ব্যাংকে বাড়ছে ভিড়, চলছে বড় লেনদেনও
করোনা সংক্রমণ রোধে বুধবার (১৪ এপ্রিল) থেকে এক সপ্তাহের জন্য সর্বাত্মক লকডাউনে যাচ্ছে দেশ। এ সময় বন্ধ থাকবে দেশের সব ব্যাংক। সোমবার (১২ এপ্রিল) এই সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে, লকডাউন চলার সময় উৎপাদনমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে। এতে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিতে মঙ্গলবার সাধারণ গ্রাহকদের উপচেপড়া দেখা গেছে। সঙ্গে ছিল বড় অঙ্কের লেনদেনও।
মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিল, দিলকুশা, দৈনিক বাংলা ব্যাংক পাড়ায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সরকারি-বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, অনেকেই ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। এছাড়া, এটিএম বুথগুলোতে গ্রাহকদের ভোগান্তি হওয়ার আশঙ্কায় কেউ কেউ মঙ্গলবার টাকা তুলতে ব্যাংকে ভিড় করেছেন। এসব কারণে অন্যান্য দিনের তুলনায় ব্যাংকের গ্রাহকদের ভিড় বেশি। করোনা সংক্রমণের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এ ভিড় সামাল দিতেও কর্মকর্তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ফরেন এক্সচেঞ্জ করপোরেট শাখার এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট একেএম কাউছার আলম বলেন, ‘লকডাউনে ব্যাংক বন্ধ থাকবে। এজন্য স্বাভাবিকভাবে অন্যান্য দিনের চেয়ে গ্রাহকদের চাপ বেড়েছে। অনেক গ্রাহকই জানতেন না যে, আজ ৩ টা পর্যন্ত লেনদেন চলবে। ব্যাংক খোলা থাকবে ৫ টা পর্যন্ত। তাই সকাল থেকে অনেক বেশি ভিড় লক্ষ করা গেছে। তবে, যারা ব্যাংকে আসছেন, তাদের মধ্যে টাকা জমা দেওয়ার চেয়ে তুলতে আসা গ্রাহকের সংখ্যাই বেশি।’
ব্যাংকপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে কোনো গ্রাহক ব্যাংকের প্রবেশ করতে পারছেন না। ব্যাংকের প্রবেশ পথে নিরাপত্তাকর্মীদের জীবাণুনাশক স্প্রে করতে দেখা গেছে।
জনতা ব্যাংক লোকাল অফিসের ক্যাশ কাউন্টারের কর্মরত একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘কাল থেকে ব্যাংক বন্ধ। তাই টানা ৩ টা পর্যন্ত সেবা দিয়ে যেতে হবে।’
এ ব্যাংকে একাধিক গ্রাহকদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, এটিএম বুথে প্রায় সময়ই টাকা না থাকায় ব্যাংক বন্ধ থাকলে লেনদেন করতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এছাড়া রোজা শুরু হয়ে যাচ্ছে লকডাউনের শুরুতে। তাই অধিকাংশ গ্রাহক ব্যাংকের এসেছেন টাকা উত্তোলন করতে।
জনতা ব্যাংকে টাকা উত্তোলন করতে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন হাবিবুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘রোজার মধ্যেই লকডাউন শুরু হয়ে গেলো। ঈদের আগে অফিস আদালত বা ব্যাংক খুলবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে আছি। তাই পরিবারের খরচ মেটাতে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি টাকা তুলতে এসেছি। যে টাকা ব্যাংক থেকে তোলা সহজ, সেটা তো আর এটিএম বুথ থেকে তুলতে পারবো না।’
ডাচ-বাংলা ব্যাংকের লোকাল শাখার ডেপুটি ম্যানেজার মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী আজকে ব্যাংকে লেনদেন ৩ টা পর্যন্ত চলবে। যারা শিল্প কারখানার জন্য টাকা তুলবেন, তারা সকাল থেকে আমাদের ফোন দিচ্ছেন। আমরা তাদের বলেছি, চিন্তার কোনো কারণ নেই। ব্যাংক গ্রাহকদের সুবিধার্থে ৩ টা পর্যন্ত খোলা আছে। আপনারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে টাকা তোলাসহ ব্যাংকের আনুষঙ্গিক সেবা নিতে পারবেন। তবে, হঠাৎ ব্যাংক বন্ধের ঘোষণা গ্রাহকদের চাপ সামলাতে কর্মকর্তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, এবারের লকডাউনে প্রথমবারের মতো ব্যাংক বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফলে মঙ্গলবার ব্যাংক ৩ টা পর্যন্ত খোলা রাখার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বড় ধরনের ভিড় সামলাতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ঢাকা/এনএফ/এনটি/এনই/
আরো পড়ুন