ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ক্ষতিকারক এইচসিএফসি রেফ্রিজারেন্ট এসি আমদানি বন্ধের দাবি

একরাম হোসেন পলাশ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৩৩, ৩১ আগস্ট ২০২১   আপডেট: ২২:৪১, ৩১ আগস্ট ২০২১
ক্ষতিকারক এইচসিএফসি রেফ্রিজারেন্ট এসি আমদানি বন্ধের দাবি

‘এইচপিএমপি স্টেজ ২’ প্রকল্পের প্রারম্ভিক কর্মশালায় অতিথিরা

বায়ুমণ্ডলে ওজোন স্তর ক্ষয়কারী ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী এইচসিএফসি (হাইড্রোক্লোরোফ্লোরোকার্বন) গ্যাসের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধে কাজ করছে রেফ্রিজারেশন ও এয়ার কন্ডিশনিং সেক্টরের ছয়টি প্রতিষ্ঠান। এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্পের আওতায় ২০২২ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোর এয়ার কন্ডিশনিং উৎপাদন লাইনের প্রযুক্তি পরিবর্তনের মাধ্যমে এইচসিএফসি গ্যাসের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করা হবে। তবে, পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা—বিদেশ থেকে এইচসিএফসি গ্যাসযুক্ত এসি আমদানি অব্যাহত থাকলে এইচসিএফসি গ্যাসের নিঃসরণ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় কমবে না। সেজন্য বিদেশ থেকে ক্ষতিকারক এইচসিএফসি গ্যাসযুক্ত এসি আমদানিও নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট, ২০২১) সকালে অনলাইন প্ল‌্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত ‘এইচসিএফসি ফেজআউট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান (এইচপিএমপি স্টেজ ২)’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রারম্ভিক কর্মশালায় অতিথিরা এমন মন্তব্য করেন।

কর্মাশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন একই মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমদ শামীম আল রাজী, মো. মনিরুজ্জামান, মো. মিজানুল হক চেীধুরী এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশের উপ-আবাসিক প্রতিনিধি নুয়েন ভ্যান। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আশরাফ উদ্দিন।

অনলাইনে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন, এফবিসিসিআই’র পরিচালক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ‌্যাপক ড. এম এ এ শওকত, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মো. মহাসিন সরদার ও সন্দ্বীপ বিশ্বাস, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর শরীফ হারুনুর রশীদ, প্রকল্পের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

কর্মশালায় জানানো হয়, এসি উৎপাদনে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী এইচসিএফসি গ্যাসের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধের লক্ষ্যে জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ‘এইচসিএফসি ফেজ আউট ম্যানেজমেন্ট প্ল‌্যান (এইচপিএমপি স্টেজ টু)’ প্রকল্প হাতে নিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে পরিবেশ অধিদপ্তর ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডসহ ছয়টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে। প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়ন হলে প্রযুক্তি পরিবর্তনের মাধ‌্যমে ২০২৫ সালের মধ্যে ৩১০ মেট্রিক টন এইচসিএফসি গ্যাসের ব্যবহার হ্রাস পাবে।

কর্মশালার প্রধান অতিথি মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘ওডিএস নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ যে সাফল্যসূচক পুরস্কার পেয়েছে, তাতে অবদান আছে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ইউএনডিপিসহ সংশ্লিষ্ট সবার। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে শুধু এইচসিএফসি ব্যবহারই হ্রাস পাবে না, একই সঙ্গে ১৭ লাখ টন কার্বন-ডাইঅক্সাইডের সমপরিমাণ গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস পাবে।'

কর্মশালার সভাপতি মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘মন্ট্রিল প্রটোকলের সদস্য দেশ হিসেবে এইচসিএফসি ফেইজ আউটের লক্ষমাত্রা অর্জনে প্রকল্পটি ভূমিকা রাখবে।’

ইউএনডিপি’র প্রতিনিধি নুয়েন ভ্যান পরিবেশ সুরক্ষায় ইউএনডিপি এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের বিষয়ে উল্লেখ করে সহায়তা অব্যাহত রাখার কথা জানান।

এফবিসিসিআই’র পরিচালক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এসির চাহিদা প্রতিবছর ব্যাপক বাড়ছে। এই চাহিদার উল্লেখযোগ্য অংশ বিদেশি, বিশেষ করে চীন থেকে আমদানি করা এসি দিয়ে পূরণ করা হচ্ছে। এসব এসিতে শীতক হিসেবে এইচসিএফসি গ্যাস ব্যবহার করা হলে দেশীয় এসি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নেওয়া এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সুফল মিলবে না।’

তার এই বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে ‘এইচপিএমপি স্টেজ ২’ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী দেশের শীর্ষ ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মো. মহাসিন সরদার বলেন, ‘ওয়ালটন এখন দেশেই ভিআরএফ ও চিলার প্রযুক্তির অত্যাধুনিক ও উচ্চ মানের ইন্ডাস্ট্রিয়াল এসি তৈরি করছে। দেশে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এসির ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের লক্ষ্যেই ওয়ালটনের এ উদ্যোগ।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরিবেশ সংরক্ষণ ও সুরক্ষায় ওয়ালটন সর্বদা সচেতন। ইকো-ফ্রেন্ডলি উৎপাদন ব্যবস্থা এবং রেফ্রিজারেশন সিস্টেম ব্যবহার করে বিশ্ব শীতল রাখতে ওয়ালটন সব সময়ই সচেষ্ট। এর আগে ইউএনডিপি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সহায়তায় বিশ্বের প্রথম এইচএফসি ফেজ আউট প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে ওয়ালটন। এর আওতায় ফ্রিজ ও কম্প্রেসরে এইচএফসি-১৩৪এ রেফ্রিজারেন্টের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব এইচসি-৬০০এ (আইসোবিউটেন) রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে বাৎসরিক প্রায় ২৩০ মেট্রিক টন এইচসিএফসি গ্যাসের নিঃসরণ হ্রাস পেয়েছে। এবার এইচপিএমপি স্টেজ-২ প্রকল্পের আওতায় ওয়ালটনের এসি কারখানায় দুটি উৎপাদন লাইনে আর-২২ রেফ্রিজারেন্টের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব আর-২৯০ এবং আর-৩২ রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহারের প্রযুক্তি রূপান্তর করা হবে। নতুন এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে আরো প্রায় ১২.২২ টন ওজোনস্তর ক্ষয়কারী গ্যাসের নিঃসরণ হ্রাস পাবে।’

অধ্যাপক ড. এম এ এ শওকত বলেন, ‘বায়ুমণ্ডলে ক্ষতিকারক এইচসিএফসি গ্যাসের নিঃসরণ কমাতে দেশের এই উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে ক্ষতিকারক এই রেফ্রিজারেন্টমুক্ত এসি আমদানি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’

কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে প্রকল্প পরিচালক ইলিয়াস মাহমুদ ওজোন স্তর সুরক্ষাবিষয়ক প্রকল্প বাস্তবায়নে এগিয়ে আসায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

ঢাকা/পলাশ/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়