ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বগুড়ার ২০ হাজারের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী ভালো নেই

বগুড়া সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ২৩ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
বগুড়ার ২০ হাজারের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী ভালো নেই

করোনা পরিস্থিতিতে বগুড়ার কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক কর্মচারীরা ভালো নেই। স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেতন ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন বগুড়ার এসব শিক্ষক কর্মচারী।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জেলার এক হাজা্র কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও বিপুল সংখ্যক কোচি সেন্টার মিলিয়ে ২০ সহস্রাধিক শিক্ষক কর্মচারী রয়েছে। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এরা একদিকে বেতন ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, অন্যদিকে না পারছেন কারো কাছে হাত পাততে, না পারছেন অন্য কোন কাজ করতে। ফলে দুর্বিষহ জীবন কাটছে তাদের।

করোনাভাইরাসের কারণে দেশে চলতি ২০২০সালের ১৮ মার্চ থেকে সরকারি ঘোষণার মধ্যদিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া এ সকল স্কুলের শিক্ষক কর্মচারী এখন বাড়িতে বেকার জীবন যাপন করছেন। অথচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের বেতন-ভাতা যথা নিয়মে পেয়ে যাচ্ছেন।

কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষকরা কোচিং কিংবা ব্যক্তিগত প্রাইভেট পড়াতেও পারছেন না।এই সময়ে সবচেয়ে বেশী সমস্যার সম্মুখীন হয়ে পড়েছেন, যারা শিক্ষাজীবন শেষ করে প্রাইভেট টিচিং দিচ্ছেন এমন যুবক-যুবতীরা। আর্থিক সংকটে পড়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে তাদের।

বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক গাবতলী আইডিয়াল কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ রায়হানুল হক রানা জানান, কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো বন্ধ থাকার কারণে ওই উপজেলার ৫৫টি স্কুলের ৬শতাধিক শিক্ষক কর্মচারী মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তারা তাকিয়ে আছে কবে করোনা থেকে দেশ মুক্ত হবে, স্কুল কলেজ খুলবে, দেশের মানুষ স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারবে।

তিনি বলেন, ‘তাদের সামান্য পুঁজি যা ছিল তা এক মাসেই শেষ হয়ে গেছে।বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তারা চরম সমস্যায় আছে। এ অবস্থা কতোদিন থাকবে মহান আল্লাহই ভালো জানেন। শিক্ষকদেরকে সমাজের মানুষ গড়ার কারিগর বলা হয়। অথচ এই শিক্ষক সমাজ আজ চরমভাবে অসহায়। পারছেন না দিন মজুরের কাজ করতে, রিকশা ভ্যান চালাতে, পারছেন না কারো কাছে সাহায্যের জন্য হাত বাড়াতে।'

গাবতলী উপজেলা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম দুলাল বলেন, ‘শিক্ষক সমাজ কারো কাছে হাত পাততে পারেনা, সে জন্য সরকারের কাছে তারা দাবি করেছেন প্রনোদনার আর্থিক সহযোগিতা বা সুদবিহীন ঋণের। যা দিয়ে কিছু একটা করে তারা এই বিপদসঙ্কুল সময় পার করতে পারবেন।'

সরকারি আজিজুল হক কলেজের অনার্সে পড়াশোনার পাশাপাশি বগুড়া শহরের একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলে শিক্ষকতা করেন মাহবুবুর  রহমান। তিনি বলেন, ‘এই স্কুলের বেতন আর বাসায় গিয়ে দুটি ছেলেকে প্রাইভেট পড়িয়ে মেস খরচ ও পড়াশোনার খরচ চালিয়ে আসছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে গত ২ মাস ধরে খুবই বিপদে আছি।'

গাবতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ রওনক জাহান বলেন, ‘উপজেলা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে গত ১২মে একটি আবেদন আমার কাছে দেয়া হয়েছে। তাদের জন্য বিশেষ কোন বরাদ্দ নেই।'

তিনি জানান, প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে তাদের বরাদ্দ থেকে স্ব স্ব ইউনিয়নে অর্ন্তভুক্ত কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক কর্মচারীদের সাধ্যমত সহযোগীতা করার জন্য বলে দেবেন।

নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, ঋণ পেতে হলে ব্যাংকের নিয়ম কানুন মেনে নিতে হবে। সুদবিহীন ঋণ বিষয়ে সরকারি কোন নির্দেশনা নেই।

গাবতলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাহিদা আক্তার বলেন, ‘কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক কর্মচারীদের বিষয়ে আমাদের কাছে কোন নির্দেশ নেই, আমাদেরকে এ ধরনের কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি।'

বগুড়া অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মাসুম আলী বেগ জানান, কিন্ডার গার্টেন স্কুল ও কোচিং সেন্টারের শিক্ষকদের বিষয়ে সরকারের কোন নির্দেশনা নেই। সরকারি কোন নির্দেশনা থাকলে তাদেরকে সাপোর্ট দেওয়া যেতে। তবে, তাদের বিষয়ে ভাবা প্রয়োজন। পরে হয়তো এসব শিক্ষকদের কোন  সুবিধা দেওয়ার চিন্তা করতে পারে সরকার।

 

আলমগীর/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়