ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘লকডাউনে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উপযুক্ত সময়’

নাজমুল ইসলাম ফারুক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩৭, ১২ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১৪:৪৩, ১২ এপ্রিল ২০২১
‘লকডাউনে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উপযুক্ত সময়’

ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে আবারও এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণা (১২ এপ্রিল) করে প্রজ্ঞাপন দিয়েছে সরকার।  এর আগের সপ্তাহে লকডাউনের সময় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে দেশের স্টক এক্সচেঞ্জগুলোতে সীমিত সময় লেনদেন হয়েছে।  এ সময় অনেক বিনিয়োগকারী আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করেছেন।  এটা ঠিক নয় বলে জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। 

তারা বলছেন, আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি না করে লকডাউনে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের উপযুক্ত সময় যাচ্ছে।  এতে তাতে লাভবান হবেন বিনিয়োগকারীরা।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রথম ধাপে এর ভয়াবহতা কি হবে ভেবে সবাই আতঙ্কে ছিলেন।  ওই সময় পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে করোনার প্রাদুর্ভাব কিছুটা কমলে আবার লেনদেন চালু করা হয়।  শুধু লেনদেন চালু নয়, বাজারে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এদিকে, বিশ্বব্যাপী করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে।  তা মোকাবিলায় বিশ্বের অন্যান্য দেশে সাময়িক লকডাউন শুরু হওয়ায় দেশের পুঁজিবাজার এবারও বন্ধ হয়ে যাবে বলে গুজব আগেই ছড়িয়ে পড়ে। তাতে অনেক সাধারণ বিনিয়োগকারীই আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করেন।  বিনিয়োগকারীদের ধারণা, আগের মতোই পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ হয়ে যাবে।  কিন্তু বিএসইসি বারবার সতর্ক করছে যে, ব্যাংক খোলা থাকলে পুঁজিবাজার খোলা থাকবে। সেক্ষেত্রে আতঙ্কে কেউ শেয়ার বিক্রি না করতে বলেছে কমিশন। একই সঙ্গে বাজারে লেনদেন বাড়ানোর জন্য নানা ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে বিএসইসি। তবুও আশস্ত হতে পারছে না বিনিয়োগকারীরা। ফলে তাদের বিক্রির চাপে মাঝে মধ্যে বাজারে বড় ধরনের দরপতন হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি নয় বরং এখনই উপযুক্ত সময় দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক রকিবুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, লকডাউনে আতঙ্কের কিছু নেই বরং এখনই দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের উপযুক্ত সময়।

তিনি বলেন, এই মুহূর্তে অনেকে আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ার কারণে বেশকিছু মৌলভিত্তি সম্পন্ন শেয়ারের দামও অনেক নিচে নেমে গেছে।  তাই ট্রেডিং না করে পুঁজিবাজারে এখনই বিনিয়োগ করার সময় যাচ্ছে।  কমপক্ষে এক বছরের জন্য হলেও বিনিয়োগ করা উচিত।  তাতে ভালো মুনাফা অর্জন করা সম্ভব।

তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ কিন্তু ভালো মৌলভিত্তি শেয়ারে করা উচিত। বিশেষ করে অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে যেসব কোম্পানির অবস্থা মজবুত তাদের শেয়ারে বিনিয়োগ করলে আশানুরূপ গেইন করা সম্ভব।  এ ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসতে পারে। কারণ তাদের অ্যানালাইসিসের আলাদা উইং রয়েছে। তারা যদি বাজারে ভালো মৌলভিত্তি সম্পন্ন শেয়ারে বিনিয়োগ করেন তাহলে বাজার টেকসই হবে। 

পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ, ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্টব্যাংকসহ ট্রেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, যারা ট্রেডার তারা চায় স্বল্প সময়ে অতিরিক্ত মুনাফা। আসলে কিছু নিয়মানুযায়ী পুঁজিবাজার থেকে গেইন করতে হবে।  এর মধ্যে অন্যতম হলো- কোনো শেয়ারে বিনিয়োগের পূর্বে সেটা ভালো করে অ্যানালাইসিস করা। যদি ভালো অ্যানালাইসি করে মৌল ভিত্তি শেয়ারে বিনিয়োগ করা যায় তাহলে গেইন নিশ্চিত। সেক্ষেত্রে ন্যূনতম এক বছরের জন্য বিনিয়োগ করা উচিত। কিন্তু ট্রেডাররা শেয়ার ক্রয় করার পর উপযুক্ত হলেই বিক্রির জন্য তাড়াহুড়া করে। ফলে বাজারে বড় ধরনের দরপতন হয়।

তারা বলছেন, বিশ্বব্যাপী যখন প্রথম ধাপে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে তখন অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে।  আমারা ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।  ফের করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। যদি বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতির ক্ষতি হয় তাহলে পুঁজিবাজারেরও ক্ষতি হবে। এ সময় যাদের অর্থ আছে তারা শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করতে পারে।

পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি যখন অর্থনীতিতে আঘাত হানে তখন পুঁজিবাজারের কিছু না কিছু ক্ষতি হয়েছে।  ফের দ্বিতীয় ধাপে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। এতে অর্থনীতির ক্ষতি হলে পুঁজিবাজারের ক্ষতি হবে।  এ সময় যাদের অর্থ আছে তারা ইচ্ছা করলে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ পুঁজিবাজারে করতে পারে।

এনএফ/এসবি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়