ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ই-কমার্স থেকে ভ্যাট আদায় কার্যক্রম জোরদার হচ্ছে

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৬, ৬ অক্টোবর ২০২২   আপডেট: ০৯:৩৯, ৬ অক্টোবর ২০২২
ই-কমার্স থেকে ভ্যাট আদায় কার্যক্রম জোরদার হচ্ছে

মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) থেকে রাজস্ব আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এরই অংশ হিসেবে ই-কমার্স থেকে ভ্যাট আদায় কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে। 

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গঠিত ‘কর সংক্রান্ত বিধিবিধান ও পদ্ধতি সংস্কার’ বিষয়ক স্টাডি গ্রুপ-২-এর কর্মপরিকল্পনার উপসংহারে এসব পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর অর্থনীতির বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণের জন্য এই স্টাডি গ্রুপ গঠন করা হয়।

রাজস্ব আদায় বাড়ানোর জন্য সরকার বেশ কয়েক বছর ধরে ভ্যাট আদায় বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে আসছে। এরই অংশ হিসেবে চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে এ খাত থেকে ভ‌্যাট আদায়ের টার্গেট দেওয়া আছে এক লাখ ৪১ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। গেল অর্থবছরে (২০২১-২০২২) যা ছিল এক লাখ ২৭ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা।

স্টাডি গ্রুপের পরামর্শে বলা হয়েছে, এলডিসি থেকে উত্তরণে আইনি বিধিবিধানগুলো আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা ও দেশীয় বাস্তবতার নিরীখে অতি দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ এবং চলমান রাখতে হবে। এছাড়া, কর জিডিপি অনুপাত বাড়াতে প্রয়োজনীয় সমীক্ষা চালিয়ে তা কার্যকর করতে হবে। এলডিসি থেকে উত্তরণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং এর আওতাধীন বিভাগগুলোর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনে জরুরি ভিত্তিতে কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। কর সংক্রান্ত বিধিবিধান ও পদ্ধতি সংস্কার চলমান রাখা, মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ এবং কাঠামোগত সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের ফলে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রস্তুতি, পরিকল্পনা গ্রহণ, বাস্তবায়ন ও মনিটরিংয়ের জন্য গত বছর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ ও শুল্ক যৌক্তিককরণ’ বিষয়ক একটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়। এই উপ-কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও কাস্টমস সংক্রান্ত বিধিবিধান ও পদ্ধতি পর্যালোচনা করে একটি সুনির্দিষ্ট প্রতিবেদন প্রণয়নের লক্ষ্যে ৯ সদস্যবিশিষ্ট ‘স্টাডি গ্রুপ’ গঠন করা হয়।

সূত্র জানায়, শুল্ক বিভাগ, মূল্য সংযোজন কর বিভাগ ও আয়কর বিভাগের জন্য আলাদা আলাদা সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে স্টাডি গ্রুপ-২। ইতিমধ্যেই এসব কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর।

আয়কর বিভাগের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- সমন্বিত ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন কৌশলপত্র প্রণয়ন করা, বাংলা ভাষায় নতুন আয়কর আইন প্রণয়ন, অনলাইন সেবা বাড়ানো, বিশেষায়িত ইউনিট স্থাপন ও আয়কর ট্রাইব্যুনাল সংস্কার। মানবসম্পদ উন্নয়ন ও গবেষণা, কর পরিপালন। সংস্কার ও গবেষণা এবং বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি।

মূসক বিভাগের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- মূল্য সংযোজন কর আইন ও বিধির প্রয়োজনীয় সংস্কার, অটোমেশন সম্পন্ন করা, দেশীয় শিল্পের প্রতিরক্ষণ পর্যালোচনা, ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কমিয়ে আনা, ই-কমার্স খাত থেকে ভ্যাট আদায় বাড়ানো, কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস কমিয়ে আনা এবং ভ্যাটের আওতা বাড়ানো।

শুল্ক বিভাগের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, শুল্কহার বাউন্ড রেটের মধ্যে আনার জন্য বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) বাংলাদেশের শিডিউল পর্যালোচনা, ন্যূনতম আমদানি মূল্য তুলে দেওয়ার জন্য একটি ফেইজ-আউট পরিকল্পনা প্রণয়ন। সম্পূরক শুল্ক ও রেগুলেটরি ডিউটিকে স্টিম-লাইন করার জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা। সংশ্লিষ্ট অন্যান্য নীতির আলোকে বাংলাদেশের বিদ্যমান নীতিগুলো পর্যালোচনার জন্য গবেষণা। ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসিতে পর্যায়ক্রমে শুল্কহার কমানোর বিষয়টি সন্নিবেশ করার জন্য ন্যাশনাল ট্যারিফ পলিসি সম্পর্কিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি কর্তৃক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, স্টাডি গ্রুপের পরামর্শ নিয়ে ইতিমধ্যে অর্থমন্ত্রণালয়ে একটি সভা হয়েছে। এতে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা ছিলেন। এখন এই বিষয় নিয়ে আরো আলোচনা করে পরামর্শগুলো চূড়ান্ত করা হবে। স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর অর্থনীতির বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ঢাকা/হাসনাত/ইভা 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়