ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যায় সাফকো স্পিনিং

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৬, ৩১ মে ২০২১   আপডেট: ১২:৫১, ৩১ মে ২০২১
লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যায় সাফকো স্পিনিং

শেয়ারবাজারে বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সাফকো স্পিনিং মিলসের ক্রমাগত লোকসান বাড়ছে। ব্যবসা না হওয়ায় টানা দুই বছর ধরে লভ্যাংশ দিচ্ছে না কোম্পানিটি। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শেয়ারহোল্ডাররা।

লভ্যাংশ না দেওয়া ও ক্রমাগত লোকসানের কারণ জানতে সাফকো স্পিনিং মিলসের পরিচালনা পর্ষদসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের তলব করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

রোববার, ৩০ মে দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সিকিউরিটিজ কমিশন ভবেনে বিএসইসির সঙ্গে আলোচনায় এই ব্যাখ্যা দিয়েছেন সাফকো স্পিনিং মিলসের পরিচালনা পর্ষদ। একইসঙ্গে তারা এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত বিএসইসিতে জমা দেন। এ সময় কোম্পানিটির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) ও কোম্পানি সচিব উপস্থিত ছিলেন।

গত ৬ মে দুপুরে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদকে তলব করে বিএসইসি। তবে ওইদিন কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ আসতে না পারায় ৩০ মে শুনানির তারিখ নির্ধারণ করে বিএসইসি।

২০১৯ ও ২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন আলোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি সাফকো স্পিনিং মিলস। এছাড়া কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পর থেকে কখনো শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ দেয়নি। ধারাবাহিকভাবে শেয়ারহোল্ডারদের বোনাস-লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণে তালিকাভুক্তির পর থেকে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৮৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেড়েছে। ফলে কোম্পানির আর্থিক সক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়েছে।

বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে সাফকো স্পিনিং মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ পরিচালনা পর্ষদকে তলব করা হয়েছে।

বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম রাইজিংবিডিকে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।

বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, বস্ত্রখাতের অধিকাংশ কোম্পানির আর্থিক অবস্থা অস্বচ্ছ। কোম্পানিগুলো তাদের প্রকৃত আর্থিক অবস্থা আর্থিক প্রতিবেদনের তুলে ধরে না। অধিকাংশ কোম্পানি মুনাফা কম দেখায় এবং বছর শেষে শেয়ারহোল্ডারদের বোনাস লভ্যাংশ দেয়। ধারাবাহিকভাবে বোনাস-লভ্যাংশ দেওয়ার ফলে এক পর্যায়ে কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা বেড়ে যায়। তখন কোম্পানিগুলো শেয়ারহোল্ডাররদের নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। বস্ত্র খাতের অধিকাংশ কোম্পানির মতোই সাফকো স্পিনিং মিলস একই পথে হেঁটেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় সাফকো স্পিনিং মিলস। ওই বছর থেকে টাকা ২০১৪ সাল পর্যন্ত কোম্পানি ধারাবাহিকভাবে শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশের ওপর বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। তবে ২০১৫ সালে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয়নি। এরপর ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কোম্পানি অবারও শেয়ারহোল্ডারদের বোনাস-লভ্যাংশ দিয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে কোম্পানিটির ঘোষিত বোনাস-লভ্যাংশের পরিমাণ ৫ শতাংশের নিচে নেমে আসে। ধারাবাহিকভাবে বোনাস লভ্যাংশ দেওয়ায় কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৯৯ লাখ ৮১ হাজার ৭১৬-তে।

সর্বশেষ হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর, ২০২০) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২ দশমিক ৩৪ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির লোকসান ছিল ০ দশমিক ৩৭ টাকা। আর দুই প্রান্তিক মিলে অর্থাৎ ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর, ২০২০) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান  হয়েছে ৪ দশমিক ৪৩ টাকা। আগের হিসাব বছর একই সময়ে কোম্পানির লোকসান ছিল ১ দশমিক ৯৯ টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাফকো স্পিনিং মিলসের কোম্পানি সচিব ইফতেখার আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণসহ কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে জানতেই পরিচালনা পর্ষদকে ডেকেছে বিএসইসি। আলোচনায় বিএসইসিকে কোম্পানিটির সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানিয়েছে পরিচালনা পর্ষদ। এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি বিএসইসি।’

তিনি বলেন, ‘ব্যবসা ভালো না হওয়ায় কোম্পানি লোকসানে রয়েছে। ফলে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া, মহামারি করোনার কারণে গত বছর থেকে ব্যবসা হচ্ছে না। যে কারণে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে পারছে না কোম্পানি।’

প্রসঙ্গত, সাফকো স্পিনিং মিলসের মোট পরিশোধিত মূলধনের মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে ৩০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৬৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ‘বি’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানিটির শেয়ার রোববার, ৩০ মে সর্বশেষ ১৩ টাকা ১০  পয়সায় লেনদেন হয়েছে।

ঢাকা/এনটি/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়