ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বাজেটে প্রণোদনা ও বরাদ্দ দাবি নারী উদ্যোক্তাদের

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০৩, ২ জুন ২০২২   আপডেট: ০৯:২০, ২ জুন ২০২২
বাজেটে প্রণোদনা ও বরাদ্দ দাবি নারী উদ্যোক্তাদের

আসেছে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট। এই বাজেটে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আয়কর, লেনদেনের ওপর কর, করপোরেট কর সুবিধার দাবি করেছেন তারা।

এছাড়া কৃষি খাতের কর সুবিধা বাড়ানো, মুক্তিযোদ্ধাদের কর সুবিধা বাড়ানো, অনলাইনে প্রতি মাসে ভ্যালু অ্যাডেড টেক্স (ভ্যাট) দাখিল করা থেকে অব্যাহতি দিয়ে বছরের একবার তা দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়াসহ একগুচ্ছ দাবি তুলে ধরেছেন নারী উদ্যোক্তারা।

বুধবার (১ জুন) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) নারী উদ্যোক্তাদের বাজেট ভাবনা অনুষ্ঠানে এসব দাবি তুলেছেন উদ্যোক্তারা। উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিসার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে এফবিসিসিআই পরিচালক প্রীতি চক্রবর্তী, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) প্রেসিডেন্ট শারমিন রিনভী, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক পারিসা শাকুর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য শাহনাজ পারভীন, ওয়েল্ড প্রেসিডেন্ট ড. নাদিয়া বিনতে আমিন, চায়না বাংলা চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক মেহেরুন নেসা ইসলাম ছাড়াও উদ্যোক্তারা বক্তব্য রাখেন।

এফবিসিসিআই পরিচালক প্রীতি চক্রবর্তী বলেন, নারী উদ্যেক্তাদের জন্য কি ধরনের সুবিধা দরকার তা আমরা পলিসি মেকারদের বুঝাতে পারছি না। পলিসি মেকাররা মনে করেন নারী উদ্যোক্তা মানে শ্রমিক, গার্মেন্টস কর্মীদের নিয়ে কাজ করা।  নারীর উন্নয়নে বাজেট বরাদ্দ থাকলেও তা পেতে নানা জটিলতায় পড়তে হয়। সেখান থেকে বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, নারীর গৃহকর্মকে অর্থনীতির মূল ধারায় নিয়ে আসলে জিডিপির আকার বাড়বে। নারীর উন্নয়ন ও তাদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলার বিষয়টি বেসরকারি খাতে দেওয়া উচিত। আর সেই সঙ্গে নারীর উন্নয়নের জন্য বেরসকারি খাতে নির্দিষ্ট করে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।

ওয়েল্ড প্রেসিডেন্ট ড. নাদিয়া বিনতে আমিন বলেন, আগামী বাজেটে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আয়করমুক্ত সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করার দাবি জানাই। তাছাড়া লেনদেনের কর সুবিধা দিতে, প্রতি মাসে অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন না দিয়ে বছরে একবার দেওয়ার প্রস্তাব করেন তিনি। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিদ্যমান করপোরেট করহার ১০ শতাংশ কমিয়ে ২০ শতাংশ করার, তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার ৫ শতাংশ ব্যবধান রাখার, এগ্রো ব্যবসায় আয়কর মুক্ত সীমা বাড়ানোর দাবি জানান। এছাড়া কার্বন নিঃসরণ যেসব প্রতিষ্ঠানের জন্য হচ্ছে তাদের ওপর বেশি কর আরোপ করার প্রস্তাব করেন।

এছাড়া বাজেটে নারীদের জন্য রাখা থোক বরাদ্দ পাওয়ার বিষয়টি সহজ করার আহ্বান জানান তিনি। তাছাড়া ৬৫ বছরের বেশি নারীদের করমুক্ত আয় সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা করা, মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে পৌনে ৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত সীমা রাখার দাবি জানান।

ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) প্রেসিডেন্ট শারমিন রিনভী বলেন, সরকার নারী উদ্যোক্তাদের জন্য পলিসি সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে। প্রতি বছর বাজেটে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ বাড়ছে। তবে কতটুকু নারী উদ্যোক্তারা পাচ্ছে সেটি স্পষ্ট নয়। বাজেটের কতটুকু নারী উদ্যোক্তারা বরাদ্দ পাচ্ছে তার একটি সুনির্দিষ্ট তথ্য উপাত্ত থাকা উচিত। তাহলে কোন খাতের উদ্যোক্তারা বেশি বরাদ্দ পেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আবার কোন খাত পিছিয়ে পড়ছে তা দেখা যাবে।

তিনি বলেন, বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ হার ও এর পরিধি বাড়াতে হবে। তাছাড়া মানবসম্পদকে কাজে লাগাতে হলে অদক্ষ নারীদের বিদেশে না পাঠিয়ে তাদেরকে দক্ষ করে সম্মানজনকভাবে কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। তাতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রবাহ যেমন বাড়বে তেমনি দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে উঠবে। একই সঙ্গে এমন সমাজ আমাদের গড়ে তুলতে হবে যেখানে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সমান তালে এগিয়ে যাবে। এভাবে নারীরা দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। ব্যবসা করতে গেলে  যেসব কাগজপত্র দরকার হয় তা নারীদের সহজে পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে বলেও জানান তিনি।

বিআইডিএস গবেষক তাহরিন তাহরিমা চৌধুরী বলেন, সরকার নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে ভাবছে বলেই করোনা মহামারির সময় প্রণোদনা দিয়েছে। উদ্যোক্তাদের কাজ করতে গিয়ে কোথায় সমস্যা হচ্ছে সেগুলো খুজে বের করতে হবে। তাহলে দ্রুত সমাধান সম্ভব হবে।

ময়মনসিংহের নারী উদ্যোক্তা তানিয়া সুলতানা বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য স্বতন্ত্র নীতিমালা জরুরি। যা শুধু নারীদের জন্য কাজে আসবে। তিনি তাঁত শিল্পের কাচামাল সহজে পাওয়ার জন্য আগামী বাজেটে সুযোগ রাখার দাবি জানান।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, নারী উন্নয়নের স্বার্থে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে, নারীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। এর আগে আমাদের মানসিকতা ঠিক করতে হবে। তাছাড়া নারীদের উন্নয়ন সম্ভব নয়। নারীদের কাজকে সহজ করতে জেলা পর্যায়ে ওয়ান স্টপ সেন্টার স্থাপন করতে হবে। তাহলে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যবসা বাণিজ্য সহজ হবে। সেই সঙ্গে বাজেট প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়ন হলে নারী উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।  

/নাজমুল/সাইফ/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়