ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা, সমাধান কোন পথে?

জুয়েল মামুন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২১, ২৯ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা, সমাধান কোন পথে?

বুয়েটে আবরার হত্যাকাণ্ড, জাবিতে ভিসি বিরোধী আন্দোলন, রাবিতে ভিসির বিরুদ্ধে শিক্ষকদের লাগাতার আন্দোলন, আন্দোলনের মুখে ববি উপাচার্য ইমামুল হকের পদত্যাগ, বশেমুরপ্রবির সাবেক ভিসি নাসির উদ্দিনের আন্দোলনের মুখে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির ঘটনা সারা দেশে নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কেন বাড়ছে শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা, এর সমাধান কী- এসব নিয়ে এ প্রতিবেদন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আলী ইউনুস হৃদয় রাইজিংবিডিকে বলেন, গত বছর অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসিবিরোধী আন্দোলন চলছিল। এখনো এর রেশ রয়েছে অনেক ক্যাম্পাসে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে যখন এসব আন্দোলন চলে তখন বুঝতে বাকি থাকে না আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষার পরিবেশ কেমন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক ভিসি কিংবা কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে যখন দুর্নীতি, অনিয়মের অভিযোগ উঠে, তখন শঙ্কা জাগে সবার। আন্দোলন কিংবা অস্থিরতা বন্ধে প্রয়োজন ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিবেকের প্রতি দায়বদ্ধতা।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শিকর রাইজিংবিডিকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক শিক্ষার্থীদের প্রতি দায়িতহীন আচরণ এবং দায়িত্ববানদের ‘নৈতিক স্খলন’ এর ফলে শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা দেখা যায়। প্রতিবাদের ভাষা তখন আন্দোলনে রূপ নেয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাতেমা-তুজ-জিনিয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, শিক্ষার্থীরা একটি সুন্দর শিক্ষার পরিবেশের প্রত্যাশা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। কিন্তু সেই প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ হচ্ছে তা সময়ই বলে দেবে। আবাসন, ক্লাসরুম, শিক্ষক সংকট রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দুর্নীতির অভিযোগও বেড়েছে। এসব অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে সংকট থাকবেই।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া সাবাহ্ শ্যামা রাইজিংবিডিকে বলেন, শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছে। কখনো তারা তাদের অধিকার চায় কখনো বা অন্যায়ের বিচার চায়। এসব অস্থিরতার চলে যায় তাদের সোনালী জীবনের অর্ধেক। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো কেন এই অস্থিরতা? এর কারণ খুঁজতে গেলেই যা প্রথমে চোখে পড়ে দলীয়করণ। হরহামেশাই অসুস্থ রাজনীতি ও দলীয়করণের কারণে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এসব নিয়েই চাঞ্চল্যকর অবস্থা বিরাজমান থাকে। অনেক শিক্ষক রাজনীতে জড়িয়ে যান। সমাধান হচ্ছে সুস্থ রাজনৈতিক চর্চা, নৈতিক শিক্ষাদান ও মানবিক মূল্যবোধ। এগুলোর সমন্বয় ঘটলেই আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অস্থিরতা মুক্ত হবে।

প্লেজ হারবার ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষক শরিফুল হক পিয়াস রাইজিংবিডিকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সভ্যতাকে পথ দেখায়। সমাজ ও রাজনীতির নেতৃত্ব তৈরি করে। যতদিন ভালো কাজের ‘রিওয়ার্ড’ ও খারাপ কাজের ‘পানিশমেন্ট’ না হবে ততদিন এভাবেই চলবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা রাইজিংবিডিকে বলেন, বাংলাদেশে যে কালচারটা হচ্ছে যে যারা ক্ষমতায় থাকে তখন সেই দলের ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাসে আধিপত্য করে। অন্যরা করতে পারে না বা তাদেরকে করতে দেয়া হয় না। তাহলে তরুণরা কী করবে? ইয়াং জেনারেশনের তাদের একটা অ‌্যাক্টিভিটিস এর মধ্যে থাকতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে স্লোগানমুখর থাকতো ক্যাম্পাস। কিন্তু এখন সেটা নাই। অনেক সময় ছাত্ররা সঠিক নেতৃত্ব দিতে পারছে না। অথবা নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তারা একটা সংগঠন চাচ্ছে। সে কারণে রাকসু, জাকসু, চাকসু চালু করার দাবি ওঠেছে।

সমাধানের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী গোটা জাতিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার একটা ইন্সট্রাকশন দরকার। শিক্ষকদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। রিক্রুটমেন্ট পলিসি চেঞ্জ করতে হবে। প্রকৃত শিক্ষকদের মূল্যায়ন করতে হবে। তবেই পরিবর্তন সম্ভব।


রাবি/জুয়েল/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়