ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ইবি কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনায় ভোগান্তিতে ভর্তিচ্ছুরা

বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৬, ২০ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ইবি কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনায় ভোগান্তিতে ভর্তিচ্ছুরা

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হতে এসে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দেয়া, একেক সময় একেক ওয়েবসাইট ব্যবহার, ভর্তি নির্দেশিকার নিয়ম ভঙ্গ করে ভর্তি করানো, ক্ষুদে বার্তায় দেয়া বিভাগে ভর্তি না করে অন্য বিভাগে ভর্তি হতে বলা, ধর্মীয় কারণে পছন্দের বিভাগে পড়তে বাঁধা দানসহ নানা জটিলতায় পড়তে হচ্ছে ভর্তিচ্ছুদের। আর এসব ভোগান্তির জন্য কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও আন্তরিকতার অভাবকেই দায়ী করছেন ভর্তিচ্ছুরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ভর্তি পরীক্ষার ট্যাকনিক্যাল উপ-কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মণ তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ও ছাত্র-উপদেষ্টা নামক একটি গ্রুপে ভর্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য পোস্ট করেন। কিন্তু এর অনেক বিজ্ঞপ্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া হয়নি। ফলে অনেকে বিজ্ঞপ্তি জানতে না পেরে এবং অনেকেই শেষ সময়ে জেনে সাক্ষাৎকারে উপস্থিত হতে না পারার কথা জানিয়েছেন।

‘বি’ ইউনিটের অন্তর্ভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আল ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। নিয়মানুযায়ী আল ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগে ৮০ আসনের মধ্যে ৪০টিতে মাদ্রাসা থেকে এবং বাকি ৪০টিতে কলেজ থেকে আসা শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানোর কথা।

কিন্তু, কলেজ থেকে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ সিট থাকলেও ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে ৪৫ জনকে আল ফিকহ বিভাগ দেয়া হয়। এতে বঞ্চিত হয় মাদ্রাসা থেকে আসা শিক্ষার্থীরা। বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হলে গতকাল ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে বাকি ৫ শিক্ষার্থীকে আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে ভর্তি হতে বলা হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা আরবি সাহিত্য বিভাগে ভর্তি হতে না চাইলে চাপের মুখে পড়ে কর্তৃপক্ষ। পরে সোমবার মিটিং করে শিক্ষার্থীদের আরবি এবং আল-ফিকহ ছাড়া ইউনিটের অন্য বিভাগে ভর্তির সিদ্ধান্ত দেয় কর্তৃপক্ষ।

এছাড়াও কলেজ থেকে আসা শিক্ষার্থীদের আসন খালি না থাকলেও ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে ৬ জনকে আল ফিকহ বিভাগে ভর্তি হতে নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। তারা ভর্তি হতে বিভাগে গেলে আসন খালি নেই বলে জানানো হয়। এতে ভর্তি হওয়া নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন শিক্ষার্থীরা।

ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি ফোকলোর বিভাগে ভর্তি হয়ে মাইগ্রেশনের আবেদন করলে আল ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগ পাই। আমি কলেজ ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থী হওয়ায় আমাকে আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে ভর্তি হতে বলা হচ্ছে। আরবি সাহিত্য বিভাগে ভর্তি না হলে আমার ভর্তি বাতিল হবে বলে জানিয়েছে।’

এদিকে হিন্দু হওয়ায় পছন্দের বিভাগে ভর্তি হতে বাঁধা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এক শিক্ষার্থী। বিপুল কুমার নামের ওই শিক্ষার্থী প্রথমে ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হয়ে তার পছন্দের বিভাগ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে যাওয়ার জন্য মাইগ্রেশন করে। গত ১১ জানুয়ারি সকল শিক্ষার্থীকে ক্ষুদে বার্তায় মাইগ্রেশনের ফল দিলেও বিপুলকে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হয়নি। পরে ওই শিক্ষার্থী নিজে থেকেই যোগাযোগ করেন, কেন তাকে এসএমএস দেয়া হয়নি জানতে চাইলে কোনো উত্তর দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

ভর্তি পরীক্ষার ট্যাকনিক্যাল উপ-কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মণের সাথে সাক্ষাৎ করলে তিনি বলেন, ‘তুমি হিন্দু হওয়ায় তোমাকে এসএমএস দেয়া হয়নি।’ পরবর্তী সময়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে ২০ জানুয়ারি ওই শিক্ষার্থীকে তার পছন্দের বিভাগে ভর্তির সুযোগ দেয় কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে ‘বি’ ইউনিটের সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যার যেটা দায়িত্ব তা সঠিকভাবে পালন করা দরকার। তাহলে আর এসব সমস্যা হতো না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন উর রশিদ আসকারী সাংবাদিকদের বলেন, ‘কিছু সমস্যা আমার নজরে এসছে। ইউনিট সমন্বয়কারী, ভর্তি পরীক্ষা কমিটি ও ট্যাকনিক্যাল উপ-কমিটির মধ্যে সমন্বয় থাকলে এসব সমস্যা হতো না। তবে তাদের সাথে কথা হয়েছে, ২৫ তারিখের মধ্যে সকল সমস্যার সমাধান হবে।’


ইবি/নাহিদ/মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়