ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

বাজেটে পানি,স্যানিটেশন ও হাইজিন খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি

বিশেষ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:২১, ৩০ মে ২০২১  
বাজেটে পানি,স্যানিটেশন ও হাইজিন খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি

আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে ওয়াটার এইড বাংলাদেশ, পিপিআরসিসহ কয়েকটি সংগঠন।

রোববার (৩০ মে) ‘২০২১-২০২২ অর্থবছরে স্যানিটেশন ও হাইজিন খাতে বরাদ্দ’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে এমএইচএম নেটওয়ার্ক, ওয়াশ অ্যালায়েন্স, এফএসএম নেটওয়ার্ক, স্যানিটেশন অ্যান্ড ওয়াটার ফর অল, ইউনিসেফসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও পিপিআরসির চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান লিখিত বক্তব্যে বলেন, বাজেটে ওয়াশ আলাদা কোনো খাত নয়। এটি পরিবেশের সঙ্গে যুক্ত। অথচ, হাইজিন ও স্যানিটেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হাইজিন বাংলাদেশ এর জন্য এ খাতে সরকারের নীতি নির্ধারকদের বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। বাজেটেও সেভাবেই বরাদ্দ দিতে হবে।

ওয়াটার এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, করোনার কারণে খরচ কমাতে গিয়ে এর প্রভাব পড়েছে নারী সমাজের ওপর। অনেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনায় খরচ করছেন না। তিনি স্যানিটারি ন্যাপকিনের ওপর থেকে ভ্যাট-ট্যাক্স তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, তাহলে ন্যাপকিনের খরচ অনেক কমে আসবে।

হাসিন জাহান বলেন, করোনার কারণে আমরা যতটা মাস্ক পরার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি ততটা গুরুত্ব আমরা হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে দিচ্ছি না। এই বিষয়টি ভাবতে হবে।

ওয়াটারএইড ও ইউনিসেফ-এর সহযোগিতায়, পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এর এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) খাতে অর্থায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগ বেশ প্রশংসনীয়। কারণ, ওয়াশ খাতে ২০০৭-২০০৮ সাল থেকে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটে অর্থ বরাদ্দ ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। এ সময় ২ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১২ হাজার ২২৭ কোটি টাকা হয়েছে। বিগত বছরগুলোর বাজেটে এ খাতে আর্থিক বরাদ্দের ধারা ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও ২০২০-২১ অর্থবছরে এডিপির অধীনে ওয়াশ খাতে ৫ শতাংশেরও কম বরাদ্দ করা হয়েছিল।

বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভৌগলিক অবস্থান বিচারে দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়াশ বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রেও রয়েছে অসমতা। গ্রামাঞ্চল, চর, পার্বত্য অঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকায় ওয়াশ বাজেট বরাদ্দের অত্যধিক প্রয়োজনীয়তা থাকা সত্বেও বিগত বছরগুলোতে শহর ও মহানগরগুলো তুলনামূলকভাবে বরাদ্দের শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মিকস জরিপ ২০১৯ অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৮৪ দশমিক ৬ শতাংশ পরিবারের উন্নত স্যানিটেশনের সুবিধা রয়েছে। এই জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত জ্ঞান যথেষ্ট থাকলেও হাতধোয়ার মতো স্বাস্থ্যবিধির চর্চার হার খুব কম। জেএমপির ২০১৭ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাত্র ৪০ শতাংশ মানুষের হাতধোঁয়ার স্থানে সাবান ও পানির সুবিধা রয়েছে। দেশে স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত ধারণা যথেষ্ট থাকলেও এর চর্চা খুব কম। সেজন্য সকলের জন্য হ্যান্ড হাইজিনের প্রয়োজনের পাশাপাশি দেশব্যাপী এর প্রচারণারও চালানো দরকার বলেও সংবাদ সম্মেলনে তুলে হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে সম্মিলিতভাবে নিম্নোক্ত সুপারিশসমূহ উল্লেখ করা হয়:

১. চলমান এই কোভিড-১৯ মহামারি ওয়াশ নিয়ে নীতি নির্ধারনী পর্যায়ে ব্যাপকভাবে নতুন ভাবনার জানালা খুলে দিয়েছে । সুনির্দিষ্টভাবে কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় স্বাস্থ্যবিধিকে শুধু মূলধারার এজেন্ডায় ফুটনোটে না রেখে এর সামগ্রিকতা বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্যবিধিতে ব্যাপকভাবে আলোকপাত করতে হবে।

২. কিশোরী মেয়ে ও শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি ও স্বাস্থ্য এবং অপুষ্টির সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলির ব্যাপারে পদক্ষেপগুলো খুঁজে বের করতে হবে ।

৩. কোভিড-১৯-এর বাস্তবতা এবং টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট বাস্তবায়নের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি বা হাইজিন প্রসারের জাতীয় কৌশলপত্র পরিমার্জন ও হালনাগাদ করা প্রয়োজন।

৪. স্বাস্থ্যবিধিকে মূলধারার আনার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধির ইস্যু ও অনুশীলনগুলোকে ব্যক্তিগত ও সামাজিক উভয় পর্যায়েই গুরুত্বের সাথে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

৫. জনসমাগম স্থল এবং মার্কেট/বাজার, সরকারি এবং বেসরকারি অফিস-আদালতসমূহে হাত ধোয়ার সুবিধা (হ্যান্ড ওয়াশিং স্টেশনঃ) তৈরি এবং সেগুলোর কার্যকারিতা সুনিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত সম্পদের আরোহন ও যথাযথ কর্মপরিকল্পনা প্রয়োজন।

৬. কভারেজের ব্যবধান কমিয়ে আনতে ওয়াশখাতের বরাদ্দের ক্ষেত্রে অঞ্চলভিত্তিক বৈষ্যম্য ও নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের পক্ষপাতের বিষয়টি দূর করতে হবে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ২০২০-২০২৫ অনুসরণে হাত ধোয়া এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি চর্চার মাধ্যমে সামগ্রিক পুষ্টি ও স্বাস্থ্যবিধি পরিস্থিতির উন্নয়নে বহু-খাত ও সংস্থাভিত্তিক উদ্যোগ এগিয়ে নিতে বাজেটের ফোকাস বাড়াতে হবে।

৭. পানি-বিষয়ক পরিবেশগত এবং ঝুঁকি নিরসনমূলক কর্মসূচিগুলো ভালো উদ্যোগ হিসেবে বিবেচনা নিয়ে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে নিরাপদ ও সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য পরিবেশবান্ধব সৌরচালিত পানি লবনমুক্ত করার প্ল্যান্ট চালু এবং এসব এখন যেগুলো আছে সেগুলোর কাজ অব্যাহত রাখার জন্য পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ করা।

ঢাকা/হাসনাত/এমএম

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়