ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বুথ বাড়ালেই হবে না, বিনিয়োগ শিক্ষায়ও গুরুত্ব দিতে হবে: ছায়েদুর রহমান

নাজমুল ইসলাম  ফারুক  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:২৪, ১২ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৯:২৬, ১২ জানুয়ারি ২০২১
বুথ বাড়ালেই হবে না, বিনিয়োগ শিক্ষায়ও গুরুত্ব দিতে হবে: ছায়েদুর রহমান

মো. ছায়েদুর রহমান

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ)সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান। তিনি ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ। ব্যাংক-বীমা, মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউজসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রায় তিন যুগ ধরে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। রাইজিংবিডির সঙ্গে আলাপচারিতায় পুঁজিবাজারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাইজিংবিডির জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নাজমুল ইসলাম ফারুক।

রাইজিংবিডি: বর্তমান পুঁজিবাজার পরিস্থিতি নিয়ে কিছু বলুন।
মো. ছায়েদুর রহমান: পুঁজিবাজার পরিস্থিতি নিয়ে প্রথমে বলতে হয়, নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর তাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)বাজারের জন্য উল্লেখযোগ্য দক্ষতা দেখাতে পেরেছে। বিএসইসির নতুন নেতৃত্বের কাজের কথা বলে শেষ করা যাবে না। নতুন কমিশন বাজার উন্নয়নে যথেষ্ট কাজ করেছে। ফলে,  তারা বিনিয়োগকারীদের  আস্থা অর্জনেও  সক্ষম হয়েছে। যা বাজারকে ইতিবাচক ধারায় ফেরাতে সহযোগিতা করেছে।

একটু পেছনে তাকালে দেখা যাবে ২০১৯ সালের চেয়ে পুঁজিবাজারে ২০২০ সালে ২১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে প্রবৃদ্ধির দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ| এর অধিকাংশ অর্জন ২০২০ সালের শেষ দিকে। ওই সময় রিটার্নের দিক দিয়ে বিশ্ব সেরা তালিকায় নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশর পুঁজিবাজার। ২০২০ সালে বিএসইসি দুটি বড় কোম্পানিকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে বাজারে আনতে সক্ষম হয়েছে। এরমধ্যে একটি ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ।  যা বাজারের অগ্রযাত্রায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে।

রাইজিংবিডি: ২০২১ সালে পুঁজিবাজারের সম্ভাবনা নিয়ে বলুন।
মো. ছায়েদুর রহমান: ২০২০ সালে দেশের পুঁজিবাজারে যে গতি পেয়েছে, তাতে ২০২১ সালে পুঁজিবাজারে লেনদেন ৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে। একইসঙ্গে দেশের পুঁজিবাজার উল্লেখযোগ্য অবস্থানে থেকে ইতিহাস সৃষ্টি করবে বলে আশা করছি।

রাইজিংবিডি: পুঁজিবাজার হঠাৎ গতিশীল হওয়ার পেছনের কারণ কী?
মো. ছায়েদুর রহমান: পুঁজিবাজার গতিশীল হওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ আছে। এরমধ্যে ব্যাংক ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে আসার পর আমানতের সুদ হার কমেছে। ফলে ব্যাংকে টাকা না রেখে আমানতকারীরা পুঁজিবাজারে আসছে।  এছাড়া বাজেটে অপ্রদর্শিত আয়ের অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে বাজারে বিনিয়োগ বাড়ছে।

এদিকে, তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারধারণ সংক্রান্ত বিষয়টি দীর্ঘ দিন ধরেই ঝুলে ছিল। বর্তমান কমিশন তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের এককভাবে ২ শতাংশ এবং সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ারধারণের বিষয়টি পুরোপুরি আইন অনুযায়ী বাস্তবায়ন করেছে। এসব কারণে পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা দিন দিন বাড়ছে। যা বাজারকে আরও গতিশীল করতে ভূমিকা রাখবে।

রাইজিংবিডি: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কিছু কোম্পানি নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছে। সুশাসন নিশ্চিতে করণীয় কী?
মো. ছায়েদুর রহমান: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কিছু নন পারফর্মিং কোম্পানি আছে। এছাড়া কিছু কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন নিয়েও বিতর্ক আছে। যেসব কোম্পানিতে সমস্যা বা বিতর্কের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ছে, তাদের ডেকে নির্দেশনা দিচ্ছে  কমিশন। যদি কোম্পানিগুলোর কোনো সুবিধা দরকার হয়, সেক্ষেত্রেও কমিশন সহজ করে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাতে কোম্পানিগুলোতে অনিয়ম দূর করে সুশাসন নিশ্চিত করতে কাজ করছে কমিশন। এভাবে কমিশন বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করে নিচ্ছে। বাজারে আসছে বিনিয়োগকারীরা। নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ছয় মাসে যে প্রবৃদ্ধি দেখেছি, যে রিফর্ম দেখেছি, আগামী দিনে তা আরও বেগবান হবে। যার ফল বিনিয়োগকারীরা পাবেন। তার মানে বাজারে আরও উন্নয়ন হবে।  

রাইজিংবিডি: বর্তমান কমিশন দেশে-বিদেশে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর ডিজিটাল বুথ করার জন্য নীতিমালা করেছে। দুয়েকটিকে বুথ খোলার অনুমোদনও দিয়েছে। একইসঙ্গে প্রায় এক দশক পর হাউজগুলো শাখা বাড়াতে পারবে বলে নির্দেশনা দিয়েছে কমিশন। তাতে কী ধরনের সুফল বয়ে আনবে?
মো. ছায়েদুর রহমান: প্রায় এক দশক ব্রোকারেজ হাউজগুলোর শাখা বাড়ানোর বিষয়টি বন্ধ রেখেছিল বিএসইসি। এখন শাখা বাড়ানোর পাশাপাশি ডিজিটাল বুথেরও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর ফলে গ্রামে-গঞ্জে, দেশে-বিদেশের মানুষকে পুঁজিবাজার সম্পর্কে বোঝানো সম্ভব হবে। শাখা ও বুথের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের বাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বেড়ে যাবে। তবে ব্রোকারেজ হাউজের শাখা ও বুথ যত বেশি প্রসারিত হবে, তত বেশি বিনিয়োগ শিক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে। এই বিষয়েও কমিশন যথেষ্ট উদ্যোগী। বিনিয়োগ শিক্ষার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে সচেতন হবে। যার ফলে তারা বিনিয়োগে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।  

বুথ অনুমোদন দেওয়ার ফলে যেসব মানুষ বিদেশে কষ্ট করে অর্থ উপার্জন করে। কিন্তু তারা বিনিয়োগ করতে পারছে না। তাদের জন্য সহজ হবে। এতদিন যদি কোনো প্রবাসী দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে চাইতো, তাহলে তা নানা জটিল প্রক্রিয়ায় করতে হতো। এতে দেশের বাজারে বিনিয়োগের অনাগ্রহের সৃষ্টি হতো। বিদেশে বুথ হলে সহজে বিনিয়োগ করতে পারবে প্রবাসীরা। এর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে এক নতুন মাত্রা যোগ হবে।  

রাইজিংবিডি: মুজিববর্ষে পুঁজিবাজারে কী ধরনের উন্নয়ন হয়েছে? বিএসইসি কি মুজিববর্ষের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে পেরেছে?  
মো. ছায়েদুর রহমান: মুজিববর্ষের অঙ্গীকার হলো, ‘উন্নয়ন-অর্থায়নে উৎস হবে পুঁজিবাজার।’ মুজিববর্ষে অঙ্গীকার অনুযায়ী পুঁজিবাজার এগিয়ে যাচ্ছে। কোনো দেশের পুঁজিবাজার যত ভালো, সেই দেশের অর্থনীতি তত বেশি উন্নত। আমাদের পুঁজিবাজারের সঙ্গে সরকারের প্রত্যক্ষ রাজস্বের সম্পৃক্ততা আছে। যেমন, প্রতিটি লেনদেনের ওপর কর দিতে হয়, ডিভিডেন্ড ওপর কর দিতে হয়, তালিকাভুক্ত কোম্পানি কর দেয়।

বাজারের আকার যত বড় হবে, লেনদেন তত বাড়বে। একই সঙ্গে সরকার বেশি রাজস্ব পাবে। সরকার যত বেশি রাজস্ব পাবে উন্নয়নে তত বেশি উদ্যোগ নিতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেত্বেত্বের কারণে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তার নির্দেশনায় পুঁজিবাজারে উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম নেতৃত্বাধীন কমিশন। নতুন কমিশনের নেতৃত্বে মুজিববর্ষের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের পুঁজিবাজার বিশ্ব সেরা তালিকায় ইতোমধ্যে স্থান করে নিয়েছে।  

রাইজিংবিডি: সময় দেওয়ার জন‌্য আপনাকে ধন্যবাদ।
মো. ছায়েদুর রহমান: রাইজিংবিডির পাঠকদের ধন্যবাদ।

  ঢাকা/এনএফ/এনই

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়