ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

অধ্যক্ষ লাঞ্ছিত: ৪ জনের ছাত্রত্ব বাতিল হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৫, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অধ্যক্ষ লাঞ্ছিত: ৪ জনের ছাত্রত্ব বাতিল হচ্ছে

অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত এবং পুকুরের পানিতে ফেলে দেয়ার ঘটনায় রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের চার শিক্ষার্থীকে ছাত্রত্ব বাতিলসহ ১৬ ছাত্রের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ইনস্টিটিউটের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সম্প্রতি এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে চার শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার, পাঁচ শিক্ষার্থীর মূল সনদপত্র আগামী তিন বছর আটকে রাখা এবং সাত শিক্ষার্থীকে টিসি (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) দিয়ে অন্য ইনস্টিটিউটে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

অপরাধী চিহ্নিত হওয়া এ সকল ছাত্রের সবাই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। এরই মধ্যে এসব সিদ্ধান্ত কার্যকরের জন্য কারিগরি শিক্ষাবোর্ড ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে রাজশাহী পলিটেকনিকে রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ও পুলিশ প্রশাসনের সহায়তা চেয়েছে ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ।

মিডটার্মে ফেল এবং ক্লাসে অনুপস্থিত থাকা দুই শিক্ষার্থীকে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ দিতে অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিনের ওপর চাপ দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে গত ২ নভেম্বর কার্যালয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়।

এরই জের ধরে ওই দিন দুপুরে অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করার পর টেনে-হিঁচড়ে ক্যাম্পাসের ভেতরের পুকুরের পানিতে ফেলে দেয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে মামলা করেন অধ্যক্ষ। এতে সাতজনের নাম উল্লেখসহ ৫৭ জনকে আসামি করা হয়। এ ঘটনায় সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়। এরই পরিপ্র্রেক্ষিতে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রলীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সংগঠনটি।

অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলে দেয়ার ঘটনায় ওই সময় ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্য সচিব মুস্তাফিজুর রহমান সম্প্রতি অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এই কমিটির দেয়া প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে দোষী সাব্যস্ত হওয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বর্তমানে এসব সিদ্ধান্ত চূড়ান্তভাবে কার্যকর হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন।

যাদের ছাত্রত্ব বাতিল বা রেজিস্ট্রেশন বাতিলের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে,  তারা হলেন- অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলার হোতা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কম্পিউটার বিভাগের অষ্টমপর্বের শিক্ষার্থী কামাল হোসেন সৌরভ, ইলেকট্রো মেডিকেল বিভাগের সপ্তমপর্বের শিক্ষার্থী রায়হানুল ইসলাম, ইলেকট্রনিক্স বিভাগের পঞ্চমপর্বের শিক্ষার্থী মুরাদ হোসেন এবং মেকানিক্যাল বিভাগের তৃতীয়পর্বের শিক্ষার্থী সাজিব হোসেন।

সরাসরি ঘটানার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা পাঁচ শিক্ষার্থীর মূল সনদপত্র ও অন্যান্য কাগজপত্র আগামী তিন বছরের জন্য আটকে রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এরা হলেন- ২০১৫-২০১৬ সেশনের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের কৌশিক জামান ওরফে বনি, ইলেকট্রো মেডিকেল বিভাগের সালমান রহমান ওরফে টনি, পাওয়ার বিভাগের সাব্বির অহম্মেদ, মেকাট্রনিক্স বিভাগের হাসিবুল হাসান ও কম্পিউটার বিভাগের মারুফ হোসেন।

এছাড়া পরোক্ষভাবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে সাত শিক্ষার্থীকে অন্যত্র বদলির সুপারিশ করা হয়েছে। এরা হলেন- পাওয়ার বিভাগের ষষ্ঠপর্বের (অকৃতকার্য) নাঈম ইসলাম, ইলেকট্রনিক্স সপ্তমপর্বের প্লাবন কুমার কুণ্ড, মেকাট্রনিক্স সপ্তমপর্বের মেহেদী মাহমুদ, মেকানিক্যাল বিভাগের সপ্তমপর্বের মেহেদি হাসান, ইলেকট্রনিক্স বিভাগের পঞ্চমপর্বের ওমর আজিজ, কম্পিউটার বিভাগের তৃতীয়পর্বের মাহবুবুর রহমান ও পাওয়ার বিভাগের তৃতীয়পর্বের মাসুদ রানা মীম।

তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে, এই প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি চলমান রেখে সুষ্ঠুভাবে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালানো অসম্ভব। এ কারণে আগামী পাঁচ বছর এখানে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের সুপারিশ করা হয়। এছাড়া ছাত্রলীগের টর্চারসেল হিসেবে পরিচিত ১১১৯ নম্বর কক্ষটি ভেঙে ছাত্র কমনরুম বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে।

পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সভার এসব সিদ্ধান্ত কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন এসব সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি। তবে তিনি জানান, বর্তমানে এখানকার শিক্ষার পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক পুলিশি পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নির্ধারিত পোশাক বাইরে কাউকে ক্যাম্পাসে প্রবেশের বিষয়ে কঠোরতা অবলম্বন করা হচ্ছে।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ কমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, মামলাটি প্রথমে চন্দ্রিমা থানা পুলিশ তদন্ত করে। পরে সেটি গোয়েন্দা পুলিশ ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাহবুব হাসান জানান, ঘটনার হোতা সৌরভসহ এজাহারভুক্ত পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এজাহারের বাইরে থাকা আরো ১৩ জন গ্রেপ্তার রয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে। অন্য অপরাধীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।


রাজশাহী/তানজিমুল হক/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়