তসরিফার আয়ে ধস, খতিয়ে দেখছে ডিএসই
নাজমুল ইসলাম ফারুক || রাইজিংবিডি.কম
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির তিন বছরের মাথায় আয়ে বড় ধরনের ধসের মধ্যে পড়েছে তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ১ টাকা ৮ পয়সা। কিন্তু কী কারণে এ অবস্থা হলো- তা খতিয়ে দেখছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।
জানা গেছে, তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে ২০১৫ সালে। তালিকাভুক্তির পর দুই বছর নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। কিন্তু পরের বছর ২০১৮ সালে লভ্যাংশের অর্ধেক বোনাস দেয় প্রতিষ্ঠানটি। পরের হিসাব বছর শেষে অর্থাৎ ২০১৯ সালে কোম্পানি মাত্র ১ শতাংশ লভ্যাংশ দেয় বিনিয়োগকারীদের। আলোচ্য বছরই কোম্পানির আয়ে বড় ধরনের ধসে পড়েছে বলে আর্থিক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করে। এদিকে, প্রায় এক বছর পর বিষয়টি স্টক এক্সচেঞ্জ খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালে কি কারণে আয়ে ধস নামলো- কোম্পানির কাছে এর কারণ ব্যাখ্যা চেয়েছে ডিএসই।
কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিম হাসান রাইজিংবিডিকে বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি শুরু হয়েছে, অন্যদিকে ক্রেতারা তাদের অর্ডার বাতিল করেছেন। এমন সময়ও গেছে যে, অর্ডার করা পণ্য নিজেরা বিমান ভাড়া বহন করে ক্রেতাদের কাছে পাঠাতে হয়েছে। যার ফলে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়েছে। এছাড়া কিছুদিন কারখানা উৎপাদন বন্ধ ছিল। সব মিলিয়ে ব্যবসা মন্দার ধাক্কা লেগেছে তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজে। এসব কারণে লোকসানে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে লোকসান কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশা করি ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে।
২০১৯ সালে আগের হিসাব বছরের চেয়ে আয় অস্বাভাবিক কমেছে কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই সময় ব্যবসা সম্প্রসারণসহ ব্যাংক ঋণ পরিশোধ ছাড়াও ডেফার্ট টেক্স গণনা সংক্রান্ত জটিলতায় পড়তে হয়েছে। তখন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে কর সংক্রান্ত বিষয়ে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় হয়েছে। ফলে আয় অস্বাভাবিকভাবে কমেছে।
আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার আগের বছর ২০১৪ সালে করপরবর্তী মুনাফা হয়েছিল ১১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা এবং শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ২ টাকা ৯৫ পয়সা। ২০১১, ২০১২ এবং ২০১৩ সালে ইপিএস ছিল যথাক্রমে এবং ২ টাকা ২৬ পয়সা, ২ টাকা ৪৮ পয়সা এবং ২ টাকা ৬৪ পয়সা। অর্থাৎ বাজারে আসার আগে ধারাবাহিকভাবে আয় বেড়েছে।
অন্যদিকে, তালিকাভুক্তির বছর ২০১৫ সালে ইপিএস কমে হয়েছিল ২ টাকা ৪৪ পয়সা। ২০১৬ সালের ১ টাকা ৭৬ পয়সা, ২০১৭ সালে ১ টাকা ৩২ পয়সা। ২০১৮ সালে ইপিএস ছিল ১ টাকা ২০ পয়সা। যা ২০১৯ সালের জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে অস্বাভাবিকভাবে কমে দাঁড়ায় মাত্র ১২ পয়সা। আয় ধারাবাহিকভাবে কমেছে। এছাড়া এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় কমেছে ১ টাকা ৮ পয়সা। ৩০ জুন, ২০২০ সালে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। আলোচ্য সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২ টাকা ৮৭ পয়সা। বাজারে তালিকাভুক্তির আগে ধারাবাহিকভাবে আয় বাড়লেও বিপত্তি বাধে বাজারে আসার পর। এমন কোম্পানিগুলো বাজারকে অস্থির করে তুলার জন্য দায়ী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অধ্যাপক আবু আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, বাজারে বেশকিছু কোম্পানি আছে যারা আয় বেশি দেখানোর মাধ্যমে আইপিওতে অর্থ নিয়েছে। এসব কোম্পানির বিষয়ে বিনিয়োগকারীদেরও সজাগ থাকতে হবে। তাতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে। তবে বর্তমান কমিশন কাজ করছে। ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি আনতে তারা চেষ্টা করছে।
নাজমুল/সাইফ
আরো পড়ুন