এনটিআর থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ
স্বায়ত্বশাসিত সংস্থাগুলোর অলস অর্থসহ আয়কর বহির্ভূত রাজস্ব (এনটিআর) থেকে আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরের রাজস্ব সংগ্রহের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার।
বাজেটে অর্থ যোগানের জন্য এ খাত থেকে আদায় করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে স্বায়ত্বশাসিত সংস্থাগুলোর উদ্বৃত্ত তহবিল থেকে নেওয়া হবে ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি।
চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরে এনটিআর লক্ষ্যমাত্র ছিল ৩৩ হাজার কোটি টাকা। শতকরা হিসেবে আগামী অর্থবছরে এনটিআর খাত থেকে ২১ শতাংশ বেশি রাজস্ব আদায়ের প্রস্তাব করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে এনবিআর-এর মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। করোনার কারণে গত জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৯ মাসে আদায় করা সম্ভব হয়েছে ১ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। বছর শেষে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে আরো ১ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে হবে, করোনার কারণে যেটা অনেকটাই অসম্ভব বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
রাজস্ব আদায়ের এ পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে আগামী অর্থবছরেও এনবিআর খাতে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট চলতি অর্থবছরের সমান রাখা হয়েছে। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এনবিআর-এর মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট প্রস্তাব করা হচ্ছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এ অবস্থায় শত চেষ্টা করা হলেও আগামী অর্থবছরে এনবিআর খাত থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্র অর্জন করা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
সূত্র জানায়, রাজস্ব আদায় বাড়ানোর মূল ভরসা এনটিআর খাত। তাই আগামী অর্থবছরে এনটিআর বা কর বহির্ভূত রাজস্ব প্রাপ্তি ধরা হচ্ছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। কর বহির্ভূত প্রাপ্তির মধ্যে ধরা হয়, লভ্যাংশ ও মুনাফা, সুদ, প্রশাসনিক ফি, জরিমানা, দণ্ড ও বাজেয়াপ্তকরণ, সেবা বাবদ প্রাপ্তি, ভাড়া ও ইজারা, টোল, অবাণিজ্যিক বিষয়, কর ছাড়া অন্যান্য রাজস্ব ও প্রাপ্তি এবং মূলধন রাজস্ব। কর বহির্ভূত রাজস্ব ও প্রাপ্তিখাতে আগামী অর্থবছরে ১২ হাজার কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে এ খাত প্রাপ্তির লক্ষ্য নির্ধারণ করা রয়েছে ৬ হাজার ৩৮ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, এ খাতের অর্থ আসে সরকারি বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার উদ্বৃত্ত অর্থ থেকে। ২০১৯ সালে জাতীয় সংসদে স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিতে একটি আইন পাস করা হয়। এই আইনের অধীনে সরকার এসব সংস্থার কাছে রক্ষিত অর্থের ৭৫ ভাগ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে আনতে পারে।
আইনে বলা হয়েছে, ‘উদ্বৃত্ত অর্থ’-এর অর্থ তপশিলভুক্ত কোনো সংস্থার বাৎসরিক পরিচালনা ব্যয়, নিজস্ব অর্থায়নে সরকারের পূর্বানুমোদন নিয়ে গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বাৎসরিক ব্যয় এবং বাৎসরিক পরিচালনা ব্যয়ের ২৫ শতাংশের অতিরিক্ত অর্থ। আইন অনুযায়ী, তপশিলভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো আপৎকালীন ব্যয় নির্বাহের জন্য যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ অর্থ যা তাদের বাৎসরিক পরিচালন ব্যয়ের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশের সম-পরিমাণ অর্থ অতিরিক্ত হিসাবে পৃথকভাবে সংরক্ষণ করতে পারবে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা- স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শীর্ষ ২৫টি প্রতিষ্ঠানের কাছে জমা আছে ১ লাখ ২ হাজার ৩৩ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি টাকা রয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের কাছে ২১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার কাছে ১৮ হাজার ২০৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের কাছে ১৩ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে ৯ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কাছে আছে ৯ হাজার ৫০ কোটি টাকা। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে ৪ হাজার ৩০ কোটি টাকা অলস পড়ে আছে।
এছাড়াও বিসিআইসির কাছে আছে ৩ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। সার, কেমিক্যাল ও ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রিজের কাছে আছে ৩ হাজার ৪২ কোটি টাকা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অব্যবহৃত অর্থের পরিমাণ ২ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের কাছে আছে দুই হাজার ৮০ কোটি টাকা। এর আগে গত দুই অর্থবছরে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে আনা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
হাসনাত/সাইফ
আরো পড়ুন