ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

গালফ ফুডসের নথি তলব

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৪১, ৭ জুন ২০২২  
গালফ ফুডসের নথি তলব

পুঁজিবাজারে ওভার দ্য কাউন্টারে (ওটিসি মার্কেট) তালিকাভুক্ত কোম্পানি গালফ ফুডসের কারখানা ও অফিস পরিদর্শন করেছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। সেই পরিদর্শন সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) জমা দিয়েছে সিএসই। ওই প্রতিবেদনে কোম্পানিটির একাধিক সমস্যা তুলে ধরা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিটিকে সংশ্লিষ্ট নথি এবং প্রাসঙ্গিক কাগজপত্রসহ কোম্পানির অবস্থান ব্যাখ্যা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য সকল প্রয়োজনীয় এবং প্রাসঙ্গিক আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কমিশন।

সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি চিঠি কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিচালনা পর্ষদ ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) এবং সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) ব্যবস্থপনা পরিচালক বরাবর পাঠিয়েছে বিএসইসি।

বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, বিএসইসি থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ করা নির্দেশনা ও আদেশ অনুযায়ী ওটিসি মার্কেটে লেনদেন করা কোম্পানির কারখানা ও অফিস পরিদর্শন করেছে সিএসই। সেই পরিদর্শনের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করার পরে কোম্পানির বিভিন্ন সমস্যা প্রকাশ করা হয়েছে।

সমস্যাগুলো হচ্ছে—কোম্পানিটি ১৯৯৭ সালে সিএসইতে তালিকাভুক্ত হয় এবং আইপিও, আরপিও ও আরওডির মাধ্যমে পরিশোধিত মূলধন ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা বৃদ্ধি করে। বর্তমান পরিশোধিত মূলধন হল ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এছাড়া, সিএসইর রেকর্ড অনুযায়ী, গালফ ফুডস লিমিটেডের শেষ এজিএম ২০১৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর হয়েছিল। ২০১৬ সাল থেকে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ আছে এবং কারখানা প্রাঙ্গণে কোনো যন্ত্রপাতি পাওয়া যায়নি।

এদিকে, পরিদর্শনদলটি কোম্পানির ঢাকা অফিসের নিবন্ধিত ঠিকানা পরিদর্শন করেছে। কিন্তু, সেখানে কোম্পানির কার্যালয় খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে, গালফ ফুডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটি অভিহিত মূল্যে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের বিনিয়োগ মীমাংসার জন্য অন্য কোম্পানির অফিস প্রাঙ্গণ ব্যবহার করছে।

কোম্পানিটি ২০১৬ সালের ২৯ জুন ইজিএমে তাদের ব্যবসা স্বেচ্ছায় বন্ধ করার জন্য একটি রেজুলেশন পাস করে এবং পরবর্তীতে পুঁজিবাজার থেকে তাদের প্রস্থানের জন্য কমিশনে আবেদন করে।

এদিকে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোম্পানিটি তাদের শেয়ারহোল্ডারদের মোট ২৫ লাখ ৮৪ হাজার শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ার ছাড়া মাত্র ৪ লাখ ১৯ হাজার ৫০০টি শেয়ার নিষ্পত্তি করেছে। সর্বশেষ শেয়ার ধারণ রিপোর্ট অনুযায়ী, উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা ৩২ শতাংশ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৪৮ শতাংশ এবং সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা মোট শেয়ারের ৬৩.১২ শতাংশ ধারণ করে।

পরবর্তীতে ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বিএসইসির নোটিফিকেশনের শর্ত অনুসারে, কোম্পানিটিকে ওটিসি মার্কেট থেকে সম্পূর্ণ বের করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এবং বিজ্ঞপ্তি জারির ২ মাসের মধ্যে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে অনুমিত দেওয়া হয়েছিল।

এদিকে, কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা (স্পন্সর/পরিচালক ব্যতীত) কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ৬৮ শতাংশ শেয়ার ধারণ করেন, তারা দীর্ঘ সময়ের জন্য লভ্যাংশ পাচ্ছেন না, যা কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর এবং কমিশনের কাছে হতাশাজনক।

বিএসইসি চিঠিতে আরও জানিয়েছে, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯-এর ধারা ১১(২) এর অধীনে এই চিঠি জারির ৭ দিনের মধ্যে নিম্নলিখিত নথি এবং অন্য কোনো প্রাসঙ্গিক কাগজপত্রসহ কোম্পানির অবস্থান ব্যাখ্যা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কমিশন কর্তৃক সকল প্রয়োজনীয় এবং প্রাসঙ্গিক আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

যেসব তথ্য জমা দিতে বলা হয়েছে, জমির মিউটেশন কপিসহ বর্তমান জমির অবস্থার বিবরণ, বর্তমান উৎপাদন অবস্থা এবং উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার পর কোনো পিএসআই প্রকাশিত হয়েছে কি না, কেন কোম্পানি ওটিসি বাজার থেকে প্রস্থান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেনি, কোম্পানির জমির এলাকাসহ পিপিই (সম্পত্তি, প্ল্যান্ট এবং সরঞ্জাম) এর পুনর্মূল্যায়ন প্রতিবেদন, কোম্পানির গত ৫ বছরের আর্থিক বিবরণী, ওটিসি বাজারে যাওয়ার পর যেকোনো স্থায়ী সম্পদের নিষ্পত্তির বিবরণ, ডিএমএটি শেয়ারের ক্ষেত্রে বা আরআইএসসির প্রত্যয়িত শিডিউল-এক্সসহ শেয়ার প্রত্যয়নপত্রের অনুলিপি, ডিপিএ- ৬ এর অনুলিপি ও আইপিও/আরপিও/আরওডি এর ব্যবহার প্রতিবেদনের অগ্রগতি।

এনটি/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়