রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়ছে খাদ্য পণ্যের ওপর: বাণিজ্যমন্ত্রী
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম
বিএসআরএফ আয়োজিত সংলাপে বানিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রনের যুদ্ধ অনেকটা প্রভাব ফেলেছে আমাদের খাদ্য পণ্যের উপর। সেজন্য সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। সামনের দিকে কিছুটা সঙ্কট রয়েছে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। শ্রীলঙ্কার অবস্থা দেখে অনেকে প্রচার করছে আমাদের অবস্থা তেমনটা হতে পারে। তবে সেরকম কোনো সম্ভবনা নেই। আমরা নিজেরাই শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দিয়েছি।’
সোমবার (১৬ মে) সকাল ১১টার দিকে সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) আয়োজিত 'বিএসআরএফ সংলাপ'-এ তিনি এসব কথা বলেন।
ভোজ্য তেলের ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘তেল মজুত রাখার দায়ে প্রচুর ব্যবসায়ীকে আমরা ধরছি। পরে সেই তেল ন্যায্য দামে বিক্রি করছে ভোক্তা অধিকার। সেখানে অনেকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে এবং জেলেও পাঠানো হয়েছে। তবে এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইনা যাতে বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়। রমজান মাসটা সংযমের মাস। ব্যবসায়ীরা জানতেন ঈদের পর দাম বাড়বে তারা সেই সুযোগ নিয়েছে। তবে আমাদের ভুল হয়েছে টানা দুই মাস তেলের দামটা নির্ধারন করিনি। যদি করতাম তাহলে তারা সুযোগটা নিতে পারতেন না। এ সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামটা বেড়েছিলো, তাই সেটি আগে নির্ধারণ করলে সমস্যা হতো না।’
ব্যবসায়ীরা সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা উচিত না। আমরা ব্যবসায়ী বান্ধব। আমরা আন্তর্জাতিক বাজারের দাম অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করে দেই। সে অনুযায়ী বাজারে দামটা থাকলে বাজার স্থিতিশীল থাকবে। আমরা বাজার স্থিতিশীল রাখতে চাই।’
পেঁয়াজের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পেঁয়াজের আইপি বন্ধ করে কৃষি মন্ত্রণালয়। কৃষকরা যাতে দাম পায় সেটি দেখতে হবে। আমরা দেখছি কৃষকরা যাতে অন্তত ২৫ টাকা পায়। বাকি ট্রান্সপোর্টসহ অন্য খরচ মিলে ঢাকার মানুষ ৪৫ টাকায় যাতে খেতে পারে। কৃষকরা যাতে দাম পায় এবং ভোক্তারাও যাতে কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পারে সেটি আমরা দেখছি।’
বর্ডার হাট সম্পর্কে টিপু মুনশি বলেন, ‘ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে কথা বলেছিলাম এ বিষয় নিয়ে। আশা করছি তিন চারটি প্রোপাজাল দেবো। মিজুরামে গিয়েও আলোচনা হয়েছে। ছোট রাজ্য হলেও তারা এটি খুব পজিটিভলি দেখছে। একটা সাজেকের কাছাকাছি আরেকটি ২০-২৫ কিলোমিটার দূরে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এটি নিয়ে দ্রুত দেখতে।’
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অবস্থা ভালো থাকলে দেশের অবস্থাও ভালো থাকে। আমি বৈশ্বিক সমস্যার মধ্যে আছি। তেল, চিনি, ডালের দাম নিয়ে একটু সমস্যা হচ্ছে। তেলের ৯০ ভাগ আমাদের আমদানি করে আনতে হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে দামের প্রভাব হলে আমাদের দেশেও দাম বেড়ে যায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে কয়েকটি পণ্য আছে যেগুলো আমরা মনিটর করি। ঈদের আগে তেলের দাম নিয়ে অনেক কথা এসেছে। আমাদের মন্ত্রণালয় প্রতি মাসে একবার বসে ট্যারিফ কমিশন এই প্রাইজিংটা করেন। সবকিছু এভারেজ করে দামটা নির্ধারন করা হয়। আমাদের একটা বিশেষ কারণ ছিলো, ঈদের মাসটাতে আমরা দামটা বাড়াতে চাইনি। ব্যবসায়ীদের বলেছিলাম এই সময়টা ম্যানেজ করেন। তাই যেই সময়ে দামটা ফিক্স করা হয় সেখানে কিছুটা বিলম্ব হয়। যেহেতু তারা ভেবেছিলো ঈদের পর দামটা বাড়বে। সেজন্য অনেকে তেল জমিয়ে রেখেছিলেন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘এ মূহুর্তে পেঁয়াজের দাম একটু চড়া। তবুওও দাম মানুষের নাগালের মধ্যেই আছে। পেঁয়াজের দাম যদি কৃষক ২৫ টাকা পায় তাহলেও মোটামুটি পোষানো সম্ভব হয়। পরে সেটির সঙ্গে ট্রান্সপোর্টসহ কিছু কস্টিং যুক্ত হয়।’
বিএসআরএফ সংগঠনের সভাপতি পন বিশ্বাসের সভাপতিত্বে এ সময় অন্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক, যুগ্ন সম্পাদক মেহদী আজাদ মাসুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আকতার হোসেন, অর্থ সম্পাদক মো. শফিউল্লাহ সুমন, সদস্য ইসমাইল হোসাইন রাসেল, হাসিফ মাহমুদ শাহ প্রমুখ।
এএএম/ মাসুদ
আরো পড়ুন