ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

হাজার কোটি টাকা ঋণের বোঝা নিয়ে পুঁজিবাজারে এনার্জিপ্যাক

নাজমুল ইসলাম ফারুক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫৭, ১৯ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১১:০২, ১৯ জানুয়ারি ২০২১
হাজার কোটি টাকা ঋণের বোঝা নিয়ে পুঁজিবাজারে এনার্জিপ্যাক

হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণের বোঝা নিয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেড। ঋণের সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে ব্যয় বেড়ে মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কোম্পানিটির। ফলে বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ পাওয়ার সম্ভবনা কমে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এনার্জিপ্যাক পুঁজিবাজার থেকে ১৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। এরমধ্যে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করবে; যা কোম্পানির মোট ঋণের খুব কম অংশ। ঋণ পরিশোধ করার পরও বিশাল অঙ্কের ঋণের বোঝা কোম্পানির কাধেই থেকে যাচ্ছে। এই ঋণের সুদ গুনতে হবে কোম্পানিটিকে। যার ফলে ব্যয় বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যা মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

এন্যার্জিপ্যাকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হুমায়ুন রশিদ রাইজিংবিডিকে বলেন, আইপিওর অর্থ থেকে ঋণ পরিশোধ করা হবে। এর ফলে সুদের পরিমাণ  কমবে। এতে মুনাফায় ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা সুফল পাবেন বলে তিনি আশা করছেন।

প্রসপেক্টাসে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ৩০ জুন শেষে এনার্জি প্যাকের মোট ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে দীর্ঘ মেয়াদি ঋণের পরিমাণ ৮০৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা এবং স্বল্প মেয়াদি ৩২৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা। ২০১৫ সালে কোম্পানির ঋণের পরিমাণ ছিল ১০৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। গত ৫ বছরে ঋণ ১১ গুণ বেড়েছে। বিপরীত দিকে আয় ছিল খুব কম। কোম্পানিটি ২০১৯ সালের সমাপ্ত হিসাব বছরে মুনাফা করেছে ৪৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা এবং শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ৩ টাকা ১৩ পয়সা। ২০১৫ সালে মুনাফা করে ২৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা এবং ইপিএস ছিল ১ টাকা ৭৯ পয়সা। একই সময়ে কোম্পানির নানা রকম ব্যয় বেড়েছে।ি

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানি যখন পুঁজিবাজারে আসতে চায়, তখন যোগ্য বিনিয়োগকারীরা বিডিংয়ে অংশ নেয়। সেখানে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে শেয়ার দর মূল্যায়ন করা হয়। পরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর দর অতিমূল্যায়িত হলে প্রথমত দায় যোগ্য বিনিয়োগকারীদের ওপর পড়ে। যদিও সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তাই এসব শেয়ারে বিডিংয়ে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত। তাদের সতর্কতার মধ্য দিয়ে দেশের পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় সহায়ক হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, কোম্পানির সব তথ্য প্রসপেক্টাসে দেওয়া আছে। ঋণের তথ্যও সেখানে দেওয়া আছে। সব কিছু পর্যালোচনা করে যোগ্য বিনিয়োগকারীরা দরে বিডিং করে। তবে কোনো শেয়ার অতিমূল্যায়িত হলে লেনদেনে শুরুর পর প্রকৃত চিত্র ধরা পড়ে। তাই যোগ্য বিনিয়োগকারীদের আরও সচেতন হওয়া উচিত।

তিনি বলেন, অতীতে যেসব কোম্পানির শেয়ার অতিমূল্যায়িত হয়েছে, সেগুলোর চিত্র সবাই দেখেছে। তাই আইপিও অনুমোদন, বিডিংয়ের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়া উচিত।

যোগ্য বিনিয়োগকারীরা বিডিংয়ের মাধ্যমে এনার্জি প্যাকের শেয়ারের কাট-অব প্রাইস ৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সেই প্রাইস থেকে ১০ শতাংশ কমে শেয়ার পেয়েছে।

এনার্জি প্যাক পাওয়ার জেনারেশন বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ১৫০ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করেছে। সংগৃহীত মূলধন দিয়ে কোম্পানিটি এলপিজি প্রকল্পের ব্যবসা সম্প্রসারণ, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ এবং প্রাথমিক গণপ্রস্তাব খাতে ব্যয় করবে।

কোম্পানিটির ৩০ জুন ২০১৯ সমাপ্ত সমন্বিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী যথাক্রমে শেয়ার প্রতি নিট সম্পত্তি মূল্য (পুনর্মূল্যায়ন সঞ্চিতিসহ) ৪৫.১৫ টাকা ও শেয়ার প্রতি নিট সম্পত্তির মূল্য (পুনর্মূল্যায়ন সঞ্চিতি ব্যতীত) ৩০.২০ টাকা।

২০২০ সালের ৬ আগস্ট পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ৭৩৪তম সভায় কোম্পানিকে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রির জন্য নিলাম অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২১ অক্টোবর বিএসইসির ৭৪৫তম সভায় কোম্পানির আইপিও অনুমোদন দেওয়া হয়।

এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশনের ইস্যু ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেছে লঙ্কাবাংলা ইনভেস্টমেন্ট।

ঢাকা/বকুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়