ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

দীর্ঘমেয়াদি লকডাউনে উৎপাদনশীল শিল্পে বিরূপ প্রভাব পড়বে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৩৬, ২২ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ০২:৫৬, ২২ এপ্রিল ২০২১
দীর্ঘমেয়াদি লকডাউনে উৎপাদনশীল শিল্পে বিরূপ প্রভাব পড়বে

 বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ফলে দেশে চলছে দ্বিতীয় দফার ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন। তবে গেল বছরের মতো (২০২০) এবারের লকডাউনে বস্ত্র খাতের গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ রাখা হয়নি। চলছে উৎপাদন কার্যক্রম। মালিকদের দাবির প্রেক্ষিতে সরকার এই সুবিধা দিলেও লকডউনের সময়সীমা বাড়লে এসব শিল্পের সার্বিক কার্যক্রমে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন ব্যবসায়ী নেতা ও বিশ্লেষকরা।

বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের রপ্তানি হারিয়েছে তৈরি পোশাক খাত। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় রপ্তানি হারিয়েছে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ।

করোনা মোকাবেলায় সারা বিশ্ব জুড়ে গৃহীত লকডাউন পদক্ষেপের কারণে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই পোশাকের খুচরা বিক্রয়ে ঋণাত্মক ধারা অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে ইউরোপে খুচরা বিক্রয় কমেছে ২৮ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে কমেছে ১৬ শতাংশ।

দীর্ঘমেয়াদি লকডাউনের প্রভাব সম্পর্কে রাইজিংবিডির সঙ্গে আলাপ করেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান। তার মতে, পর্যায়ক্রমে লকডাউনের সময় বাড়তে থাকেল তা শিল্প ও অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব তৈরি করবে।

তিনি বলেন, ‘যেটা বলবো, এই সময়ে সরা দুনিয়ায় করোনার সংক্রমণ বেড়ে গেছে। অনেকে দেশের মতো আমাদের দেশেও বেড়েছে। এর প্রতিকারে সরকার লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদেরও সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। আমাদের সচেতনতা আরও বাড়াতে হবে।

ফারুক হাসান বলেন, ‘এটা সত্য আমাদের কারখানাগুলো জীবন-জীবিকার কথা বিবেচনা করে খোলা রাখা হয়েছে। এটি একটি ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বছর শ্রমিকরা শ্রমঘন এলাকায় রয়েছ। যেসব কারখানা খোলা রয়েছে তাদের মধ্যে সংক্রমণের তথ্য এখন পর্যন্ত নাই। আর শ্রমিকরা যদি গ্রাম-গঞ্জে চলে যেতেন, তাহলে হয়তো বিভিন্ন অঞ্চলে চলাচলের কারণে সংক্রমণ হতো। আবার ঢাকায় ফিরলে কারখানাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতো।  অন্তত এ বছর তেমটি আপাতত হচ্ছে না।

তবে দীর্ঘমেয়াদে এই লকডাউন অব্যহত রাখা যাবে না। কারণ, আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব সংক্রমণ কমে আসে এবং আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত যেই সময় সীমা দিয়েছে, তারপরে আর যেন লকডাউন না হয়। সেই বিষয়ে আমাদেরও সচেতন হতে হবে। আলাপে যুক্ত করেন ফারুক হাসান।

তিন বলেন, ‘সব সময় সরকারের উপর নির্ভরশীল হলে হবে না। আমাদেরও সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। অনেকে ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ঠিকমত মাস্ক পরা হচ্ছে না। বিনা কারণে বাজারে যাচ্ছি, আড্ডা দিচ্ছি। আসলে এসব নিয়ন্ত্রণে সরকারের থেকে আমাদের (জনগণের) বেশি দায়িত্ব রয়েছে। আমাদেরকে সচেতন হতে হবে।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘দেখুন ২৮ তারিখেরে পরে (এপ্রিল) যদি এই লকডাউন আরও সময় বাড়ে তাহলে কিন্তু অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাচাঁমালের সমস্যা দেখা দিবে। বিশেষ করে সংযোগ শিল্পের (লিংকেজ) ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হবে। আমাদের সঙ্গে যেসব সহযোগি বা লিংকেজ কারখানা এবং সরকারি-বেসরকারি অফিস রয়েছে তা বন্ধ থাকলে তো আমাদের কারখানা চলবে না।

আমি মনে করি, ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত সরকার যেভাবে আমাদের চলাফেরা এবং সচেতনার মাধ্যমে থাকতে বলেছে আমরা যেন সেইভাবে থাকি। লকডাউনের ওপর নির্ভর করছে আমরা সংক্রমণটা কতটুকু কমাতে পারি। যদি না কমে, তাহলে সরকার বাধ্য হয়ে এর সময় বাড়াবে। তাই এই পরিস্থিতি যাতে না হয় সেটাই আশা করবো। পর্যায়ক্রমে লকডাউনের সময় বাড়তে থাকেল তা আমাদের শিল্প তথা অর্থনীতিতে বিরূপ ফেলবে।
 
অন্যদিকে, অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ তার এক মন্তব্য জানিয়েছেন, ধনী দেশগুলোর পক্ষে লকডাউন কার্যকর করা সম্ভব। কিন্তু স্বল্প আয়ের দেশে লকডাউন কার্যকর করা কঠিন।

তাই স্বল্পোন্নত দেশে লকডাউন দিয়ে দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানো যাবে না। করোনার কারণে শিক্ষায় যে ধনী-দরিদ্র বৈষম্য তৈরি হয়েছে তাতে ভবিষ্যৎ আয়-বৈষম্য আরো বাড়তে পারে। লকডাউন ধনী-বান্ধব, দরিদ্রবান্ধব নয়। সরাসরি খাদ্য সহায়তা দিয়ে অতি দরিদ্রদের হয়তো বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব, কিন্তু ছোট ছোট শিল্প উদ্যোগগুলো ধ্বংস হলে সেগুলো আবার গড়ে তোলা মুশকিল।

জীবন-জীবিকার সমন্বয়ে বাঁচতে হলে ভাবতে হবে, এখনই নিতে হবে অন্তত এক বছরের সার্বিক পরিকল্পনা। নয়তো বারবার লকডাউনের অপচয়ে পড়ে অর্থনৈতিক ক্ষতির বোঝা বাড়বে।

শিশির/আমিনুল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়