ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

সাবেক আইজিপি শহীদুল হক ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডসের চেয়ারম্যান

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:০০, ৩১ মে ২০২১   আপডেট: ২২:৩৪, ৩১ মে ২০২১
সাবেক আইজিপি শহীদুল হক ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডসের চেয়ারম্যান

সিকিউরিটিজ আইন পরিপালন না করায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠান (ব্রোকারেজ হাউজ) ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডসের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ব্রোকারেজ হাউজটির পুনর্গঠিত পর্ষদে ৪ জন স্বতন্ত্র পরিচালক ও ৪ জন শেয়ারহোল্ডার পরিচালককে মনোয়ন দিয়েছে বিএসইসি। প্রতিষ্ঠানটিতে নতুন মনোয়ন দেওয়া ৪ জন স্বতন্ত্র পরিচালকের মধ্যে একজন বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) রয়েছেন।

ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডসের পুনর্গঠিত পর্ষদের সদস্যরা হলেন- বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি)  এ কে এম শহীদুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রুমানা ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. নাজমুল হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহীন মিয়া, শেয়ারহোল্ডার পরিচালক ওয়াহিদ মুরাদ জামিল, আশরাফুজ্জামান চৌধুরী, মোত্তাসেম বেলাল ও ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডসের পুনর্গঠিত পর্ষদে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক। এই পুনর্গঠিত পর্ষদ কমিশনের অনুমোদন ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির কোনো সম্পদ বিক্রি, হস্তান্তর বা নিষ্পত্তি করতে পারবে না। আর আলোচ্য বিষয়গুলো পরিপালন সাপেক্ষে পুনর্গঠিত পর্ষদ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ এ সংক্রান্ত  প্রতিবেদন ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে বিএসইসিতে দাখিল করবে। পুনর্গঠিত পর্ষদের কার্যক্রম এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারির পর থেকে কার্যকর হয়েছে।

এ বিষয়টি ফারইস্ট ফাইনান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে। একইসঙ্গে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ফারইস্ট স্টকস ও বন্ডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে জানানো হয়েছে।

রোববার (৩০ মে) বিএসইসির ৭৭৫তম কমিশন সভার সিদ্ধান্তের আলোকে প্রতিষ্ঠানটির পর্ষদ পুনর্গঠিত হয়েছে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিএসইসি জানিয়েছে, কমিশনের দেওয়া নির্দেশনা পরিপালনে ব্যর্থ হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তাছাড়া শেয়ারবাজারের শৃঙ্খলা রক্ষা এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায়ও ব্যর্থ হয়েছে ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস। বাজারের শৃঙ্খলা স্থিতি এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করতে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ২০-এ প্রদত্ত ক্ষমতা বলে কমিশন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শেয়ারবাজারে বিএসইসি এই প্রথমবারের মতো ব্রোকারেজ হাউজের পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে। মূলত ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডসের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিএসইসি কর্তৃক মনোনীত স্বতন্ত্র পরিচালকসহ শেয়ারহোল্ডার পরিচালকরা প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক অবস্থার উন্নয়নে কাজ করবেন।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডসের ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পরীক্ষা করে দেখা গেছে, গ্রাহকদের কনসোলিডেটেড কাস্টমার্স অ্যাকাউন্টে ১০ কোটি ৫৬ লাখ ৪৭ হাজার ৩৬৯ টাকা ঘাটতি পাওয়া গেছে। পরবর্তীতে বিএসইসি ওই ঘাটতির সমন্বয়ের জন্য নির্দেশ দিলেও প্রতিষ্ঠানটি তা পালন করেনি।

এছাড়া নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস দ্বারা পরিচালিত বিশেষ নিরীক্ষায় ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডসের আর্থিক হিসাবে অনিয়ম পাওয়া গেছে। ফারইস্ট ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের দলিলপত্র ও শ্রেণীকৃত ঋণ বিবরণী অনুসারে এর সহযোগী কোম্পানি ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডসকে ২৭৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে। কিন্তু ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডসের নিরীক্ষকের মতামত অনুসারে এ ঋণের পরিমাণ ২৫২ কোটি ২২ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে পার্থক্যের পরিমাণ ২৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এতে ঋণের অর্থ পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে সন্দেহ তৈরি হতে পারে ও  প্রতিষ্ঠানটির অর্থ হারানোর সম্ভাবনাও রয়েছে বলে জানিয়েছে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান।

নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানটিে আরো জানিয়েছে, ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস বিভিন্ন ক্লায়ন্টের কোডগুলোতে ৩৬ কোটি ৩৬ লাখ ৪১ হাজার ১২৫ টাকা জাল লেনদেন করেছে, যা গ্রাহকদের  কনসোলিডেটেড কাস্টমার্স অ্যাকাউন্টে সঠিকভাবে জমা হয়নি।

বিএসইসি সূত্রে আরো জানা গেছে, ২০১২ সালে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডসের ৪১ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করে। যা কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক অনুমোন হয়েছিল। তবে ওই ঋণটি তৎকালীন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক এ এম খালেকসহ ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ও অন্যান্যদের দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. সাইফুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বিএসইসি ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডসের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে। বিএসইসি থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করার পর থেকে নতুন পর্ষদ কার্যকর হয়েছে। নতুন পর্ষদে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে কমিশন আমাকে একটি দায়িত্ব দিয়েছে। আমি চেষ্টা করব, প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়ন ঘটিয়ে বিনিয়োগকারীদের যেন স্বার্থ রক্ষা হয়।’

ঢাকা/এনটি/এমএম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়