ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

রোজায় নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৬, ১৭ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১৫:৩২, ১৭ এপ্রিল ২০২১
রোজায় নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীন

বাজারে ভোজ্য তেল, ছোলা, পেঁয়াজ, মসুর ডাল, চিনি, লবনসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দর লাগামহীনভাবে বেড়েছে। দামের উর্ধ্বগতি ছিল রোজার আগেই,  রোজা শুরু হতে না হতেই সপ্তাহের ব্যবধানে এসব পণ্যের দর আরোও বেড়েছে।

দর বাড়ার দায় যেন কারোরই নেই, সব তরফেই মিলছে কৌশলী উত্তর। তবে ব্যবসায়িরা এসব পণ্য থেকে ঠিকই অধিক মুনাফা করছেন, বিপরীতে ভোক্তারাই পড়েছেন বিপাকে।

শনিবার (১৭ এপ্রিল) রাজধানীর শনির আখড়া, যাত্রাবাড়ী, কাপ্তানবাজার এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা যায়- সয়াবিন তেল প্রতি লিটার (লুজ) বিক্রি হচ্ছে ১২০-১২৫ টাকায়। ৫ লিটার বোতল ৬৪০-৬৬০ টাকায় এবং ১ লিটার বোতল ১৩৫-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে প্রতিকেজি আলু ২০-২৫ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৩৮-৪৫ টাকা, আমদানি করা পেঁয়াজ ৩২-৩৫ টাকা, দেশি রসুন ৮০-৯০ টাকা, আমদানি করা রসুন ১১০ -১২০ টাকা,  বড় দানার মসুর ডাল ৭২-৭৫ টাকা, মাঝারি দানার মসুর ডাল ৮৫-৯৫ টাকা, ছোট দানার মসুর ডাল ১১০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এসব পণ্যের দর রোজার আগেই কয়েক দফা বেড়েছে। রোজা শুরু হওয়ার পরও আরেক দফা বেড়েছে।

শনির আখড়া বাজারে ভাই ভাই ট্রেডার্স মুদিদোকানে ক্রেতা মনির হোসেনের সঙ্গে কথা হয় । একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এই ক্রেতা বলেন, ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি ডজন ৮৫ টাকায় রোজার এক সপ্তাহ আগে কিনেছি। আজ (শনিবার) তা কিনলাম ৯০ টাকায়। আলু কিনেছিলাম প্রতিকেজি ১৭ টাকায়, আজ কিনলাম ২২ টাকায়। সয়াবিন তেলের কথা তো বাদই দিলাম। রোজার আগে কয়েক দফা বেড়েছে তেলের দাম। অথচ কেউ কিছু বলছে না। আসলে যাদের অর্থ আছে তারা তো মধ্যবিত্ত বা গরিব মানুষের কথা ভাবার প্রয়োজন মনে করে না।  

তিনি বলেন, দেশের লকডাউন চলছে। আমি যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি তা খোলা আছে। লকডাউনে যাতায়াত খরচ বাড়ছে, অন্যদিকে নিত্যপণ্য বেশি দরে কিনতে হচ্ছে। এসব খরচ যে হারে বাড়ছে সেভাবে তো আমার বেতন বাড়ছে না। তাতে সীমিত বেতনে চলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) দৈনিক বাজার দর মনিটরিং করে। টিসিবির হিসাব মতে, গেলো এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেশ কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। এ সময়ে বোতলের সয়াবিন তেল, শুকনা মরিচ, দেশি পেঁয়াজ, দেশি রসুন, আদা, দেশি হলুদ, ডিম, মসুর ডাল, গুড়া দুধের দাম বেড়েছে।

টিসিবির হিসাব মতে, গত এক বছরে ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪৫ শতাংশ।

কাপ্তানবাজারের শরীয়তপুর এন্টারপ্রাইজ শুধু ভোজ্য তেল বেচাকেনা করেন। প্রতিষ্ঠানটির মালিক হাজী আব্দুল জব্বার রাইজিংবিডিকে বলেন, তেলের ব্যবসা করি গত ৩০ বছর ধরে। গত এক বছর যে হারে তেলের দাম বেড়েছে তেমন পরিস্থিতি আমার ব্যবসার জীবনে দেখিনি। আমার প্রতিষ্ঠানে তেল মজুদের ক্ষুদ্র লিমিট আছে। কিন্তু অনেক ব্যবসায়ী লিমিট ছাড়া তেল মজুদ করেছে দাম বাড়বে বলে। তারা দাম বাড়ার পর অতিরিক্ত দামে তেল বিক্রি করেছে। আর আমি চেষ্টা করেছি যে তেল কেনা হয়েছে কম দামে, তা যেন কোনো কাস্টমারের নিকট বেশি দামে না বেচা হয়। আমি যখন বেশি দরে কিনেছি তখন তা সমন্বয় করে বিক্রি করেছি।  

বাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে টিসিবি ট্রাকে করে পণ্য বিক্রি করে। এবারও রোজার আগেরই সারা দেশে টিসিবির ৫০০টি ট্রাক উন্মুক্ত স্থানে মালামাল বিক্রি করছে। শুধুমাত্র ঢাকা মহানগরীতেই ১০০টি স্পটে ট্রাক সেল করছে টিসিবি।

টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির রাইজিংবিডিকে বলেন, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্যের যোগান দিতে টিসিবি রোজার আগে থেকে ট্রাক সেল কার্যক্রম শুরু করেছে। ট্রাকগুলোতে সয়াবিন তেল, ডাল, পেঁয়াজ, খেজুর পাওয়া যায়। এতে বাজার কিছুটা হলেও স্থিতিশীল থাকবে।  

বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং টিমের সঙ্গে আছেন এমন একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাইজিংবিডিকে বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে কিছু জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে তা ঠিক। বিপরীত দিকে কিছু ব্যবসায়ির টার্গেট থাকে রোজার আগে বাড়তি দামে বিক্রি করবে। এসব ব্যবসায়িরা মালামাল মজুদ করে অনেক আগে থেকেই। শুধু রোজা আসার আগেই তাদের মনিটরিং জোরদার করে লাভ হচ্ছে না। তবে সারা বছর যদি সফটওয়্যার বা অ্যাপসের মাধ্যমে হিসাব দেওয়া বাধ্যতামূলক করা যেতো তাহলে ব্যবসায়িরা অসৎ উদ্দেশ্য সাধন করার সুযোগ পেতো না।

দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা পূর্বাভাস সেলের বাণিজ্য পরামর্শক মো. জিয়াউর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, আসলে কিছু জিনিসের দর বাড়ার কোনো কারণ নাই। হুজুগে যখন সবাই কিনতে যায় তখন ব্যবসায়িরা দাম বাড়িয়ে দেয়। তাই হুজুগে বেশি পণ্য না কিনলেই দাম অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

তার দাবি. বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং টিম নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছে। যদি কোনো জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে।

ঢাকা/এনএফ/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়