ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘পরিবেশবান্ধব, এনার্জি এফিসিয়েন্ট পণ্য উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে হবে’

এম মাহফুজুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১০, ২৫ মে ২০২১  
‘পরিবেশবান্ধব, এনার্জি এফিসিয়েন্ট পণ্য উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে হবে’

‘বাড়ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা। দূষিত হচ্ছে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ও পরিবেশ। পরিবেশে নানা ক্ষতিকর প্রভাবক বা উপাদানের উপস্থিতির কারণে মানবদেহে বাসা বাঁধছে বিভিন্ন রোগ। এসব বিবেচনায় রেখে হোম অ্যাপ্লায়েন্সসহ সব ধরনের পণ্য উৎপাদনে পরিবেশবান্ধব ও এনার্জি এফিসিয়েন্ট পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের চাহিদার পাশাপাশি বাড়ছে উৎপাদনও। পরিবেশবান্ধব ও এনার্জি এফিসিয়েন্ট পণ্য উৎপাদন হলে পরিবেশের ওপর যেমন ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে না, তেমনই উপকৃত হবেন ক্রেতারা। ক্রেতাদের উচিৎ বাছাই করে পরিবেশবান্ধব ও এনার্জি এফিসিয়েন্ট পণ্য কেনা।’

মঙ্গলবার (২৫ মে, ২০২১) ‘গ্রোইং ডিমান্ড অব এসি: এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্টস অ‌্যান্ড এনার্জি এফিসিয়েন্সি আসপেক্ট’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেছেন বক্তারা। এ ওয়েবিনার আয়োজন করে ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটনের এয়ার কন্ডিশনার বিভাগ। এসি বিভাগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচারিত হয় অনুষ্ঠানটি।

ওয়েবিনারে প্যানেল আলোচক ছিলেন—বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিধি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি) এবং টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. অলোক কুমার মজুমদার, দেশের পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বিএসটিআইয়ের পরিচালক (সিএম) সাজ্জাদুল বারী, ওয়ালটন এসির চিফ টেকনিক্যাল অফিসার (সিটিও) ওয়াল্টার কিম, করপোরেট সেলস বিভাগের প্রধান সিরাজুল ইসলাম, এসির সিওও প্রকৌশলী সন্দ্বীপ বিশ্বাস, ওয়ালটনের কমার্সিয়াল এসি আরঅ‌্যান্ডডি প্রধান প্রকৌশলী শামিম আক্তার মুগ্ধ এবং নাসদাত-ইউটিএস ল্যাব ম্যানেজার প্রকৌশলী গোলাম কাওসায়েন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ওয়ালটন এসি সার্ভিস ডেভেলপমেন্টের প্রধান প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান।

অতিরিক্ত সচিব মো. আলাউদ্দিন ওয়েবিনারে বলেন, ‘পৃথিবীর তাপামাত্রা বাড়ছে প্রতিনিয়ত, যা পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর ও উদ্বেগজনক। পণ্য উৎপাদন, ব্যবহার ও মেইনটেনেন্সে বাড়ছে বিদ্যুতের ব্যবহার। পাশাপাশি ব্যবহৃত হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষতিকর গ্যাস। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ওজন স্তর। তাই পণ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনায় পরিবেশের ক্ষতিকর দিকটি গুরুত্বসহ বিবেচনা করতে হবে। উৎপাদিত পণ্যটি যাতে এনার্জি এফিসিয়েন্ট হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। পণ্য বিক্রির পরে ক্রেতাকে সার্ভিস দেওয়ার বিষয়েও গুরুত্ব দিতে হবে।’

ড. অলোক কুমার মজুমদার বলেন, ‘জনসংখ্যা বাড়ছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েক বছরের মাথায় ঢাকা শহরের তাপমাত্রা ১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। তাই ইলেকট্রনিক্স পণ্য বিশেষ করে এসির চাহিদা বাড়ছে যুক্তিযুক্তভাবে। নগরায়ন প্রক্রিয়াও বাড়াচ্ছে নানা পণ্যের চাহিদা।’

তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তি যেমন আমাদের জন্য আশীর্বাদ, তেমনই এর নেতিবাচক দিকও আছে। বাসা-বাড়িতে প্রতিদিন শুধু কুলিং পারপাজেই প্রচুর ইলেকট্রিসিটি ব্যবহার করছি। এতে কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন হচ্ছে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। যত কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপাদন হচ্ছে, ততই বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে। তা ক্যান্সারের মতো রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী।’

বুয়েটের এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তে লাখ লাখ এসি ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু ১০-২০ বছর পর সেগুলো বর্জ্যে পরিণত হবে। পরিবেশের জন্য এগুলোও বড় বোঝা। এই বর্জ্য কীভাবে ম্যানেজ করা হবে, সেটাও আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে। সিএফসিসহ অন্যান্য ক্ষতিকর গ্যাসের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। এর পরিবর্তে হাইড্রোকার্বন গ্যাস ব্যবহার করা যেতে পারে, যা পরিবেশবান্ধব। হোম আ্যপ্লায়েন্সসহ সব পণ্যই এনার্জি এফিসিয়েন্ট করে তৈরি করতে হবে। প্রোডাক্ট এনার্জি এফিসিয়েন্ট কি না, পরিবেশবান্ধব কি না, মান ভালো কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে। অনেক পণ্যের ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, এটি এনার্জি এফিসিয়েন্ট। কিন্তু ওই পণ্যটা দুই দিন পরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এনার্জি এফিসিয়েন্ট পণ্যের দাম বেশি হবে। কিন্তু যেগুলো এনার্জি এফিসিয়েন্ট না, সেগুলোর দাম কম। সেক্ষেত্রে মার্কেটে একটা সমস্যা তৈরি হবে। তাই এসবের মধ্যে একটা সমন্বয় থাকতে হবে। তা নীতিনির্ধারকদের ঠিক করতে হবে।’

বিএসটিআইয়ের পরিচালক সাজ্জাদুল বারী বলেন, ‘ওয়ালটন বিএসটিআইতে মান যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ভালো অবস্থানে আছে। আমদানিকৃত পণ্যগুলোর ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায়, এনার্জি এফিসিয়েন্ট খুবই নিম্ন লেভেলের। কারণ, বিদেশের পণ্যগুলো দেশের বাজারে বিক্রির আগে বিএসটিআই থেকে মান যাচাই করা হয় না। এ বিষয়টি মনিটর করা হবে। বিএসটিআই থেকে এখন পর্যন্ত ৯টি প্রতিষ্ঠানের ১১টি ব্র্যান্ডকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। আরও ৭টি ব্র্যান্ড পাইপলাইনে আছে।’

জানা গেছে, এনার্জি এফিসিয়েন্ট ওয়ালটন এসি আইএসও-১৭০২৫ অনুসারে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড কর্তৃক স্বীকৃত আন্তর্জাতিকমানের টেস্টিং ল্যাব নাসদাত-ইউটিএস থেকে মান নিয়ন্ত্রণ সনদ পাওয়ার পর বাজারজাত করা হয়। শ্রেষ্ঠত্বের আত্মবিশ্বাসে তাই এসিতে এক বছরের রিপ্লেসমেন্টের পাশাপাশি ইনভার্টার এসির কম্প্রেসরে ১০ বছর পর্যন্ত গ্যারান্টি সুবিধা দিচ্ছে ওয়ালটন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে ওয়ালটন এসি।

এ বছর ভয়েস কমান্ড, আয়োনাইজার, অ‌্যান্টি ভাইরাল, ফ্রস্ট ক্লিনের মতো অত্যাধুনিক ফিচারসমৃদ্ধ নতুন মডেলের ইনভার্টার এসি বাজারে ছেড়েছে ওয়ালটন। এসব এসিতে রয়েছে আকর্ষণীয় ক্যাশব্যাক ও ছাড়ের সুবিধা। ক্রেতারা ঘরে বসে ফোন করলেই কাছাকাছি প্লাজা অথবা ডিস্ট্রিবিউটর শোরুম থেকে ক্যাশ অন ডেলিভারি সুবিধায় ওয়ালটন পণ্য পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

চলমান ডিজিটাল ক্যাম্পেইন সিজন-১১ এর আওতায় ওয়ালটন এসি ক্রেতাদের জন্য থাকছে ডিপ ফ্রিজ ফ্রি পাওয়ার সুযোগ। আছে নিশ্চিত ক্যাশব্যাক সুবিধা। চলছে ‘এসি এক্সচেঞ্জ অফার’। এর আওতায় যেকোনো ব্র্যান্ডের পুরনো এসি জমা দিয়ে গ্রাহক তার পছন্দকৃত নতুন ওয়ালটন এসির মূল্য থেকে ২৫ শতাংশ ছাড় পাচ্ছেন।

করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে ঘরের সুরক্ষায় ডুয়েল ডিফেন্ডার, আয়োনাইজার, ইউভি (আল্ট্রা ভায়োলেট) কেয়ার প্রযুক্তি-সম্বলিত এসি বাজারে ছেড়েছে ওয়ালটন। স্থানীয় বাজারে এ বছর ইউরোপিয়ান ডিজাইনের অত্যাধুনিক ফিচারের ১, ১.৫ ও ২ টনের নতুন মডেলের স্প্লিট টাইপ এসি ছেড়েছে ওয়ালটন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎসাশ্রয়ী হচ্ছে ইনভার্টার প্রযুক্তির সুপারসেভার ইনভার্না এসি। এক টনের ইনভার্না এসিতে ইকো-মুডে প্রতি ঘণ্টায় বিদ্যুৎ খরচ মাত্র ২ টাকা ৮৮ পয়সা। যা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েট কর্তৃক সার্টিফায়েড।

প্রকৌশলীরা জানান, পরিবেশবান্ধব ইনভার্টার প্রযুক্তির ওয়ালটনের নতুন মডেলের এসি ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎসাশ্রয়ী। এতে আছে আয়োনাইজার ও অ‌্যান্টিভাইরালের সমন্বয়ে ডুয়েল ডিফেন্ডার প্রযুক্তি। ওয়ালটনের এসব এসি ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, দুর্গন্ধ ও ধোঁয়া কার্যকরভাবে ধ্বংস করতে সক্ষম। এছাড়া, ফ্রস্ট ক্লিন প্রযুক্তি ব্যবহারে এসির ইভাপোরেটরে জমে থাকা ধুলো-বালি ও ময়লা এসি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিষ্কার করতে পারে।

বিক্রয়োত্তর সেবা দিতে আইএসও সনদপ্রাপ্ত সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের আওতায় সার দেশে ওয়ালটনের আছে ৭৬টি সার্ভিস সেন্টার। ওয়ালটনের দক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রকৌশলী এবং টেকনিশিয়ান ও সার্ভিস এক্সপার্টরা প্রতি ১০০ দিন পর পর এসির ক্রেতাদের প্রি সার্ভিস দিচ্ছেন।

মাহফুজ/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়