ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

নিরীক্ষা ছাড়াই প্রতিবেদন, সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৯, ২ অক্টোবর ২০২২  
নিরীক্ষা ছাড়াই প্রতিবেদন, সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব

নিরীক্ষা ছাড়াই প্রতিবেদন জমা দিচ্ছেন আইসিএবির সার্টিফিকেটধারী নিরীক্ষকরা। এই কাজকে বেআইনি, অনৈতিক ও উদ্বেগজনক হিসেবে অভিহিত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের আওতাধীন ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি)।

এফআরসির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো প্রকার নিরীক্ষা ছাড়াই বিভিন্ন সংস্থার নিজস্ব তৈরি আর্থিক বিবরণীকে সঠিক বলে প্রত্যয়ন করে নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দিচ্ছেন ‘দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ’ (আইসিএবি) এর সার্টিফিকেটধারী এক শ্রেণির নিরীক্ষক। এর ফলে বিভিন্ন নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা কাজের গুণগত মান প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে এবং সরকারের রাজস্ব আহরণ, ব্যাংকের ঋণ ব্যবস্থাপনা ও পুঁজিবাজারের ওপর বিরূপ প্রভাবসহ পেশাদার অ্যাকাউন্ট্যান্টসদের সুনাম নষ্ট হচ্ছে।

সূত্র জানায়, সম্প্রতি আইসিএবির প্রেসিডেন্টের কাছে এফআরসির পাঠানা এক চিঠিতে এমন অভিযোগ ও মন্তব্য করা হয়েছে। এই চিঠিটি অর্থ মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়েছে। 

জানা গেছে, ২০২১ সালের ২১ নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ১২ মে পর্যন্ত ৪৩টি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫০ জন নিরীক্ষকের কাজের গুণগত মান তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া এবং তদন্ত প্রতিবেদনের অনুলিপি সংস্থার দফতরে পাঠানোর জন্য আইসিএবিকে মোট ৩৫টি চিঠি দিয়েছে এফআরসি।

সূত্র জানায়, আইসিএবির ‘ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন সিস্টেম’ (ডিভিএস) পর্যালোচনা করে চিঠিতে এফআরসি বলেছে, গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৪০০ নিরীক্ষক ৪১ হাজার ৮২টি নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। এর মধ্যে যে ৫০ জনের নিরীক্ষা কাজের তদন্ত করতে বলা হয়েছে, সেসব নিরীক্ষক সম্মিলিতভাবে ১৭ হাজার ৪১টি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। অর্থাৎ অভিযুক্ত ৫০ জন নিরীক্ষক প্রায় ৪১ দশমিক ৪৮ শতাংশ এবং অবশিষ্ট ৩৫০ জন ৫৮ দশমিক ৫২ শতাংশ নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। নিরীক্ষা কাজের গুণগত মান অক্ষুন্ন রেখে যা কোনোভাবেই করা সম্ভব নয় এবং এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছে এফআরসি।

এফআরসির চিঠিতে বলা হয়েছে, অভিযুক্তদের অধিকাংশ প্রতিবেদনই কোনোরকম নিরীক্ষা কাজ না করেই বিভিন্ন সংস্থার নিজস্ব তৈরি আর্থিক বিবরণীকে ‘ট্রুথ অ্যান্ড ফেয়ার’ বলে প্রত্যয়ন করা হয়েছে। অভিযুক্তদের কাজের গুণগত মানের বিষয়ে প্রথম যখন আইসিএবিকে চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়, তখন তারা সম্মিলিতভাবে মোট ৯ হাজার ২৩টি নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু আইসিএবি কর্তৃক তদন্ত কাজ পরিচালনা করে দায়ী নিরীক্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় দেরির কারণে অভিযুক্ত ৫০ জন নিরীক্ষক আরও প্রায় ৭ হাজার ৮২০টি একই ধরনের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। তাদের অনেকেই এখনো কোনো ধরনের নিরীক্ষা কাজ না করেই নিরীক্ষা প্রতিবেদন দেওয়া অব্যাহত রেখেছেন, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

জানা যায়, এফআরসির গত ১২ মে’র চিঠির জবাবে ২৯ মে পাঠানো এক চিঠিতে আইসিএবি জানায়, ৩৯টি প্রতিষ্ঠানের ৪৫ জন নিরীক্ষকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৯ জন নিরীক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং সর্বমোট ২৭ জন নিরীক্ষকের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের তদন্ত সম্পন্ন ও অবশিষ্ট ২৩ জন নিরীক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে।

আইসিএবির জবাবের সূত্র ধরে এফআরসির সর্বশেষ চিঠিতে বলা হয়েছে, অবশিষ্ট ২৩ জন নিরীক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ হয়েছে কি না এবং শেষ হয়ে থাকলে দায়ীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে-তা এখনো এফআরসিকে জানানো হয়নি। পাশাপাশি প্রতিটি চিঠিতে তদন্ত প্রতিবেদনের অনুলিপি বা ছায়ালিপি পাঠানোর অনুরোধ জানানো হলেও তা পাঠানো হচ্ছে না। ফলে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর গুণগত মান সম্পর্কে অভিযোগের নিষ্পত্তি আইসিএবি কীভাবে করছে এবং অভিযুক্তদের কাজের গুণগত মান সম্পর্কে কোনো তথ্য কাউন্সিলের সভায় উপস্থাপন করা যাচ্ছে না।

সূত্র জানায়, অভিযুক্ত নিরীক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত পরিচালনা ও দায়ী নিরীক্ষদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে কালক্ষেপণের কারণে অন্য নিরীক্ষকরাও অভিযুক্ত নিরীক্ষকদের মতো কোনো নিরীক্ষা কাজ না করেই প্রতিবেদন দেওয়ার মতো বেআইনি ও অনৈতিক কাজে সম্পৃক্ত হচ্ছেন বলে এফআরসির কাছে রক্ষিত তথ্যে প্রতীয়মাণ হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে এফআরসি থেকে উল্লিখিত ৫০ নিরীক্ষকের নিরীক্ষা কাজের গুণগত মানের তদন্ত করে দায়িদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও কাউন্সিল সভায় উত্থাপনের জন্য তদন্ত প্রতিবেদন অবিলম্বে নির্বাহী পরিচালকের (এপিআর) কাছে পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে।

/হাসনাত/সাইফ/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়