ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বাজেট শিল্প ও কর্মসংস্থানবান্ধব: নাজনীন আহমেদ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১৩, ৪ জুন ২০২১   আপডেট: ১৯:৩৬, ৪ জুন ২০২১
বাজেট শিল্প ও কর্মসংস্থানবান্ধব: নাজনীন আহমেদ

নাজনীন আহমেদ

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো নাজনীন আহমেদ বলেছেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট কোভিড উদ্ভূত অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মূল হাতিয়ার হিসেবে নেওয়া হয়েছে শিল্পের বিকাশের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে। এই বাজেট শিল্পবান্ধব এবং কর্মসংস্থানবান্ধব বাজেট।

বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন তিনি। জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার (৩ জুন) বিকেলে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।

নাজনীন আহমেদ বলেন, রপ্তানি এবং দেশীয় বাজার নির্ভর শিল্পের ক্ষেত্রে নানা রকম সুবিধা দেওয়া হয়েছে এই বাজেটে। এর মধ্যে- কাঁচামালের ওপর শুল্ক কমানো, উৎপাদিত শিল্প পণ্যের ওপর সম্পূরক শুল্ক কিংবা সারচার্জ কমানো, ভ্যাট কমানো-এই সবগুলো উদ্যোগে শিল্পের বিকাশকে উৎসাহিত করবে। এক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল পণ্য উৎপাদনকারী শিল্প, কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সামগ্রী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, হাঁস-মুরগি মাছের খাবার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, ওষুধ শিল্প এদের কলেবর বৃদ্ধির মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। তবে এই সুযোগ সুবিধাগুলো মূলত মাঝারি থেকে বড় শিল্পগুলো নিতে পারবে। তবে অতি ক্ষুদ্র, কিংবা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ কোনো কিছু এই বাজেটে নেই।  তারা হয়তো পরোক্ষভাবে সুবিধা পাবেন তবে তাদের অনেকেরই পুঁজির সহায়তা দরকার হবে। তাই এই বাজেটে মূলত শিল্পের বহুমুখীকরণের প্রচেষ্টা থাকলেও তাতে অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। 

তিনি আরও বলেন, আসন্ন বাজেটে করপোরেট কর কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে বিভিন্ন খাতে।  এ উদ্যোগ ইতিবাচক।  কিন্তু মোবাইল আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর করপোরেট কর বৃদ্ধি করা হয়েছে।  যা এই সময়ে ঠিক হয়নি।  বর্তমান বাজেটে নারী উদ্যোক্তাদের কে কিছু সুবিধা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত টার্নওভারের উপরে তাদের কর দিতে হবে না। এই সুবিধা নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসায় উৎসাহিত করবে।  তাছাড়া ডে-কেয়ার সেন্টার যারা গড়ে তুলতে চান, এমন নারী উদ্যোক্তারা কিছু সুবিধা পাবেন।  যা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে নারীর অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায়। 

নাজনীন আহমেদ বলেন, বর্তমান বাজেটে নারীর স্বাস্থ্য কথা বিবেচনা করে স্যানিটারি ন্যাপকিনের ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। যা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে মনে করি।  স্বাস্থ্য খাতকে গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।  তবে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ গত বছরের মতোই আছে এবং লক্ষ্যগুলো একই রকম।  এর মূল কারণ হলো গত বছর বাজেট ঘোষণার সময় স্বাস্থ্য খাতের জন্য যে কার্যক্রমের টার্গেট করা হয়েছিল, তার অনেকগুলোই বাস্তবায়ন হয়নি।  বিশেষ করে জেলা পর্যায়ে আইসিইউসহ অন্যান্য আধুনিক স্বাস্থ্য সুবিধা দেওয়া, সেই সংক্রান্ত লোকজনের প্রশিক্ষণ ইত্যাদি বিষয়গুলো এখনো অর্জিত হয়নি। তাই আসন্ন নতুন বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের জন্য যে বরাদ্দ তাতে সেই পুরনো অঙ্গীকারগুলো আবার এসেছে। তাই স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ যেন ঠিকভাবে ব্যবহৃত হয় সেই ব্যাপারে মনোযোগ দিতে হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় চলমান কর্মসূচিগুলোর কলেবর বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে।  তবে করোনার কারণে নতুনভাবে দরিদ্রদের জন্য নগদ সহায়তার বিষয়টি রয়েছে। 

তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানিকৃত মোবাইলের ওপর অতিরিক্ত শুল্কের কথা বলা হয়েছে। যার কারণে মোবাইলের দাম বৃদ্ধি পাবে ।  কিন্তু এটি ঢালাওভাবে সব মোবাইলের জন্য না করে শুধু দামি মোবাইলের জন্য কর বাড়ানো যেতে পারে। কারণ এখন শিক্ষাব্যবস্থা অনলাইনে হচ্ছে। অনলাইন শিক্ষা পদ্ধতিতে অংশ গ্রহণের প্রয়োজনীয় ডিভাইস যেমন স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ না থাকার কারণে দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে ঠিকভাবে অংশ নিতে পারছে না। তাই তাদের জন্য কমদামি মোবাইল যাতে হাতের নাগালে আসে সেজন্য কম দামি মোবাইলের উপরে শুল্ক কমানো উচিত।  বাজেটে অবশ্য দেশীয় মোবাইল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা লাভ করে সেজন্য মোবাইল উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের ওপর শুল্ক কমানো হয়েছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান  তাদের কলেবর বাড়িয়ে এখনই দেশের চাহিদা পূরণ করতে পারবে না। তাই এক্ষেত্রে কিন্তু আমাদের অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থায় কম খরচের মোবাইল দরকার এখনই। তাই আমদানিকৃত অল্প দামি মোবাইলের ওপর এ বছর শুল্ক বাড়ানো ঠিক হবে না ।  বেশি দামি মোবাইলের ওপর কর বাড়ানো যেতে পারে।  সব মিলিয়ে এই বাজেটে চেষ্টা করা হয়েছে জীবন-জীবিকার মধ্যে একটা ভারসাম্য রেখে দেশের অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনার।

নাজমুল/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়