ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

শেয়ারবাজার বান্ধব বাজেট চান সংশ্লিষ্টরা

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০৮, ২ জুন ২০২১   আপডেট: ১০:১৬, ২ জুন ২০২১
শেয়ারবাজার বান্ধব বাজেট চান সংশ্লিষ্টরা

আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করা হবে বৃহস্পতিবার (৩ জুন)।

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে নতুন অর্থবছরের বাজেট হবে শেয়ারবাজারবান্ধব— এমনটাই প্রত্যাশা বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টদের।

আসন্ন প্রস্তাবিত বাজেটে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর হার কমানো এবং অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে কর ব্যবধান বৃদ্ধি, ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত লভ্যাংশের আয়ের সীমা বৃদ্ধি, শেয়ারবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ, লেনদেনের ওপর উৎসে কর বা অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স (এআইটি) কমানো, নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য কর রেয়াতের সময়সীমা বৃদ্ধিকরা, এসএমই কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন কর হার নির্ধারণ এবং তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত বন্ডের সুদ আয়ের ওপর কর অব্যাহতি চেয়েছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা।

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিসহ শেয়ারবাজারকে গতিশীল করতে আসন্ন বাজারে এসব সুযোগ রাখা জরুরি বলে মনে করছেন তারা। আগামী অর্থবছরের বাজেটে এসব প্রস্তাব রাখা হলে শেয়ারবাজারে আরও গতিশীল হবে ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে। যা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ ও লেনদেন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে করপোরেট কর হার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ২২ শতাংশ করা হচ্ছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির ক্ষেত্রে করপোরেট কর হার সাড়ে ৩২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ বিষয়ে সবুজ সংকেত দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ও। এছাড়া আগামী অর্থবছরের বাজেটে কালো টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুবিধা রাখা হতে পারে বলে জানা গেছে। আর ব্রোকার হাউজের লেনদেনের ওপর আরোপিত উৎসে কর বা অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স কমানোর সুবিধাসহ বন্ড মার্কেটকে বিকশিত করতে কিছু সুযোগ সুবিধা দিতে পারে সরকার।

এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক মো. রকিবুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আসন্ন অর্থবছরের বাজেটে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বিদ্যমান করপোরেট কর আরও অন্তত আড়াই শতাংশ কমানোর জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। এছাড়া শেয়ারবাজারে অ-তালিকাভুক্ত কোম্পাগিুলোর করপোরেট কর বাড়াতে হবে। এতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির লভ্যাংশ প্রদানের সক্ষমতা বাড়বে। আর অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে আসতে আগ্রহী হবে। এতে শেয়ারবাজার আরও শক্তিশালী ও গতিশীল হবে। ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা আমি ৫০ হাজার টাকা থেকে অন্তত ১ লাখ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করছি। এতে বিনিয়োগকারীরা ভালো লভ্যাংশের প্রত্যাশায় মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানির শেয়ারে দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। এছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে অপ্রদর্শিত আয় শেয়ারবাজারে আরো এক বছরের বিনিয়োগের সুযোগ রাখার প্রস্তাব জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে শেয়ারবাজারের স্মল ক্যাপ প্ল্যাটফর্ম থেকে এসএমই কোম্পানিগুলোকে অর্থ সংগ্রহের সুযোগ রাখার অনুরোধ করছি।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সাবেক প্রেসিডেন্ট ও ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটিজ কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ফখরুদ্দিন আলী আহমেদ রাইজংবিডিকে বলেন, ‘করপোরেট কর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে একটি ভালো পরিমাণ পার্থক্য সৃষ্টির মাধ্যমে কমিয়ে আনতে হবে। তাহলে শেয়ারবাজারে ভালো ভালো কোম্পানি আসতে আগ্রহী হবে। আর অপদর্শিত অর্থ অর্থনীতির মূল্য স্রোতের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার ইচ্ছে যদি সরকারের থাকে, তাহলে শেয়ারবাজার উত্তম জায়গা।’

এদিকে, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মো. সায়েদুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আসন্ন বাজেটে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বিদ্যমান করপোরেট কর কমাতে হবে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পাগিুলোর করপোরেট কর ব্যবধান বাড়াতে হবে। এতো শেয়ারবাজারে বড় বড় প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হবে। এক কথায় করপোরেট করকে আর্কষণীয় করতে হবে। বর্তমানে যে ১০ শতাংশ এআইটি কেটে নেওয়া হয়, সেটাকে যেন চূড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাহলে বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশ গ্রহণের পাশাপাশি দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। আর অপ্রদর্শিত আয় শুধুমাত্র শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার জন্য প্রস্তাব জানাচ্ছি।’

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘করোনা মহামারির কথা বিবেচনায় রেখে সরকারের কাছে আমরা শেয়ারবাজার বান্ধব বাজেট চাই। বাজেট ঘোষণার পরে যেন শেয়ারবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরো বৃদ্ধি পায় সেই দাবি করছি। একইসঙ্গে আসন্ন বাজেটে বিনা শর্তে অপ্রদর্শিত অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর করপোরেট কর কমানো ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানি কর বাড়ানো, লভ্যাংশের উপর দ্বৈত কর প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

ঢাকা/এনটি/এমএম/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়