দেড় দশকেও হলের মুখ দেখেননি জবি শিক্ষার্থীরা
জবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
প্রতিষ্ঠার দেড় দশক পার হলেও এখনো হলের মুখ দেখেননি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। আবাসন সুবিধা না থাকায় কষ্টকর ও সময়সাপেক্ষ হলেও যানজট পেরিয়ে প্রতিদিন তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়।
আর সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্থানীয় কিছু অসাধু বাড়িওয়ালা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষার্থীরা নিরূপায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেশি অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করে ১৮৫৮ সালে এবং ২০০৫ সালে জাতীয় সংসদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫ পাস করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নেয়।
রাজধানীর পুরান ঢাকায় অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থীর অর্ধেকের বেশিই থাকেন ক্যাম্পাসের আশপাশের বিভিন্ন বাসাবাড়িতে মেস করে। সেখানে সুবিধা দেওয়ার নাম করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তুলনামূলক বেশি ভাড়া ও অ্যাডভান্স আদায় করা হয়।
পুরান ঢাকায় অধিকাংশ এলাকার ভবনের রং-পলেস্তার উঠে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়ে আছে একটির গায়ে অন্যটি। নিচতলায় বিভিন্ন সরঞ্জামের কারখানা, ঘিঞ্জি গলি, অন্ধকার সিঁড়ি এখানকার চেনা চিত্র। এমন পরিবেশের সঙ্গে কেবল লেখাপড়ার জন্যই প্রতিনিয়ত লড়াই করে থাকতে হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের।
অভিযোগ রয়েছে, কিছু অসাধু বাড়িওয়ালা ও সিনিয়র শিক্ষার্থীর মেস ব্যবসার কারণে তাদের জীবন অতিষ্ঠ প্রায়৷ অধিকাংশ বাড়ির প্রকৃত ভাড়া জুনিয়রদের জানানো হয় না। সেক্ষেত্রে সিনিয়ররা জুনিয়রদের কাছ থেকে বাড়ি ভাড়া থেকে কমপক্ষে ৫-৬ হাজার টাকা বেশি আদায় করেন। প্রকৃত ভাড়া জানতে চাইলে তারা বিভিন্ন হুমকিও দিয়ে থাকেন। আর এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোন তদারকিও নেই। শুধু তাই নয়, অনেক সময় পূর্ব কোন নোটিশ ছাড়া শিক্ষার্থীদের বাসা ছাড়তে বাধ্য করা হয় বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে নাম না প্রকাশ শর্তে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১৪তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বাড়িভাড়া বাবদ মাসে কতো টাকা দিতে হবে সে সম্পর্কে আমাদের প্রথমে কিছু জানানো হয়নি, একটা অ্যামাউন্ট দিতে বলা হয়েছে। ঘটনাক্রমে বাড়ির দারোয়ানের কাছ থেকে জানতে পেরেছি বাড়ির প্রকৃত ভাড়ার চেয়ে আমাদের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা বেশি আদায় করেন সিনিয়ররা। কথা বলতে গেলে নানা রকম হুমকি দেওয়া হয়।’
মেস ব্যবসা সম্পর্কে এক শিক্ষার্থী তার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে জানান, চিকিৎসার জন্য অসুস্থ মাকে মেসে আনতে চাওয়ায় সিনিয়ররা প্রতিদিন অতিরিক্ত ২০০ টাকা দিতে বলেন, টাকা না দিলে মাকে আনা যাবে না শর্তও জুড়ে দেন।
রুনা নামে জবির আরেক শিক্ষার্থী জানান, বিভিন্ন বাড়িওলা বিনা নোটিশে গ্যাস বিল/ বিদ্যুৎ বিল/পানি বিল/বাড়ি ভাড়া বাড়িয়ে দেন। প্রতিবাদ করতে গেলে বলে, না পোষালে বাসা ছেড়ে দিতে হবে। বাধ্য হয়েই সেখানে থাকতে হয়। আর যারা বাসা ভাড়া নেন তারা থাকেন ফ্রি-তে! এমনকি কিছুকিছু সিনিয়র ভয় দেখিয়ে কাপড় কাঁচানো থেকে শুরু করে অ্যাস্যাইনমেন্টও করিয়ে নেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জবির ১০ম ব্যাচের এক সিনিয়র শিক্ষার্থী জানান, ‘আমি জুনিয়র কোন শিক্ষার্থীর ওপর অত্যাচার করি না, অনেক টাকা জামানত দিয়ে বাসা নিয়েছি, তাই একটু বেশি ভাড়া নেই। তবে আমার মেসে সবাই যে যার মতো থাকে, কারও ওপর কোন অমানবিক আচরণ করা হয় না।’
অতিরিক্ত ভাড়ার ব্যাপারে নারিন্দার এক বাড়িওয়ালা জানান, ‘সবাই ৫/৬ মাসের অ্যাডভান্স লয়, তাই আমিও লই। আর এদিকে সব পোলাপান থাকে, হেরা বাসা-বাড়ি ময়লা করে বেশি, পানি খরচ করে বেশি, তাই ভাড়াটাও বেশি।’
এবিষয়ে জবি প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল জানান, যারা এইসব নিচুমানের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মালিকরা খারাপ আচরণ করলে তাদের বিষয়টিও দেখা হবে।
তমাল/বুলাকী
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন