ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

লোকসান নিয়ে শঙ্কায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৫৯, ৩০ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৬:১৪, ২০ আগস্ট ২০২২
লোকসান নিয়ে শঙ্কায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো

করোনাভাইরাসের কারণে চলতি বছর রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকের লোকসান হওয়ার আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্টরা। এ ক্ষতির পরিমাণ হতে পারে ৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। আর এ তথ্য জানা গেছে ব্যাংক ছয়টির নিজস্ব হিসাব থেকে।

সূত্র জানায়, করোনার প্রভাবে ব্যাংকগুলোর ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা। এর সঙ্গে আরও ৭টি সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি যোগ করলে এর পরিমাণ দাঁড়াবে ৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো এ ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আর্থিক ক্ষতির কারণ হিসেবে পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি, সুদ আয় কমে যাওয়া ও অন্যান্য সার্ভিস চার্জ কমে যাওয়া এবং করোনাকালে দুই মাসের সুদ স্থগিত রাখাসহ আরো কয়েকটি বিষয়ের কথা বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে সোনালী ব্যাংকের ক্ষতির প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। জনতার ২ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের র ১ হাজার ১৫ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের  ৮৫৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা, বেসিক ব্যাংকের ৩১৯ কোটি টাকা, বিডিবিএলের ১৫০ কোটি টাকা, কৃষি ব্যাংকের ৪৪০ কোটি টাকা, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ১৭৯ কোটি টাকা, কর্মসংস্থান ব্যাংকের ৬১ কোটি টাকা, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ২৪৭ কোটি টাকা ও আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের ক্ষতি হবে ৩১৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এর বাইরে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ও হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনও আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছে।

পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। টার্গেটের অর্ধেকেরও কম খেলাপি ঋণ আদায় করতে পারছে না রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। চলতি অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ও বিডিবিএলের খেলাপি ঋণ আদায়ের টার্গেট দেওয়া রয়েছে ১ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। সে অনুযায়ী প্রতি প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ আদায় করার কথা ৪০০ কোটি টাকা। কিন্তু ব্যাংকগুলো আদায় করতে পেরেছে মাত্র ১৯১ কোটি টাকা।

প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত জুন শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ৪২ হাজার ১২৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের ১০ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকের ১৩ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকের ৬ হাজার কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের ৪ হাজার ১৬১ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকের ৭ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা ও বিডিবিএলের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৫৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।

জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ছয় ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ বেড়ে ৪৩ হাজার ১১৮ কোটি ১১ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে, আগামী জুন শেষে ছয় ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ৩৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা নির্ধারণের টার্গেট দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আলোচ্য সময়ে খেলাপি ঋণ কমাতে হবে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কতটা সম্ভব তা নিয়েও সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

সেপ্টেম্বর শেষে এসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের ১০ হাজার ৭৫৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা, জনতা ব্যাংক ১৩ হাজার ৯৯৯ কোটি ২০ লাখ টাকা, অগ্রণী ব্যাংক ৬ হাজার কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংক ৪ হাজার ১০২ কোটি ২২ লাখ টাকা, বেসিক ব্যাংক ৭ হাজার ৬০৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ও বিডিবিএলের ৬৫৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে।

হাসনাত/এসএম

হাসনাত/এসএম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়