ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

এস্কয়ার নিটের আইপিওর অর্থ ‘অপব্যবহার’ তদন্ত করছে বিএসইসি

নাজমুল ইসলাম ফারুক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৫৬, ২৯ অক্টোবর ২০২০  
এস্কয়ার নিটের আইপিওর অর্থ ‘অপব্যবহার’ তদন্ত করছে বিএসইসি

পুঁজিবাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার না করার অভিযোগ উঠেছে এস্কয়ার নিট কম্পোজিটের বিরুদ্ধে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এ অর্থ অপব্যবহার করা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

জানা গেছে, বুক বিল্ডিং পদ্ধতির মাধ্যমে ২০১৯ সালের শুরুতে পুঁজিবাজার থেকে ১৫০ কোটি টাকা তুলেছে এস্কয়ার নিট কম্পোজিট। বাজার থেকে তুলে নেওয়া অর্থ থেকে ভবন নির্মাণের জন্য ১০০ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং কারখানায় যন্ত্রপাতি স্থাপনের জন্য ৪৩ কোটি টাকা ব্যয় করার কথা ছিল।

তবে আইপিওর অর্থ নিয়মানুযায়ী ব্যবহার করেনি বলে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এরপরই নড়েচড়ে বসেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। কমিশন বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিশেষ নিরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয়। একইসঙ্গে বিশেষ নিরীক্ষার জন্য হাওলাদার ইউনুস অ্যান্ড কোম্পানিকে নিরীক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে নিরীক্ষা প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করতে বলা হয়। নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান বিষয়টি নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনে বেশকিছু অসঙ্গতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে, নতুন কমিশন এস্কয়ার নিট কম্পোজিটের আইপিও তহবিল ব্যবহারে অনিয়মের বিষয়টি অধিকতর তদন্তে জোর দিয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি তিন সদস্যেরে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কমিশন। কমিটিতে রয়েছেন বিএসইসির উপ-পরিচালক মো. মিরাজ উস সুন্নাহ, সহকারী পরিচালক মো. বনি ইয়ামিন খান এবং সহকারী পরিচালক তোহিদ হাসান।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, এস্কয়ার নিট কম্পোজিটের আইপিওর অর্থ ব্যবহারে বিভিন্ন অনিয়ম, অসঙ্গতি থাকলেও কোম্পানির নিয়োগ করা নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান মেসার্স মালেক সিদ্দিকী ওয়ালী, চার্টাড অ্যাকাউন্টেন্টস আর্থিক প্রতিবেদনে কোনো ধরনের মতামত দেয়নি। কিন্তু কমিশন থেকে নিয়োগ করা বিশেষ নিরীক্ষক মেসার্স হাওলাদার ইউনুস অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্টস আর্থিক প্রতিবেদনে বেশ কিছু অসঙ্গতি পেয়েছে। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতেই এস্কয়ার নিট কম্পোজিটের আর্থিক প্রতিবেদনে অসঙ্গতি খতিয়ে দেখতে নতুন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে আইপিওর অর্থ নিয়ে কোনো ধরনের মানিল্ডারিং হয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হয়। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনে জমা দেবে।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম রাইজিংবিডিকে জানান, যেহেতু বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন, সেহেতু এখন কিছু বলা যাচ্ছে না।

আরও জানা গেছে, আইপিওর অর্থ দিয়ে ১০০ কোটি টাকায় ভবন নির্মাণে পারিবারিক প্রতিষ্ঠান পিনাকল কনস্ট্রাকশন ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডকে দিয়ে কাজ করিয়েছে এস্কয়ার নিট। পিনাকলের পর্ষদে এস্কয়ার নিট কম্পোজিটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. এহসানুল হাবিবের দুই মেয়ে রয়েছেন। আন্তর্জাতিক হিসাব মান (আইএএস) অনুযায়ী স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেনের বিষয়টি আর্থিক প্রতিবেদনে প্রকাশ করতে হয়। কিন্তু কোম্পানির কোনো আর্থিক প্রতিবেদনে এ সংক্রান্ত কোনো বিষয় উল্লেখ করেনি। তাতে কোম্পানিটি কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে পারিবারিক প্রতিষ্ঠান দিয়ে ভবন নির্মাণের কাজ করায় বলে কমিশনের সন্দেহ হয়। এরপর থেকে বিষয়টি তদন্ত করতে বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগ করে বিএসইসি।

এ সম্পর্কে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. এহসানুল হাবিব এর সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মোবাইলে মেসেজ পাঠালে তিনি পরে কথা বলবেন বলে জানান। কিন্তু পরে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

ঢাকা/এনএফ/জেডআর

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়