ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

খেলাপি ঋণ আদায়ে নজরদারি বাড়ছে

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১৬, ৭ জুলাই ২০২২  
খেলাপি ঋণ আদায়ে নজরদারি বাড়ছে

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো নানা উদ্যোগ নিয়েও খেলাপি ঋণ কমাতে পারছে না। মূল লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সংশোধিত কম লক্ষমাত্রাও তারা আদায় করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এক বছরে মূল লক্ষ্যমাত্রার ৬৯ ভাগ এবং সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার ৭৫ ভাগ খেলাপি ঋণ আদায় হয়েছে। ঋণ আদায়ের ওপর মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটরিং বাড়ানো হচ্ছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

খেলাপি ঋণ আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থতার শীর্ষে সোনালী ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকের নামও রয়েছে। বেসিক ও বিডিবিএলও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী খেলাপি ঋণ আদায় করতে পারেনি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর পরিসংখ্যানে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে সম্পাদিত ‘বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি’র (এপিএ) আওতায় সদ্য সমাপ্ত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের মোট মূল লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। কিন্তু খেলাপি ঋণ আদায় কার্যক্রম সন্তোষজনক না হওয়ায় ২০২১ সালের নভেম্বরে অগ্রণী ব্যাংক, রূপলী ব্যাংক  ও বেসিক ব্যাংক খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১৩৫ কোটি টাকা কমিয়ে আনা হয়। ফলে ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের সংশোধিত বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় এক হাজার ৪৭০ কোটি টাকা।

এই লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এক বছরে ব্যাংকগুলো মোট খেলাপি ঋণ আদায় করেছে প্রায় এক হাজার ১১৩ কোটি টাকা। এটি মূল লক্ষ্যমাত্রার ৬৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার ৭৫ দশমিক ৭১ শতাংশ। গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ছয় ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ ছিল এক হাজার ১৭৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে সমাপ্ত অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণ আদায় কমেছে ৬০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য থেকে জানা গেছে, একক ব্যাংক হিসেবে ছয় ব্যাংকের মধ্যে সোনালী, জনতা, বেসিক ও বিডিবিএল ব্যাংক খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। অপর দুটি ব্যাংক অগ্রণী ও রূপালী খেলাপি ঋণ আদায়ে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করলেও তা মূল লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম।

পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৫০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটি আদায় করেছে ৩০৬ কোটি টাকা। আদায়ের হার ৬৮ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরে (২০২০-২০২১) সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ ছিল ৪৭১ কোটি টাকা (আদায়ের হার ১০৫ ভাগ)। অর্থাৎ সমাপ্ত অর্থবছরে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ কমেছে।

জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৫০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় করেছে ২১২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এটি বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ৪৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ ছিল ৩০৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা (আদায়ের হার ছিল ৬৫ ভাগ)।

এপিএর মূল চুক্তিতে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০০ কোটি টাকা। সংশোধিত চুক্তিতে এটি কমিয়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটি আদায় করেছে ৩৮০ কোটি টাকা। আদায়ের হার ১০৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ (মূল লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আদায়ের হার ৯৫ ভাগ)। এর আগের অর্থবছরে অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ ছিল ২৫২ কোটি টাকা (আদায়ের হার ছিল ৬৩ ভাগ)।

এপিএর মূল চুক্তিতে রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪০ কোটি টাকা। সংশোধিত চুক্তিতে এটি কমিয়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ৭০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটি আদায় করেছে ১০৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। আদায়ের হার ১৫৫ শতাংশ (মূল লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আদায়ের হার ৭৭.৫৪ ভাগ)। এর আগের অর্থবছরে রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ ছিল ৬৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা (আদায়ের হার ছিল ৪৮ ভাগ)।

এপিএর মূল চুক্তিতে বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২৫ কোটি টাকা। সংশোধিত চুক্তিতে এটি কমিয়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটি আদায় করেছে ৮৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আদায়ের হার প্রায় ৮৫ শতাংশ (মূল লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আদায়ের হার ৬৭.৯০ ভাগ)। এর আগের অর্থবছরে বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ ছিল ৪৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা (আদায়ের হার ছিল ৩৮ ভাগ)

বিডিবিএলের খেলাপি ঋণ আদায়ের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটি আদায় করেছে ২০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আদায়ের হার ৫০ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরে বিডিবিএলের খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ ছিল ৩২ কোটি ১০ লাখ টাকা (আদায়ের হার ছিল ৮০ ভাগ)।

এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রতি তিন মাস পরপর আমরা এপিএ চুক্তি অগ্রগতি পর্যালোচনা করি। তখন আমরা খেলাপি আদায়ে ব্যাংকগুলো নির্দেশনা দিে থাকি। কিন্তু কোভিডের কারণে গত দুই বছর এই গতি কিছু ধীর গতিতে চলছে। মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে খেলাপি ঋণ আদায়ে আরো সচেষ্ট হওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি মনিটরিং শক্তিশালী করা হয়েছে। 

/হাসনাত/সাইফ/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়