বানকো সিকিউরিটিজে লেনদেন বন্ধ, বিনিয়োগকারীরা হতাশ-ক্ষুব্ধ
বিনিয়োগকারীদের ‘সম্মিলিত গ্রাহক অ্যাকাউন্ট’ থেকে ৬৬ কোটি ৫৯ লাখ ১৯ হাজার ১৩৩ টাকার অর্থ ও শেয়ার আত্মসাতের ঘটনায় দ্বিতীয় দিনের মতো বানকো সিকিউরিটিজে শেয়ার কেনাবেচা বন্ধ রয়েছে। দেশের প্রধান শেয়ারবাজারে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) নির্দেশে এ লেনদেন কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।
তবে অর্থ ও শেয়ার আত্মসাতের ঘটনায় খবর পেয়ে ব্রোকারেজ হাউজটিতে বিনিয়োগকারীদের আনাগোনা বেড়েছে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ব্রোকারেজ হাউজের বিভিন্ন তথ্য জানতে ভিড় করেন বিনিয়োগকারীরা।
করোনা পরিস্থিতির কারণে অধিকাংশ বিনিয়োগকারী ব্রোকারেজ হাউজে না এসে টেলিফোনে বা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেন করে থাকেন। তবে বিও একাউন্ট শেয়ার ও টাকা রয়েছে কিনা এবং কবে নাগাদ লেনদেন চালু হবে, সে খবর জানতেই ব্রোকারেজ হাউজে বিনিয়োগকারীরা খোঁজ নিচ্ছেন।
বুধবার (১৬) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বানকো সিকিউরিটিজ হাউজের হাউসে অবস্থান করে এমন চিত্র দেখা গেছে। তবে ব্রোকারেজ হাউজের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিনিয়োগকারীদের কোন সদুত্তর দিতে পারছেন না। হতাশ হয়ে শঙ্কা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন তারা।
ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীরা জানিয়েছেন, বানকো সিকিউরিটিজের কনসোলিডেটেড কাস্টমার অ্যাকাউন্টে যে ৬৬ কোটি টাকা ঘাটতি পাওয়া গেছে, তা অনেক আগেই ডিএসইকে বলা হয়েছে। তারা বিনিয়োগকারীদেরে যে চেক দিত, তার অধিকাংশই ডিজঅনার হতো। টাকার জন্য বিনিয়োগকারীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতো ওই হাউজে। কিন্তু হাউজ কর্তৃপক্ষ যথা সময়ে বিনিয়োগকারীদের টাকা দিতো না। এছাড়া প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) জন্য বিনিয়োগকারীরা টাকা দিলেও, তা সঠিকভাবে কোম্পানিতে জমা দিত না বানকো সিকিউরিটিজ। এছাড়া অনেক সময় বিনিয়োগকারীদের না জানিয়ে তাদের শেয়ার বিক্রি করে দিতো হাউজটি। আর ব্রোকারেজ হাউজটির যে অর্থ সংকটে রয়েছে, সে বিষয়টি ডিএসই আগে থেকেই জানতো। কিন্তু যথা সময়ে পদক্ষেপ না নেওয়ায় এ অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। ফলে ভুগতে হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন বিনিয়োগকারী এ ঘটনার খবর পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কোম্পানির এমন কর্মকাণ্ড শেয়ারবাজারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। পাশাপাশি সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও তাদের বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত।
বিনিয়োগকারীদের দাবি, আত্মসাৎকৃত অর্থ দ্রুত ফেরত আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। একইসঙ্গে যারা এই কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত রয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। পাশাপাশি ব্রোকারেজ হাউজটি দ্রুত খুলে দেওয়ার অবস্থা করা হোক, যাতে বিনিয়োগকারীরা দ্রুত তাদের শেয়ার অন্য ব্রোকারেজ হাউজে স্থানান্তর করে নিতে পারে।
এ বিষয়ে বানকো সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী অধ্যাপক আবু আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, বানকো সিকিউরিটিজের কনসোলিডেটেড কাস্টমার অ্যাকাউন্টে যে ৬৬ কোটি টাকা ঘাটতি পাওয়া গেছে, তা অনেক আগেই ডিএসইকে বলা হয়েছে। তারা বিনিয়োগকারীদেরে যে চেক দিত, তার অধিকাংশই ডিজঅনার হতো। টাকার জন্য বিনিয়োগকারীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতো ওই হাউজে। কিন্তু হাউজ কর্তৃপক্ষ যথা সময়ে বিনিয়োগকারীদের টাকা দিতো না। আমি এ ব্রোকারেজ হাউজ থেকে যতবার টাকা উত্তোলন করেছি, তার জন্য বিএসইসি বা ডিএসইর সুপারিশ লেগেছে। ব্রোকারেজ হাউজটির অর্থ সংকটে রয়েছে এ বিষয়টি ডিএসই আগে থেকেই তো জানতো। কিন্তু এর পরেও কেন পদক্ষে নেওয়া হয়নি। বিনিয়োগকারীদের এখন বিনা কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
আরেক বিনিয়োগকারী মোহাম্মদ রফিকুল হাসান আকন্দ রাইজিংবিডিকে বলেন, চাকরি থেকে অবসরের পর টাকা পেয়েছি তা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করেছেন। আমার অ্যাকাউন্টে শেয়ার ও নগদ টাকা দুটোই রয়েছে। তবে শেয়ার আছে জানতে পেরেছি কিন্তু নগদ টাকার কোন খবর পাচ্ছি না।
বানকো সিকিউরিটিজের নব্য সেকেন্ডারি মার্কেটের বিনিয়োগকারী বাসার আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, দুই দিন আগেই ৬৪ হাজার টাকার শেয়ার বিক্রি করেছি। আজকে হাউজে এসে দেখি লেনদেন হচ্ছে না। আমার টাকা আদৌ ফেরত পাব কিনা তা বুঝতে পারছি না। হাউজ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কিছুই বলছে না। আমি কিছু টাকা ঋণ করে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছিলাম। এই টাকা যদি না পাই তরে তাহলে আমি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়বো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুন হোসেন শামীম রাইজিংবিডিকে বলেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সব সময় পাশে থাকবে বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ। বানকো সিকিউরিটিজের মালিকপক্ষ অর্থ আত্মসাৎ করে খুবই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। বিনিয়োগকারীদের আত্মসাৎকৃত অর্থ দ্রুত ফেরত আনার জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) অনুরোধ জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, বানকো সিকিউরিটিজ থেকে বিনিয়োগকারীদের ৬৬ কোটি ৫৯ লাখ ১৯ হাজার ১৩৩ টাকা অর্থ ও শেয়ার আত্মসাতের ঘটনায় ডিএসই কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসহ ৭ পরিচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে।
অভিযুক্তরা হলেন, বানকো সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান আব্দুল মুহিত, পরিচালক মো. শফিউল আজম, ওয়ালিউল হাসান চৌধুরী, নুরুল ঈশাণ সাদাত, এ. মুনিম চৌধুরী, জামিল আহমেদ চৌধুরী ও বাশার আহমেদ।
সোমবার (১৪ মে) রাত সাড়ে ১১টার দিকে অভিযোগটি রাজধানীর মতিঝিল থানায় দায়ের করে ডিএসই। মঙ্গলবার (১৫ জুন) সকালে মতিঝিল থানা অভিযোগটি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠানো হয়েছে।
ডিএসই প্রতারণামূলক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি আইনের ৪০৬ ও ৪০৯ ধারায় অভিযোগ এনেছে। অভিযোগটি থানায় দায়ের করা হলেও এর সব কার্যক্রম খতিয়ে দেখবে দুদক।
/এনটি/এমএম/
আরো পড়ুন