ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

অ্যাপেক্স ওয়েভিংয়ের পুনর্গঠন, আশার আলো দেখছেন বিনিয়োগকারীরা

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:২৮, ২৯ এপ্রিল ২০২১  
অ্যাপেক্স ওয়েভিংয়ের পুনর্গঠন, আশার আলো দেখছেন  বিনিয়োগকারীরা

দীর্ঘ ১১ বছর ধরে শেয়ারবাজারে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে অবস্থানরত দুর্বল কোম্পানি অ্যাপেক্স ওয়েভিং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলসের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে কোম্পানিটিতে ৫ জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে কমিশন। এর ফলে ১১ বছর পর কোম্পানিতে আটকে থাকা বিনিয়োগ ফিরে পাওয়ার আশার আলো দেখছে করেছেন বিনিয়োগকারীরা।

অ্যাপেক্স ওয়েভিংয়ের পুনর্গঠিত পর্ষদে বিএসইসির মনোনীত স্বতন্ত্র পরিচালকরা হলেন সাবেক সচিব ড. অপরূপ চৌধুরী, ড. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইসতার মাহেল ও সাবেক ব্যাংকার মো. গোলাম সরোয়ার।

এছাড়া, ন্যূনতম দুই জন বা তার বেশি শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মনোনয়নের জন্য কোম্পানিকে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।

সম্প্রতি অ্যাপেক্স ওয়েভিংয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ অন্য পরিচালকদের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়েছে বিএসইসি। একইসঙ্গে বিষয়টি ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ ও সেন্ট্রার ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) জানানো হয়েছে।

এই সিদ্ধান্তের ফলে কোম্পানিটি ভবিষ্যতে আর্থিকভাবে আরও শক্তিশালী হবে। নতুন স্বতন্ত্র পরিচালক ও  শেয়ারহোল্ডার পরিচালকরা কোম্পানির আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে কাজ করবেন। কোম্পানিটি গতি ফিলে পেলে বিনিয়োগকারীরা তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে মনে করছে কমিশন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ  বলেন, ‘পুঁজিবাজারে উন্নয়ন ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনা করে বিভিন্ন দুর্বল কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। বর্তমানে উৎপাদন কার্যক্রম নেই, এমন কোম্পানিগুলোতেও পর্যায়ক্রমে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে।’

তথ্য মতে, ১৯৯৫ সালে অ্যাপেক্স ওয়েভিং দেশের স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ার ছেড়ে শেয়ারবাজার থেকে ২৬ কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজার সংগ্রহ করে। পরবর্তী সময়ে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের নিয়মিত লভ্যাংশ না দেওয়ায় ২০০৯ সালের ওটিসি মার্কেটে স্থানান্তরিত হয়। এরপর দীর্ঘ ১১ বছরের বেশি সময় ধরে কোম্পানিটির ব্যবসায়িক কার্যক্রমে উন্নতি হয়নি। স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত থাকার পরও সিকিউরিটিজ আইন যথাযথভাবে পরিপালন করছে না কোম্পানিটি। বরং প্রতিনিয়তই আইন লঙ্ঘন করে যাচ্ছে। দীর্ষ এ সময়ের মধ্যে আর্থিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ার পেছনে কোম্পানিটির স্বতন্ত্র পরিচালকসহ পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের ব্যর্থতা রয়েছে বলে মনে করে বিএসইসি।

এদিকে কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের দীর্ঘদিন ধরে নগদ লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। পাশাপাশি কোম্পানিটি স্টক এক্সচেঞ্জের লিস্টিং রেগুলেশন ও সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত দাখিল করতে ব্যর্থ হয়েছে। উদ্যোক্ত ও পরিচালকদের ব্যর্থতার কারণে কোম্পানিটির কাঙ্ক্ষিত উন্নতি লাভ করেনি বলে মনে করে কমিশন। এ কারণে কোম্পানিটির ৭৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ শেয়ারধারণ করা বিনিয়োগকারীরা গত ২১ বছরে কোনো ধরনের মুনাফা (রিটার্ন) পাননি। বরং বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ হারিয়েছেন। এটা বিনিয়োগকারীদের জন্য ক্ষতিকর ও কমিশনের কাছে অপ্রত্যাশিত।

এরই ধরাবাহিকতায় কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিএসইসি কর্তৃক মনোনীত স্বতন্ত্র পরিচালক ছাড়াও অ্যাপেক্স ওয়েভিংয়ের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের নির্দেশনা পরিপালনের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে থেকে নূন্যতম ২ শতাংশ বা তার অধিক শেয়ার ধারণকারীদের নিয়ে পর্ষদ পুনর্গঠন করতে হবে। সেক্ষেত্রে শেয়ারহোল্ডার পরিচালকের সংখ্যা ন্যূনতম দুই জন বা তার অধিক হতে পারবে।

অ্যাপেক্স ওয়েভিংয়ের পুনর্গঠিত কমিটি স্টক এক্সচেঞ্জের এসএমই প্ল্যাটফর্মে লেননেদেন শুরু করা জন্য প্রয়োজন পদক্ষেপ নেবে। প্রয়োজনবোধে এসএমই প্ল্যাটফর্ম থেকে তহবিল সংগ্রহ করার জন্য প্রস্তাব দিতে পারে। পুনর্গঠিত পর্ষদ কমিশনের অনুমোদন ছাড়া কোম্পানির কোনো সম্পদ বিক্রি, হস্তান্তর বা নিষ্পত্তি করতে পারবে না। একইসঙ্গে তারা ঋণ বা অন্য কোনো দায়ের জন্য ব্যক্তিগত গ্যারান্টি দেবেন না। তারা এসব কোম্পানির জন্য ঋণখেলাপি হবেন না।

এছাড়া, সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ না হওয়া পর্যন্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ার অবরোধমুক্ত রাখা হবে। আলোচ্য বিষয়গুলো পরিপালন সাপেক্ষে পুনর্গঠিত পর্ষদকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে বিএসইসিতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

এদিকে অ্যাপেক্স ওয়েভিং কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রন্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ, ২০২১) কোম্পানিটির কর পরবর্তী লোকসান হয়েছে ১ কোটি ৬১ লাখ ২০ হাজার টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির কর পরবর্তী লোকসান ছিল ৩ কোটি ১৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তৃতীয় প্রন্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ০ দশমিক ৪১ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ০ দশমিক ৮২ টাকা।

এদিকে তিন প্রান্তিক মিলে অর্থাৎ ৯ মাসে (জালাই, ২০২০-মার্চ, ২০২১) কোম্পানিটির কর পরবর্তী লোকসান হয়েছে ২ কোটি ১৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির কর পরবর্তী লোকসান ছিল ৩ কোটি ৫২ লাখ ৯০ হাজার টাকা। ৯ মাসে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ০ দশমিক ৫৭ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ০ দশমিক ৯১ টাকা।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাপেক্স ওয়েভিংয়ের কোম্পানি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘অ্যাপেক্স ওয়েভিংয়ের পরিচালনা পর্ষদকে পুনর্গঠন করার তথ্য আমার জানা নেই। এই সংক্রান্ত কোনো চিঠি এখনো হাতে পাইনি।’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা অধিকাংশ বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আমিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এ কোম্পানিতে এখনো আমার কিছু টাকা আটকে আছে। কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করায় কমিশনকে সাধুবাদ জানাই। কমিশনের এ সিদ্ধান্তে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশা সঞ্চর হবে। কিছুটা হলেও তারা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।’

প্রসঙ্গত, অ্যাপেক্স ওয়েভিংয়ের মোট শেয়ারের সংখ্যা ৩ কোটি ৮৮ লাখ ৫০ হাজারটি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে ২৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হতে ২৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ০ দশমিক ১ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৫২ দশমিক ২১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ ৫ দশমিক ১০ টাকায় লেনদেন হয়েছে।

ঢাকা/এনটি/এনই/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়