ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

অভাবের কাছে হার মেনেছে তন্ময়ের মেধা

নাসির উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ১৬ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অভাবের কাছে হার মেনেছে তন্ময়ের মেধা

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় গ ইউনিটে ২৫৮তম হবার অসামান্য কৃতিত্ব দেখিয়েছে মেধাবী শিক্ষার্থী তন্ময় চৌধুরী। কিন্তু টাকার অভাবে ভর্তি হওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে দরিদ্র ঘরে জন্ম নেওয়া তন্ময় চৌধুরীর।

সে চট্টগ্রামের চন্দনাইস থানার মোহাম্মদপুর গ্রামের সদ্য প্রয়াত রতন চৌধুরীর ছেলে। তিন বোনের এক ভাই সে, এদের মধ্যে তন্ময় তৃতীয়। বড় দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। পরিবারের ছোট মেয়েটি স্থানীয় একটি স্কুলে ১০ম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। কিন্তু অভাবের সংসারে তন্ময়ের মা লক্ষ্মী চৌধুরীর সংসার চালানোর খরচ তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাই ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার পথে।

তন্ময়ের বাবা রতন চৌধুরী স্থানীয় একটি দোকানে দর্জির কাজ করতেন। প্রায় তিন বছর ধরে ডায়াবেটিস সমস্যার কারণে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে বাড়িতেই থাকতেন। কিন্তু পরবর্তীতে গলায় টিউমার হয়ে ক্যান্সার বাসা বাঁধে। চিকিৎসার অভাবে প্রায় এক বছর কষ্ট পেয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। গত  ৪ অক্টোবর তিনি পরলোক গমন করেছেন। টানাপোড়নের সংসারে তন্ময়ের বাবার অসুস্থ হবার পর থেকে নেমে আসে অন্ধকার।

এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে লক্ষ্মী চৌধুরী দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন। তিনি স্থানীয় মডার্ন ইন্টারন‌্যাশনাল স্কুলের পরিচ্ছনতা কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। স্কুলের সকলে তাকে মাসি হিসেবেই চিনেন।

তার সামান্য রোজগার দিয়ে অনেক কষ্টে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। ছোট্ট একটি জমির উপর বসত-বাড়ি ছাড়া আর কোনো সম্পত্তি নেই তাদের। এ অবস্থাতেই সন্তানদের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

চার সন্তানের মধ্যে তন্ময় সবচেয়ে মেধাবী। মাধ্যমিক (এসএসসি) পরীক্ষায় কাঞ্চনাবাদ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ ও সরকারি কমার্স কলেজ, চট্টগ্রাম থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে (এইচ এস সি) জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে সে।

অনেক কষ্টে পড়াশুনা করে সে এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সুযোগ পেয়েও অর্থের অভাবে ভর্তি হতে পারছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ ইউনিটে পরীক্ষা দিয়ে ২৫৮তম স্থানে রয়েছে তন্ময়।

তন্ময় চৌধুরী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে আমার মা আমাকে পড়িয়েছে। বেশীরভাগ সময়েই নানা জনের কাছ থেকে টাকা চেয়ে এনে আমার পড়ার খরচ যুগিয়েছে। আমার পড়ার খরচ দিতে গিয়ে অনেক সময় ঘরের বাজার খরচ থাকতো না। মা আশেপাশের বাড়ি থেকে খাবার জন্য চালসহ অন্যান্য কিছু চেয়ে আনত।’

তন্ময় আরো বলেন, ‘আমি আমার মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে চাই। দেশের জন্য কিছু করার সুযোগ চাই। সেরা বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরে পরবর্তীতে চার্টার্ড একাউন্টেড হতে চাই। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন অর্থের। সমাজের বিত্তবানরা আমার প্রতি একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেই যা সম্ভব। আমি আমার সব খরচ বহন করার কথা বলছি না। শুধু মাত্র আমার ভর্তির টাকা যদি জোগাড় হত তাতেই আমার কিছুটা উপকার হত। আমি ঢাকায় যে যাব সেই টাকাও  নেই। যদি ভর্তি হতে পারি, পরবর্তীতে টিউশনি করে আমি আমার খরচ চালিয়ে নেব। এই সহযোগিতাটুকু চাচ্ছি আমি।’

তন্ময় তার শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এই পর্যন্ত আসার ক্ষেত্রে আমার মায়ের পরে বড় অবদান আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের। তারা আমাকে বিনা পয়সায় টিউশন দিয়েছে। আজ তারা না থাকলে আমি এখানে আসতে পারতাম না। আর আমি কথা দিচ্ছি জীবনে যদি প্রতিষ্ঠিত হতে পারি। সমাজে আমার মত দরিদ্র মেধাবীদের আমার সাধ্যমত সাহায্য করব। কারণ আমি জানি অভাব আর দারিদ্রতা কী?’

তন্ময়ের মা লক্ষ্মী চৌধুরী বলেন, ‘অনেক কষ্টে আমার সংসার চলে। দুই বেলা খাবার জোগাড় করা যেখানে যুদ্ধ জয়ের মত সেখানে পড়াশোনা এখন বিলাসিতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষের কাছ থেকে টাকা এনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির ফর্ম কিনে দিয়েছিলাম। আর কোথাও ফর্ম কিনে দিতে পারিনি টাকার অভাবে। এখন ছেলে আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে কিন্তু পড়াশুনা চালানোর টাকা আমার নেই। জানি না, ওর স্বপ্ন পূরণ হবে কি না?’

 

ঢাকা/নাসির/জেনিস

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়