হাটহাজারী মাদ্রাসা বন্ধ: যা বললেন শিক্ষাবিদ-কওমি আলেমরা
আবু বকর ইয়ামিন || রাইজিংবিডি.কম
হাটহাজারী দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা (ফাইল ছবি)
হাটহাজারী দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা করায় শিক্ষাবিদ-কওমি আলেমদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখে গেছে। একপক্ষের অভিযোগ, নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ছাত্ররা আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। আরেক পক্ষের মতে, মাদ্রাসায় আল্লামা শফীর ছেলে মাওলানা আনাস মাদানী একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। এর জের ধরেই বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মাদ্রাসার আন্দোলনকারী ছাত্র ও সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ—দীর্ঘদিন ধরে হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্রদের মধ্যে আনাস মাদানীর আধিপত্য বিস্তারের ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ দানা বেঁধে ওঠে। আনাস মাদানী বাবার পাশে থেকে নিজস্ব একটি বলয় তৈরি করে পুরো মাদ্রাসা নিজের আয়ত্তে নেওয়ার চেষ্টা করেন বলেও আন্দোলনরতরা অভিযোগ করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় বাবুনগরীর ঘনিষ্ঠ ছাত্র-শিক্ষকদের বিতাড়িত করা হয়। বেশ কয়েকজনকে চাকরিচ্যুতও করা হয়। এতে মাদ্রাসায় সৃষ্টি হয় বিশৃঙ্খলা।
সর্বশেষ গত বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শুরু হওয়া এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় মাদ্রাসা থেকে আল্লামা শফীর ছেলে, মাদ্রাসার শিক্ষা সচিব মাওলানা আনাস মাদানীকে বহিষ্কার করা হয়। শেষ পর্যন্ত ছাত্র আন্দোলন বন্ধ না হওয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা করে সরকার।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ বলেন, ‘আল্লামা আহমদ শফী সবার শ্রদ্ধার পাত্র। তাকে কেন্দ্র করে এমন ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। কওমি মাদ্রাসার বিরোধ আছে। ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলনে কওমি আলেমরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। হাটহাজারীতে আল্লামা শফীর পরে কে প্রধান হবেন, তা নিয়ে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে কওমি আলেমদের স্বাতন্ত্র্য বিলীন হয়ে যেতে পারে। আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে এখন যা চলছে, তাতে স্বাতন্ত্র্য ফিরে আসতে পারবে। এরপরও কেউ যদি নোংরা রাজনীতি করে তা কারও জন্য ভালো হবে না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘এই ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। প্রত্যেক কাজের নির্দিষ্ট বয়সসীমা আছে। আল্লামা শফীর এখন যে বয়স, এই সময়ে অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই আগেই তার এই জায়গা থেকে অবসরে যাওয়া উচিত ছিল।’
বিশিষ্ট আলেম আল্লামা মামুনুল হক বলেন, ‘কোনো জায়গা দীর্ঘদিন কারও আঁকড়ে ধরে রাখা কখনো উচিত নয়। কওমি আলেমরা কোনো ব্যক্তির পূজা করেন না। যিনি হক ও ন্যায়ের পথে থাকবেন, তাকে সবাই নেতা হিসেবে মেনে নেবেন। কওমি মাদ্রাসার সন্তানরা যেকোনো অন্যায় মোকাবিলায় প্রস্তুত।’
আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী আলেম উসামা মোহাম্মদ বলেন, ‘পুরো আন্দোলন চলার সময় আমাদের ওপর প্রশাসনিক চাপের চেয়ে সুশীল আলেমদের বিভিন্ন স্তরের কর্মী-সমর্থকেরা মানসিক নির্যাতন করে গেছেন। আমাদের সঙ্গে কোনো শীর্ষ আলেমের যোগাযোগ ছিল না। এমনকী আজ পর্যন্তও নেই। বারবার বলে আসছি, যা করছি নিজের বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে করেছি। ’
বিশিষ্ট ইসলামিক লেখক, জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়ার শিক্ষক আশরাফ মাহাদী বলেন, ‘এই আন্দোলন এক ধরনের সফলতা। তবে, এটি যেন আমাদের আত্মতুষ্টিতে না ভোগায়। এটি বড় বিজয় হলেও গন্তব্য এখনো দূরে।’ মানসিকভাবে একটু লং-রানের প্রস্তুতি দরকার বলেও তিনি মনে করেন।
আরো পড়ুন