থিতিতে কাস্টমস কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশ হিসেবে কাস্টম হাউস ও কাস্টমস স্টেশনগুলোয় ই-পেমেন্ট চালুর জন্য ব্যবস্থা নিতে। এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধের বিষয়ও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এম এ রহমান/এনই

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়