ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

‘বাজেট বরাদ্দে প্রয়োজনীয়তার চেয়ে রাজনীতি বেশি গুরুত্ব পায়’

বিশেষ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৩৭, ২ এপ্রিল ২০২২  
‘বাজেট বরাদ্দে প্রয়োজনীয়তার চেয়ে রাজনীতি বেশি গুরুত্ব পায়’

গোলটেবিল আলোচনা সভায় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ‘বাজেট বরাদ্দে প্রয়োজনীয়তার চেয়ে রাজনীতি গুরুত্ব পায় বেশি। বরাদ্দ দিতে গিয়ে সরকার এক ধরনের ঠেকার মধ্যে পড়ে। কায়েমী স্বার্থ বরাদ্দ বিভাজনকে প্রভাবিত করে। বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, তা গণতান্ত্রিক সমাজে থাকা উচিত নয়। হঠাৎ করে এই বেড়াজাল ভাঙা সহজ নয়। তবে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা চেষ্টা করছেন। আশা করা যায়, তিনি সফল হবেন।’

শনিবার (২ এপ্রিল) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সিএ ভবনে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) ও ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি। ‘সামষ্টিক অর্থনীতি: ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে প্রত্যশা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন আইসিএবির সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন।

আলোচনায় বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ ও হিসাববিদরা রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার, করপোরেট কর কমানো, করোনার প্রভাব মোকাবিলা, রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্টি হওয়া নতুন বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে করণীয়, এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি, এসএমই খাতের বিকাশ, সরকারি ব্যয়ের সুষ্ঠু ব্যবহার, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাজেট বরাদ্দ দেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।

এসব আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংস্কার খুবই জরুরি। অনুৎপাদনশীল খাতে সরকারি বরাদ্দ দেওয়া অন্যায়।’

তিনি বলেন, ‘অনেক সমস্যার মধ্যেও বর্তমান সরকার গত ১০ বছরে লক্ষ্যমান, দৃশ্যমান ও প্রত্যাশা অনুযায়ী উন্নয়ন করেছে। দেশে ব্যবসায় পরিবেশে সমস্যা আছে। তবে বড় সমস্যা হচ্ছে—একটি শ্রেণি বলছে, তারা নির্বাচনে যাবে না। নির্বাচনের পরিবেশ নেই। তারা খেলা ভণ্ডুল করার প্রয়াশ থেকে এসব বলছে। এ ধরনের মতামতের বিষয়ে দেশের ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজকে মতামত জানাতে হবে।’

অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তব্য রাখেন আইসিএবির সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন। তিনি বলেন, ‘দেশ এগোচ্ছে। তবে, বৈষম্যও বাড়ছে। এর কারণ হচ্ছে—পরোক্ষ কর।’

প্রত্যক্ষ কর ও অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিবর্তে বৈদেশিক ঋণ সহায়তার ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘স্বয়ংক্রিয় রাজস্ব ব্যবস্থা, করের অর্থের সঠিক ব্যবহার, সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোসহ সুষ্ঠু বিতরণ ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।’

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশনের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘বাজেটে থেকে যে বিনিয়োগ হয়, সেখানে সংস্কার দরকার। শিক্ষা খাতের জন্য পূর্ণাঙ্গ বাজেট দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাতির জনক যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করেছিলেন। তখন ডিজিপি ছিল ১৪ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে ৪০০ বিলিয়ন ডলারের জিডিপি নিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা কেন জাতীয়করণ হবে না?’

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘করোনা পরবর্তী পুনরুদ্ধার ভালো হচ্ছে। তবে বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সুচিন্তিত পদক্ষেপ দরকার। আমদানি ব্যয় বেড়েছে। এখন রিজার্ভ খরচের বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। এখন সুদহারে সর্বোচ্চ সীমা রাখা ঠিক হবে না।’

তিনি কর নীতি ও কর প্রশাসনকে আলাদা করা, এসএমই খাতের বিকাশের জন্য গ্যারান্টি স্কিম বাড়ানো, ভ্যাট আইন সংস্কারের প্রস্তাব করেন।

এমসিসিআই সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘করোনার কারণে গত দুই বছর পরিকল্পনা অনুযায়ী অনেক কাজ করা সম্ভব হয়নি। ফলে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা পুনঃমূল্যায়ন করা দরকার। কারণ, এই পরিকল্পনা যখন করা হয়েছিল, তখন করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ছিল না।’

তিনি কপোরেট কর কমানো ও সকল রপ্তানি খাতে সমান সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করেন।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, ‘আগামী অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৩০ শতাংশের বেশি ধরা ঠিক হবে না।’

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, ‘খাদ্য উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয়, সে উদ্যোগ দরকার। পাশাপাশি পেট্রোলিয়াম পণ্যের দাম এমনভাবে সমন্বয় করতে হবে যাতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সমস্যায় না পড়েন।’

ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান বলেন, ‘অগ্রিম আয়কর নেওয়া বন্ধ করতে হবে। অগ্রিম আয়কর বাবদ যে টাকা সরকারের কাছে যেত, সেই টাকা কোম্পানিগুলো যাতে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি উৎসে কর নেওয়া বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ছাড়া অন্য কেউ এ কর নেয় না। কর সবাই দিতে চায়, কিন্তু করের ঝামেলা কেউ নিতে চায় না। এজন্য কর কর্তৃপক্ষের সংস্কার দরকার। এনবিআর মনে করে, তারা রাজা আর করদাতারা প্রজা।’

তিনি ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাপেক্সকে শক্তিশালী করা, কয়লা উত্তোলন বাড়ানো ও পিপিপিতে ভালো প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেন।

সরকারের দেওয়ার প্রণোদনা কোথায় কীভাবে বিনিয়োগ হচ্ছে, তা দেখার দাবি জানান প্রথম আলোর বার্তা সম্পাদক শওকত হোসেন মাসুম। খেলাপি ঋণসহ ব্যাংকিং খাতের সমস্যা সমাধানে ব্যাংক কমিশন গঠন ও সরকারের ব্যয় পর্যালোচনা কমিশন গঠনেরও প্রস্তাব করেন তিনি।

গোলটেবিল আলোচনা সঞ্চালনা করেন আইসিএবির সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, ‘শিল্প খাতে অর্থায়নে অতিমাত্রায় ব্যাংকনির্ভরতা দূর করতে পুঁজিবাজার ও বন্ড বাজারকে উন্নত করতে হবে।’

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন—আইসিএবির সিইও শুভাশীষ বসু, ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভী ও সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম।

হাসনাত/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়