ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

চার শর্তে ফারইস্ট লাইফের পর্ষদ ফের পুনর্গঠন

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৫৪, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২  
চার শর্তে ফারইস্ট লাইফের পর্ষদ ফের পুনর্গঠন

নানা আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদ চারটি শর্তে ফের পুনর্গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। পর্ষদ পুনর্গঠন করে ছয়জন স্বতন্ত্র পরিচালক ও শেয়ার ধারণের মাধ্যমে চারজন মনোনীত পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে কমিশন।

সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান এবং ডিএসই, সিএসই ও সিডিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর পাঠিয়ে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কোম্পানিটির চেয়ারম্যান, সদ্য নিয়োগ দেওয়া স্বতন্ত্র পরিচালক এবং মনোনীত পরিচালকদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।

এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে জারি করা চিঠিটি এই চিঠি জারির পর বাতিল বলে গণ্য হবে বলে জানিয়েছে কমিশন।

বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বিনিয়োগকারী এবং শেয়ার বাজারের বৃহত্তর স্বার্থে কমিশন ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের পুনর্গঠনে সম্মতি দিয়েছে। ছয় ব্যক্তিকে স্বতন্ত্র পরিচালক এবং চারজনকে শেয়ার ধারণের মাধ্যমে মনোনীত পরিচালক হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।

নিয়োগপ্রাপ্ত স্বতন্ত্র পরিচালকরা হলেন—শেখ কবির হোসেন, ডা. লাফিফা জামাল, মোজাম্মেল হক, মো. ইব্রাহিম হোসেন খান, শেখ মামুন খালেদ এবং ডা. মো. রফিকুল ইসলাম। মনোনীত পরিচালকরা হলেন— আলহাজ মো. হেলাল মিয়া, ফারইস্ট সিকিউরিটিজ, ট্রেডেনেক্সট ইন্টারন্যাশনাল ও জুপিটার বিজনেস।

ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদ ফের পুনর্গঠনের শর্তগুলো মধ্যে আছে—পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদের শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের বিষয়ে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সম্মতি থাকবে। সেই সঙ্গে পরবর্তী সাধারণ সভায় পোস্ট-ফ্যাক্টো হিসেবে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নিতে হবে।

এছাড়া, ট্রেডেনেক্সট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ৯.৯১ শতাংশ, জুপিটার বিজনেস লিমিটেড ৯.৯০ শতাংশ এবং ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ২ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করে আছে। এজন্য তাদেরকে কোম্পানিটির মনোনীত পরিচালক নির্ধারণ করতে হবে। সেক্ষেত্রে তাদের মধ্য থেকে এক বা একাধিক ব্যক্তি হতে পারে।

এদিকে, কোম্পানিটির পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদ কমিশনের নূন্যতম শেয়ার ধারণের নির্দেশনা অনুযায়ী কমপক্ষে স্বতন্ত্রভাবে পরিচালকদের ২ শতাংশ এবং কোম্পানির উদ্যোক্তা এবং পরিচালকদের দ্বারা সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার বজায় রাখার বিষয় নিশ্চিত করতে হবে৷

অপরদিকে, উপরোক্ত শেয়ারসহ কোম্পানির উদ্যোক্তা এবং পরিচালকদের হাতে থাকা সমস্ত শেয়ার ব্লক-মডিউলের অধীনে লক-ইন থাকবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শামসুদ্দিন আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদ পুনরায় পুনর্গঠন করা হয়েছে। এর আগেও কোম্পানিটির পর্ষদ পনর্গঠন করা হয়েছিল। সেখানে যারা ছিলেন, তারা সবাই ছিল স্বতন্ত্র পরিচালক। তবে, বর্তমানে কোম্পানিটির কিছু শেয়ার হোল্ডিং পরিচালক আছে। তাই, সার্বিক দিক বিবেচনায় কমিশন কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ফের পুনর্গঠন করেছে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের গত ১ সেপ্টেম্বর বিএসইসি থেকে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ অপসারণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্যাহকে চেয়ারম্যান করে ১০ সদস্যের স্বতন্ত্র পরিচালকের একটি পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়। সে সময় ফারইস্ট ইসলামী লাইফের পুনর্গঠিত পর্ষদের সদস্যরা ছিলেন—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্যাহ, মোহাম্মদ সানাউল্লাহ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের সিইও মোহাম্মদ সানাউল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মো. মোফাজ্জল হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা কর্নেল গাজী মো. খালিদ হোসেন, এসএমএসি ও এসএসএসির পার্টনার স্নেহাশিষ বড়ুয়া, একাত্তর মিডিয়ার এমডি অ‌্যান্ড চিফ এডিটর মোজাম্মেল হক, জি৭ সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান সুজাদুর রহমান, জনতা ব্যাংকের ডিএমডি জিকরুল হক এবং নর্দান জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম চৌধুরী। তবে পর্ষদ পুনর্গঠনের এক মাসের মধ্যে ১০ অক্টোবর ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পুনর্গঠিত পর্ষদের চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেন।

এদিকে, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে নানা আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে যৌথ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি। চারটি সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৯ এর বিধি ৫৪ অনুযায়ী যৌথ অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিএসইসির নেতৃত্বে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অন্যান্য সংস্থার মধ্যে আছে—দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

এনটি/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়