ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

শিক্ষিত বিনিয়োগকারী গড়ার সক্ষমতা বাড়ছে বিএএসএমের

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:৫৫, ৩০ মে ২০২১   আপডেট: ২১:৫৯, ৩০ মে ২০২১
শিক্ষিত বিনিয়োগকারী গড়ার সক্ষমতা বাড়ছে বিএএসএমের

দেশের জনগণকে বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ শিক্ষা বিস্তার সর্বস্তরে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে বিএসইসি ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠা করে ‘বাংলাদেশ একাডেমি ফর সিকিউরিটিজ মার্কেট (বিএএসএম)’। বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষিত বিনিয়োগকারী ও দক্ষ জনবল গড়ে তোলার কাজ করছে। তবে প্রতিষ্ঠার ৪ বছর পর প্রথমবারের মতো নতুন ক্যাম্পাস ও নিজস্ব ওয়েবসাইট পেতে যাচ্ছে বিএএসএম। এতে বিনিয়োগ শিক্ষা প্রদান ও দক্ষ জনবল তৈরির ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিএএসএম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এবার নব উদ্যোমে গতিশীল হতে যাচ্ছে বিএএসএম। এরই ধরাবাহিকতায় সোমবার, ৩১ মে দুপুর ১২টায় রাজধানীর দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকার জীবন বীমা টাওয়ারে বিএএসএমের নতুন ক্যাম্পাস এবং ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করা হবে। নতুন ক্যাম্পাসের উদ্বোধনী কার্যক্রম হিসেবে অথরাইজড রিপ্রেজেনটেটিভদের জন্য ‘ফাউন্ডেশন ট্রেইনিং ফর অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ’ শীর্ষক একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। এসব কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

শেয়ারবাজারে দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে অথরাইজড রিপ্রেজেনটেটিভদের জন্য মাসে ২ বার ৫ দিনব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করা হবে। প্রতি মাসের দ্বিতীয় ও চতুর্থ সপ্তাহে অথরাইজ রিপ্রেজেনটেটিভদের জন্য ফাউন্ডেশন, অ‌্যাডভান্স লেভেলের বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন করা হবে। এজন্য শেয়ারবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিটি ব্রোকারেজ হাউজ থেকে ২ জনের অধিক অথরাইজ রিপ্রেজেনটেটিভ ও বিনিয়োগকারীদের মনোনয়ন দেবে বিএএসএম।

তবে বিনিয়োগকারী ও বাজার মধ্যস্থতাকারীদের প্রশিক্ষিত করে তোলার উপর বেশি গুরুত্ব দেবে বিএএসএম। সেক্ষেত্রে শেয়ারবাজার সংক্রান্ত অপারেশনাল কার্যক্রম সম্পর্কিত বিষয়ক প্রশিক্ষণকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। অথরাইজ রিপ্রেজেনটেটিভদের ধারাবাহিকভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ শিক্ষা দেওয়া হবে। বিনিয়োগকারীদের অপারেশনালগত দুর্বলতা চিহ্নিত করে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা হবে।

এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি দেশে মাধ্যমিক পর্যায় থেকে পাঠ্যপুস্তকে বিনিয়োগ শিক্ষা (পুঁজিবাজার, ব্যাংক, বীমা ইত্যাদি) অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে বিএসইসির সঙ্গে কাজ করছে বিএএসএম। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাঠিয়েছে বিএসইসি। দেশের শেয়ারবাজারে শিক্ষিত বিনিয়োগকারী গড়ে তুলতে বিএসইসির নির্দেশে এসব উদ্যোগ নিয়েছে বিএএসএম।

বর্তমানে দেশে অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভদের সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। আগামী ২ বছরের মধ্যে এ সংখ্যা ২৫ হাজারে গিয়ে পৌঁছাবে। এত বিশাল সংখ্যক জনবলকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষিত করে তোলা কঠিন কাজ হবে। সেজন্য বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম বাড়াতে বিএএসএম ও বিআইসিএমের মতো আরও বেশকিছু প্রতিষ্ঠান থাকা জরুরি বলে মনে করে বিএএসএম কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে বিএএসএম’র মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘দেশের জনগণকে বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে বিএএসএম বিভিন্ন ধরনের কাজ করে যাচ্ছে। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, স্টক এক্সচেঞ্জ, সিডিবিএল, সিসিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড ম্যানেজার, ট্রাস্টিসহ সকল মার্কেট ইন্টারমেডিয়ারিজদের দক্ষতা বাড়ানো আমাদের প্রধান লক্ষ্য। সেক্ষেত্রে অপারেশনাল কার্যক্রমে বেশি ফোকাস করা হবে। এছাড়া, বিএএসএম শুধু মাত্র বর্তমান বিনিয়োগকারীদের নয়, গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগকারীদের প্রশিক্ষণ দেবে। এছাড়া, দেশের সকল বিজনেস স্কুল-কলেজকে বিনিয়োগ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে মাধ্যমিক পর্যায় থেকে পাঠ্যপুস্তকে বিনিয়োগ শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে কাজ চলছে। সর্বোপরি নতুন ক্যাম্পাস বিএএসএমের সক্ষমতা ও কাজের গতি আরো বাড়াবে বলে বিশ্বাস করি।’

এ বিষয়ে শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারি শিক্ষক অধ্যাপক আবু আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। তাই বিএএসএমকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি গবেষণা করার ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে। প্রতিষ্ঠানটিকে স্বতন্ত্রভাবে স্বউদ্যোগে কাজ করতে হবে। আর গবেষণার মাধ্যমে শেয়ারবাজারের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো তুলে ধরতে হবে।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘নতুন ক্যাম্পাস চালু হলে বিএএসএমের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সক্ষমতা আরো বাড়বে। এতে বিনিয়োগকারীদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের বিষয়ে সক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়বে। ফলে তারা বুঝে-শুনে বিনিয়োগ করতে পারবেন। বিএএসএমের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি প্রদানের আওতা বাড়ালে সকল স্টেকহোল্ডার উপকৃত হবে।’

প্রসঙ্গত, বিএসইসি কর্তৃক নিয়ন্ত্রণাধীন বিএএসএম’র দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মোট সদস্য সংখ্যা ১৩ জন। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী। অতিরিক্ত মহাপরিচালক হিসেবে আছেন প্রদীপ কুমার বসাক। ২ জন উপ-পরিচালক হিসেবে আছেন এম এ মালেক ও সানজিদা পারভিন। সহকারী পরিচালক হিসেবে আছেন আশরাফুল আলম। আর এক্সিউটিভ অফিসার হিসেবে আছেন মো. মাসুদুর রহমান।  

এছাড়া, প্রতিষ্ঠানটিতে ৪ জন ফ্যাকাল্টি মেম্বার হিসেবে আছেন মো. সেলিম, আল হাসান, মো. সাদ্দাম হোসেন খান ও মিঠুন চক্রবর্তী। আউটসোর্সিং হিসেবে একজন নিরাপত্তকর্মী, একজন অফিস সহায়ক ও একজন পরিচ্ছন্ন কর্মী রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে।

এদিকে বিএএসএমের ১১ সদস্য বিশিষ্ট গভর্নিং বোর্ডের চেয়ারম্যান হলেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। প্রতিষ্ঠানটির ১৭ সদস্যের একাডেমিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হলেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ডা. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।

ঢাকা/তানিম/এমএম

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়